Left is the Alternative

এসআইআর— প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচারের ফানুস

উত্তর সম্পাদকীয়​

 সুজন চক্রবর্তী
এবার কি বলবে বিজেপি?  মিথ্যার ফানুস ফেটে গেল যে!  আগেরবার নাগরিকত্বের ভয় দেখিয়ে ভোট নিল বিজেপি। ২০১৯-এর পর ছ’বছর পেরিয়ে গেল। নাগরিকত্বের কি হলো? এবার এসআইআর’র ভয় দেখিয়ে আবারও ভোটের ঘৃণ্য কৌশল! মিথ্যাচার আর প্রতারণা ধরা পড়ে গেল। তড়িঘড়ি উড়ে আসলেন প্রধানমন্ত্রী। কথা বললেন অনেক। চিঁড়ে ভিজল কি? উলটে ভোটার তালিকায় যোগ্যদের নাম বাতিলের ঘৃণ্য প্রচেষ্টা বিজেপি’র। এবার কি তবে মোদী-শা-যোগী বাহিনীর ভয় দেখানো এবং ঘৃণার রাজনীতির জবরদস্তি চালু হবে বাংলায়? 
উদ্বাস্তুদের নিয়ে বিজেপি’র দরদ যে আসলে লোক দেখানো সেটা ধরা পড়ে গেল। কী বলেছিল বিজেপি নেতারা? এক কোটি বিশ লক্ষ রোহিঙ্গা তাড়ানো হবে। তার জন্যই নাকি এসআইআর। বাংলাদেশ থেকে নাকি লাখে লাখে মুসলমান অনুপ্রবেশকারী  ঢুকে পড়েছে এ দেশে। বিহারেও একই ভাষ্য চলছিল। "ঘুষপেটিয়াকো উখাড় দেগা" র জন্যই নাকি এসআইআর। কিন্তু বিহারের ভোটার তালিকায় বাতিল ঘুষপেটিয়া তো মিলল না। এরাজ্যর বাস্তবটা কী? দেখা যাচ্ছে বিজেপি’র প্রচার সম্পূর্ণ মিথ্যে।
মিথ্যাচারের ফানুস ফেটে গেছে 
তথ্য কী বলছে? ইতিমধ্যেই এসআইআর’র ফলে খসড়া ভোটার তালিকা, ২০২৬  প্রকাশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এতে শুধু বাদ গেছে মৃত, ডুপ্লিকেট এন্ট্রি, শিফটেড এবং আনট্রেসড-দের নাম। এই তালিকাতেও বেশ কিছু ভুল ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। এরপর শুনানিতে ডাকা হবে তাদের যাদের ম্যাপিং মিলছে না অর্থাৎ অমিল বা সন্দেহজনক ভোটার। দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে ম্যাপিং না মেলার গড় ৩.৯৩% অর্থাৎ প্রায় ৪%। এদের হিয়ারিং-এ যেতে হবে, নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু উত্তর চব্বিশ পরগনা ও নদীয়া জেলার মতুয়া অধ্যুষিত বিভিন্ন বিধানসভায় এই অমিল সংখ্যার গড় ৯.৪৩%। গাইঘাটায় এই পরিমাণ ১৪.৫১%। বাগদায় ১২.৫৯%। বনগাঁয় প্রায় ১১%। রানাঘাটে ১১%-এর আশপাশে। কল্যাণীতে প্রায় ১২%। অর্থাৎ বিরাট সংখ্যার উদ্বাস্তু এবং মতুয়া মানুষকে সন্দেহজনক বলে দাগিয়ে দেবার প্রচেষ্টা। অগ্নিপরীক্ষায় বসতে হবে তাদের। ভোটার তালিকা থেকে এদের নাম বাদ দেবার মতো করেই ব্যবস্থাপনা। 
অন্যদিকে কি খবর মুসলমান অধ্যুষিত সীমান্তবর্তী মালদহ, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন বিধানসভার? রাজ্যের সবচেয়ে বেশি ভোটারের ম্যাপিং মিলেছে ডোমকল বিধানসভায়। যেখানে ৮০%-এর বেশি মুসলমান মানুষের বাস। গত লোকসভা ভোটে যে সিটে লিড দিয়েছিল সিপিআই(এম), সেই রানিনগরে সন্দেহপূর্ণ ভোটার মাত্র ০.৯%। সুজাপুর, সামশেরগঞ্জ, হরিহরপাড়া এই সমস্ত বিধানসভায় সন্দেহপূর্ণ ভোটারের সংখ্যা ১%-এর আশপাশে! বাংলার সার্বিক গড়ের থেকেও অনেক কম। এগুলি সবকটিই কিন্তু মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভা।
