— ভারতের সাদা বলের ক্রিকেটে কোচ হিসাবে গৌতম গম্ভীরের রেকর্ড যথেষ্টই নজরকাড়া। দুই ফরম্যাটে একটি করে আইসিসি ও এসিসি ট্রফি জিতেছে ভারত। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ছবিটা ততটা উজ্জ্বল নয়। বিশেষ করে সেনা দেশগুলির বিরুদ্ধে ১০টি টেস্টে পরাজয়ের পর গম্ভীরের লাল বলের কোচ হিসাবে ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে বিরুদ্ধে দু’টি টেস্টের সিরিজে ভারতের ভরাডুবির পর তা আরও বড় হয়ে উঠেছে। কারণ, সিরিজের ফলাফল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার লক্ষ্য থেকে বেশ কিছুটা দূরে ঠেলে দিয়েছে ভারতকে।
গম্ভীরের এখনও দু’বছর চুক্তি বাকি থাকলেও বিকল্প খোঁজার চেষ্টা ইতিমধ্যেই চালাতে শুরু করেছে ভারতীয় বোর্ড। জানা গিয়েছে, বোর্ডের তরফে কথা হয়েছে প্রাক্তন ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণের সঙ্গেও। জানতে চাওয়া হয়, তিনি লাল বলের দলের কোচ হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী কি না। যদিও তিনি শুভমন গিলদের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। তিনি বেঙ্গালুরুতে সেন্টার অব এক্সেলেন্সের ‘হেড অব ক্রিকেট’ পদে থেকেই সন্তুষ্ট।
আপাতত টি-২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। সাদা বলের ক্রিকেটে গম্ভীরের সাফল্য যতটা ভাল, লাল বলের ক্রিকেটে ততটাই খারাপ। ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ ড্র করে আসার পর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার ভাবতে বাধ্য করেছে বোর্ডকর্তাদের। মুখে তাঁরা গম্ভীরের পাশে থাকলেও, ভেতরে ভেতরে বিকল্প খোঁজার চেষ্টা চালিয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থার খবর। ভারতীয় দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গম্ভীরই সঠিক লোক কি না, তা নিয়ে এখনও বোর্ডের অন্দরে দ্বিমত রয়েছে।
বোর্ডের এক কর্তা সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘বোর্ডের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা এখনও গম্ভীরের উপরেই ভরসা রাখছে। যদি ভারত টি-২০ বিশ্বকাপ জেতে বা ফাইনালে ওঠে, তা হলে চুক্তির পুরো মেয়াদ গম্ভীরের থাকা নিশ্চিত। তবে টেস্টে কোচ থাকবে কি না সেটা বলার সময় এখনও আসেনি।’ সূত্র আরও জানিয়েছেন, ‘গম্ভীরের সুবিধা হলো, এখনই বোর্ডের হাতে তেমন বিকল্প নেই। ভারতের টেস্ট দলকে কোচিং করাতে আগ্রহী নয় লক্ষ্মণ।’
বিসিসিআই’র অন্দরমহলে এখনও নিশ্চিত সিদ্ধান্ত হয়নি যে, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২৭ চক্রে বাকি থাকা ন’টি টেস্টে গম্ভীরই কি লাল বলের দলের দায়িত্বে থাকবেন। ইংল্যান্ডে পাঁচ টেস্টের সিরিজে ২-২ ড্র করার পর ভারতের সামনে রয়েছে আরও কয়েকটি বিদেশ সফর। ২০২৬ সালের অগস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দু’টি টেস্ট এবং অক্টোবরে নিউজিল্যান্ড সফরের পর ২০২৭ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলবে ভারত।
সংবাদ সংস্থার খবর, সাজঘরের পরিস্থিতিও যে পুরোপুরি স্বাভাবিক এমন বলা যাবে না। গম্ভীরের জমানায় কোনও ক্রিকেটারই নিরাপদে দিন কাটাতে পারছেন না। ভালো খেলতে না পারলেই দল থেকে ছাঁটাই হওয়ার ভয় রয়েছে। ফলে, খেলোয়াড়ই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সুরক্ষিত বোধ করছেন না। টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে দলের সহ অধিনায়ক শুভমনের বাদ পড়া নিয়ে গম্ভীরের ভূমিকা স্পষ্ট বলে মনে করছেন অনেকে। এর ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয়েছে যে, যদি ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ মুখ হিসাবেই পরিচিত একজন ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া যায়, তা হলে বাদ পড়ার তালিকায় যে কারও নাম থাকতে পারে।
রাহুল দ্রাবিড়ের সময়ে পরিস্থিতি আলাদা ছিল। ব্যর্থ হলেও ক্রিকেটারদের সময় দেওয়া হতো নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। তবে গম্ভীর জমানায় সে সব সুযোগ কেউই বেশি পাচ্ছেন না। প্রতিটি দল নির্বাচনই জন্ম দিচ্ছে একাধিক প্রশ্নের। নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিসিসিআই সাধারণত সময় নেয়। টি-২০ বিশ্বকাপের পর পরই শুরু হবে দু’মাসের আইপিএল। এই সময়ের মধ্যেই বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা বিশ্বমঞ্চে ভারতের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে একাধিক কোচ না কি সব ফরম্যাটে এক জন কোচ—এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলেই খবর।
সব মিলিয়ে, বিসিসিআই’র সমর্থন থাকলেও আগামী দু’’মাস ‘গুরু গম্ভীর’-এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
Goutam Gambhir
লাল বলে গুরু গম্ভীরকে নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন বোর্ডের
×
Comments :0