এককথায় বিজেপি নেতারা যা বলছিলেন ঠিক তার উল্টো। সর্বৈব মিথ্যা এবং অপপ্রচার। মুসলিম জনসংখ্যা যেখানে বেশি, সেখানে অমিল অথবা সন্দেহজনক ভোটার কম। অথচ সীমান্ত লাগোয়া নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা— যেখানে উদ্বাস্তু হিন্দু এবং মতুয়া মানুষের সংখ্যা বেশি সেখানেই অমিল অথবা সন্দেহজনক ভোটার সংখ্যা বেশি। বিজেপি’র মিথ্যাচারের ফানুস তো ফেটে গেল।
বিজেপি-তৃণমূল— রাজনীতির খেলা 
এটা স্পষ্ট যে এসআইআর প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়তে চলেছেন Undocumented Citizens. কাগজের শক্তি কম এমন মানুষ, ভোটার এবং নাগরিকরা— যারা মুলত গরিব মানুষ। সহায় সম্বলহীন। পিছিয়ে থাকা। এদের একটা বড় অংশই মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। এরা দেশভাগের শিকার। যারা সাতের দশকে এপারে আসেননি, বলা ভালো আসতে পারেননি। পরে এসেছেন মুখ্যত বাধ্য হয়েই। এদের অথবা কারুর কাছেই  তখন অথবা কখনোই নাগরিকত্বের প্রশ্নটা গুরুত্ব পায়নি। কারণ এসব নিয়ে কোনও প্রশ্ন অথবা সংশয় তখন ছিলই না। সংবিধান যখন বলছে - "We the people of India", তখন বিজেপি কি তা নিয়েও প্রশ্ন করতে চায়? অথচ সবাই তো দেশের মানুষ। দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ীভাবে বসবাসকারী। সার্বজনীনভাবেই ভোটাধিকার সম্পন্ন। গোলমালটা পাকালো ২০০৩-এর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে। পাকালো বিজেপি আর তৃণমূল। এনডিএ সরকারের আমলে। আইনটা বদল করে কাগজহীন নাগরিকদের বেআইনি বলে দাগিয়ে দিল। সন্দেহজনক, ঘুষপেটিয়া, বিদেশি, উইপোকা, রোহিঙ্গা … যা খুশি বলে অভিযুক্ত করল। স্থায়ীভাবে বসবাসকারী এই গরিব মানুষের পরিচিতি এবং অস্তিত্ব নিয়েই নানাভাবে ভয় দেখাবার ব্যবস্থা করল। অথচ, যার যা মতই থাকুক না কেন, এরা এদেশেরই মানুষ। এদেশেরই ভোটার। দেশের আইন অনুযায়ী ২০১৪-এর ডিসেম্বরের আগে থেকে উদ্বাস্তু, হিন্দু, মতুয়া  যারা এদেশে আছেন তারা নাগরিকত্বের অধিকারী। Deemed Citizen. ২০২৪-এর ডিসেম্বরের আগে থেকে যারা আছেন, তারা আইনের বিবেচনায় এদেশে থেকে যাবার অধিকারী। বাংলাভাষী উদ্বাস্তু এই মানুষদের নাগরিকত্বের দাবিতে সিপিআইএম সংসদের ভিতরে এবং বাইরে বরাবরই যেমন  সোচ্চার থেকেছে, তেমনই বিজেপি-তৃণমূল এদের নাগরিকত্ব এবং পরিচিতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। এটা এখন দিবালোকের মতই স্পষ্ট।
আসাম— নাগরিকত্বে বাদ পড়েছে কারা
বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা এবং অপপ্রচার চালিয়ে গরিব পিছিয়ে থাকা, বিশেষত মতুয়া অংশের মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে তৃণমূল এবং বিজেপি। ফলস্বরূপ মতুয়া অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটা নির্বাচনে তৃণমূল এবং পরবর্তীতে তাদের অংশ নিয়েই তৈরি হওয়া বিজেপি বাড়তি ভোট আদায় করে জয় পেয়েছে। প্রতিশ্রুতির বন্যায় মানুষকে ভাসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাদের উপর ভরসা করে কি পেল মতুয়া সমাজের মানুষ? নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট পেল কি? বরং যেটুকু ছিল সেই ভোটাধিকারও এখন প্রশ্নের মুখে। এখন বিজেপি বলছে সিএএ'র মাধ্যমে এদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সিএএ আইন তো ২০১৯ সালের। ছ'বছর হয়ে গেল। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কতজন উদ্বাস্তু হিন্দু মতুয়াকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে? আসামে নাগরিকত্বের তালিকায় বাদ পড়া ১৯ লক্ষের মধ্যে ৭০ শতাংশই বাংলাভাষী এবং হিন্দু গরিব মানুষ। এ রাজ্যে বিজেপি’র মন্ত্রী, এমপিরা বলেই দিয়েছেন, হয়ত কয়েক বছর ভোট দিতে পারবেন না মতুয়ারা। তারা পরে নাগরিকত্বের বিষয়টি দেখবেন। বিজেপি’র বিধায়ক সাংসদদের কথায় যারা সিএএ'র মাধ্যমে আবেদন করেছেন তাদের ভোটাধিকার তো প্রশ্নের মুখে বটেই, তারা নিজেরাই নিজেদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দিলেন। মানুষকে ক্রমশ জটিলতার মধ্যে ফেলছে বিজেপি তৃণমূলের লোকদেখানো দড়ি টানাটানি।
মতুয়া সমাজ
মতুয়া কারা? কেনই বা তাদের নিয়ে এত আলোচনা? প্রাতিষ্ঠানিক হিন্দু ধর্মের ভেতরে ব্রাহ্মণ্যবাদের বাড়াবাড়ি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন চৈতন্যদেব। বৈষ্ণব ধর্মের প্রচলন করে প্রচার করেছিলেন মানব ধর্ম। সেই ধারা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে অখণ্ড বাংলা বিহার ওডিশায়। বর্তমানে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি নিবাসী হরিচাঁদ ঠাকুরের মতবাদের অনুসারীরাই মতুয়া নামে পরিচিত। মতুয়া অর্থে - মেতে থাকা বা মাতোয়ারা হওয়া। তারা হিন্দু ধর্মের বৈদিক রীতিনীতি, মনুস্মৃতিকে বিধান হিসেবে তুলে ধরা বা ব্রাহ্মণ্যবাদের শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করার কথা বলেন। এখানে কোনো জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদ নেই। ধনী-দরিদ্র বিভাজন নেই। এখানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার স্বীকৃত। শিক্ষার বিস্তার এবং সমাজ সংস্কারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর। মতুয়া সমাজের মানুষেরা বাংলাদেশ থেকে দলে দলে উদ্বাস্তু হয়ে এপারে এসে মূলত উত্তর চব্বিশ পরগণা, নদীয়া সহ এরাজ্যের কিছু জেলায় স্থানীয়ভাবে বসবাস করছেন। বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন এরা পাকাপাকিভাবে বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন, অধিকার পেয়েছেন। কোনোদিন তারা নাগরিক কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়া সমাজের আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। ঠিক তেমনই দলিত, পিছিয়ে পড়া, নমঃশুদ্র সম্প্রদায়ের একটা অংশের রাজনৈতিক নেতা ছিলেন যোগেন মণ্ডল। সংবিধান প্রণেতা ডক্টর বিআর আম্বেদকরের বিশিষ্ট সহযোগী যোগেন মণ্ডল। এরা সবাই নানাভাবে দলিত নমঃশুদ্র মানুষের সামাজিক উন্নতি ও শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বামফ্রন্ট সরকার তার সাধ্যমত এই অংশের মানুষদের বাংলায় থাকার অধিকার, তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহায়তার চেষ্টা করেছে। এদের ভোটাধিকার কিংবা নাগরিকত্ব নিয়ে তখন কাউকে কখনো শঙ্কিত হতে হয়নি। বিজেপি তৃণমূলের রাজনীতির জাঁতাকলে এদের দাবার বোড়ে করা হচ্ছে। সেই প্রক্রিয়াতেই এসআইআর নিয়ে জটিলতার বহুবিধ প্রচেষ্টা। ঠেকাতে হবে আমাদেরই।
সঙ্কটের আবর্তে পিছিয়ে থাকা গরিব মানুষ 
দাপট এবং মিথ্যার হুমকি চালিয়েই যাচ্ছে বিজেপি। এক কোটি কুড়ি লক্ষ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে যাদের হুমকি দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীরা, তাদের তালিকা কোথায়?
নচেৎ রোহিঙ্গা বলে দাগিয়ে দেওয়া বাংলার সাধারণ মুসলিম সমাজের কাছে ক্ষমা চাইবে কি বিজেপি? নাকি আসলে বিজেপি অনুপ্রবেশকারী মনে করে এ রাজ্যের হিন্দু উদ্বাস্তুদের? ওদের অনুসৃত মনুবাদী চিন্তায় ঘোষিত শত্রু যেমন মুসলমানরা, তেমনই ওদের কাছে অঘোষিত শত্রু কিন্তু দলিত, শূদ্র অংশের মানুষ। এই উদ্বাস্তু এবং মতুয়া মানুষদের অনুপ্রবেশকারী দাগিয়ে লোকসভায় কাগজ ছুঁড়ে মেরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমুল আর বিজেপি মিলেই ভোট রাজনীতির পাঁকে বিপন্ন এবং ধ্বংস করেছে দলিত পিছিয়ে পড়া এই অংশকে। ঠাকুরবাড়ি এবং  মতুয়া সমাজকে দু’-তিন ভাগে বিভক্ত করে কেউ কেউ বিজেপি-তৃণমূলের  এমএলএ এমপি হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু একবিন্দু উন্নতি হয়নি এই গরিব সাধারণ মানুষদের। বরং আজ তাদের সঙ্কটের আবর্তে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
বিজেপি-কে ভরসা করে ডাবল ঠকছেন মানুষ 
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। দেশ জুড়ে সংখ্যালঘু এবং দলিত প্রান্তিক মানুষের উপর চলছে নানা রকমের অত্যাচার। বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষ চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওডিশাতেও এই আক্রমণ ক্রমবর্ধমান। পরিযায়ী শ্রমিক জুয়েল রানাদের যেমন খুন হতে হয়, তেমনই মালকানগিরিতে দেড় শতাধিক উদ্বাস্তু বাংলাভাষী মানুষের বাড়িতে লুট, আক্রমণ, ভাঙচুর, আগুনে পোড়ানোর মতো নৃশংস ঘটনা ঘটে চলেছে। সেই মোদীজি অথবা বিজেপি-কে এরাজ্যের গরিব মানুষ ভরসা করবে কিভাবে? মতুয়া সমাজের মানুষের কাছে বার্তা দেবার নাম করে মোদীজি চটজলদি এরাজ্যে আসলেন বটে, কিন্তু ইতিবাচক একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস পেলেন না। বরং ঠাকুর নগরের ঠাকুর বাড়িতে বিজেপি নেতাদের কাছে বেধড়ক মার খেলেন মতুয়া সমাজের ভক্ত সাধারণ মানুষেরা। চিকিৎসার জন্য ভর্তি হতে হলো সরকারি হাসপাতালে। এত নৃশংসতা ভাবা যায় না। কোনোদিন কখনো মানুষ এসব স্বপ্নেও ভাবেননি। তৃণমূলকে ভরসা করে যারা একবার ঠকেছেন, বিজেপি-কে ভরসা করে তারা ডাবল ঠকলেন। প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচারের ফানুস ফেটে গেছে যে।
ভরসা বামপন্থীরাই
তৃণমূলের বদান্যতায় এরাজ্যের রাজনীতিতে বিজেপি’র প্রবেশ। বিজেপি না জানে বাংলার সংস্কৃতি, না জানে বাংলার জনবিন্যাস, সংগ্রাম, ইতিহাস কোনও কিছুই। বিপন্ন প্রান্তিক মানুষ কিন্তু জানে— তাদের জন্য বামপন্থীরা বরাবরই সজাগ। সক্রিয়। লাল ঝান্ডা আছে। যখনই বাংলার সীমান্তে ভারতীয় বংশোদ্ভূত উদ্বাস্তু মানুষের ভিড় জমেছে, তখনই লাল ঝান্ডা এগিয়ে এসেছে তাদের পাশে। গরিব মানুষ ভরসা পেয়েছে। দুর্বার উদ্বাস্তু আন্দোলনের মুখে গড়ে উঠেছে একের পর এক কলোনি। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রান্তিক এবং বাস্তুহারা মানুষের অধিকার। সহায় সম্বলহীন মানুষের পাশে এখনও শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে বামপন্থীরা। সহায় সম্বলহীন মতুয়া অথবা অন্যান্য উদ্বাস্তু মানুষের একজনেরও ন্যায্য ভোটাধিকার কেড়ে নিতে দেবে না লাল ঝান্ডা।
২০০২ সালে যখন ভোটার তালিকার ইনটেনসিভ রিভিশন হয়, তখন এদের কাউকেই দুশ্চিন্তায় পরতে হয়নি। দিল্লিতে বিজেপি-তৃণমূলের এনডিএ সরকার থাকলেও, এরাজ্যে তখন বামফ্রন্ট সরকার। মানুষের মাথার উপর ছাতার মতো বরাবরই ভরসা জুগিয়ে গেছে বামফ্রন্ট।
এদেশে স্থায়ীভাবে বাসবাসকারী মানুষ এবং ভোটারদের অধিকার, পরিচিতি, নাগরিকত্ব সহ নানা প্রশ্নে সংশয় সৃষ্টি করা হচ্ছে। নাগরিকত্ব নির্ণয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজ। নির্বাচন কমিশনের নয়। কমিশন ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে, এটাই তার কাজ। বরং ২০০২ সালের আগে হলেই কেবলমাত্র যোগ্য ভোটার, এরকম মনোভাবের ভিত্তি কি? সার্বজনীন ভোটাধিকার অন্তর্ভুক্তি মূলক, যোগ্য ভোটারদের বাতিলের মনোভাব নয়। বিজেপি তৃণমূল এখানেই তালগোল পাকাতে চায়। ২০২৪ এবং তার দশ-বিশ বছর আগে থেকেই যারা যোগ্য ভোটার তারা এখনও ভোটাধিকারের যোগ্য। যোগ্য কোনও নাম যাতে বাদ না যায়, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সেইভাবে প্রতিটি মানুষের সাথে যোগাযোগ করা, তাদের দরখাস্ত এবং শুনানিতে সাহায্য করা আমাদের প্রতিদিনের কাজ। বিশেষত কাগজপত্র কম যাদের এমন প্রান্তিক, উদ্বাস্তু, মতুয়া, গরিব মানুষের ক্ষেত্রে এটা বেশি জরুরি।  মানুষ যেমন আমাদের ভরসা করতে চান, তেমনই মানুষের প্রতি ভরসা রাখা এবং ভরসাযোগ্য হয়ে ওঠাই— আমাদের দায়িত্ব।
 

Comments :0

Login to leave a comment