Post Editorial

শ্রম কোডের বিরুদ্ধে লড়াই জরুরি

উত্তর সম্পাদকীয়​

গার্গী চ্যাটার্জি

ভারত আজ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে রাষ্ট্র শক্তি, পুঁজির স্বার্থ ও মানুষের জীবনের দুঃখ-অভিযোগ পরস্পরের সঙ্গে কঠিন একটা টানাপোড়েনে জড়িয়ে গেছে। মুদি দোকানের জিনিস থেকে সবজির দাম বেড়েই চলেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ লাগামছাড়া, শিক্ষার খরচ আকাশ ছোঁয়া। বেকার যুবকদের সংখ্যা বাড়ছে— কিন্তু সংসদ, টিভি ডিবেট, সরকারি প্রচারে এসব নিয়ে আলোচনা প্রায় নেই। বরং এমন সব বিষয়কে সামনে আনা হচ্ছে, যেগুলো আসলে মানুষকে আর্থিক সঙ্কট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক আবেগে ব্যস্ত রাখার লক্ষ্য নিয়ে করা হচ্ছে। এটাই নয়া ফ্যাসিবাদের পরিচয়। আর ঠিক এই জায়গাতেই শ্রম কোডের প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ শ্রম কোড শুধু শ্রমিকের মজুরি বা ছুটির নিয়ম বদলায় না— এটি শ্রমিক শ্রেণির সংগঠন, অধিকার, নিরাপত্তা, সংগ্রাম— সমস্ত কিছুকে দুর্বল করে ফ্যাসিবাদী শাসনের পথ আরও মসৃণ করে।
ফ্যাসিবাদের লক্ষণ ও শ্রমিক শ্রেণির উপর তার প্রভাব
ফ্যাসিবাদ সবসময়ই পুঁজিপতিদের সুবিধা করে দেয় এবং শ্রমিকের সংগঠনকে ধ্বংস করে।
ইতিহাস বলছে:
১) ইতালিতে ১৯২২ সালে বেনিতো মুসোলিনি ক্ষমতায় আসার পর পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে প্রথম যে কাজগুলোর মধ্যে একটি করেছিল মুসোলিনি, তা হলো শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন ভেঙে দেওয়া।
কেন মুসোলিনি ট্রেড ইউনিয়ন ভাঙল ? ফ্যাসিবাদ জানে—একতাবদ্ধ শ্রমিক শ্রেণিই তার সবচেয়ে বড় শত্রু।
মুসোলিনি দেখেছিল, তখনকার ইতালিতে স্টিল শ্রমিক, রেল শ্রমিক, বন্দর শ্রমিক— প্রায় সব ক্ষেত্রেই শক্তিশালী ইউনিয়ন ছিল। তারা মালিকের বিরুদ্ধে লড়তো, ধর্মঘট করতো, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো। এদের বজ্রঐক্য ফ্যাসিবাদী একনায়কত্বকে টিকতে দেবে না। তাই ক্ষমতায় এসেই সে ঘোষণা করল— “রাষ্ট্র ও কর্পোরেটের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনও শ্রমিক সংগঠন চলবে না।” সে কারণেই মুসোলিনি ফ্যাসিস্ত পার্টি গড়ে প্রথমেই ট্রেড ইউনিয়নগুলো ভেঙে দিয়েছিল।
২) জার্মানিতে নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসার পর প্রথম মে দিবস পালন করা হয়েছিল ধুমধাম করে। অনেক শ্রমিক ভেবেছিলেন— হিটলার বোধহয় শ্রমিকবান্ধব হবে।
কিন্তু পরের দিনই, ২ মে ১৯৩৩, হিটলারের নাৎসি বাহিনী—স্টর্মট্রুপার বা এসএ — সারা জার্মানির ট্রেড ইউনিয়ন অফিসগুলিতে হামলা চালায়।
হামলার উদ্দেশ্য কী ছিল ? হিটলার ঘোষণা করল - “জার্মানিতে আর কোনও স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন থাকবে না। সব শ্রমিক হবে রাষ্ট্রের অনুগত কর্মী।” ফ্যাসিবাদ শ্রমিককে রাষ্ট্রের এক ‘যন্ত্র’ বানিয়ে ফেলতে চায়। সে কারণেই হিটলার "জার্মান লেবার ফ্রন্ট" তৈরি করে স্বাধীন ইউনিয়ন নিষিদ্ধ করেছিল।
৩) চিলিতে ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল আগাস্টো পিনোচেত ক্ষমতায় আসে। প্রথমেই তার লক্ষ্য ছিল— শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠন ভেঙে দেওয়া। কেন? কারণ তার আগে চিলির শ্রমিক সংগঠনগুলো ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। সালভাদর আলেন্দে সরকারের সময় শ্রমিক শ্রেণি ছিল দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মূল শক্তি। এই শক্তিকেই পিনোচেত ভয় পেত। সে কারণেই স্বৈরশাসক পিনোচেত চিলির শ্রম আইন বদলে শ্রমিকদের একা করে দিয়েছিল।
অর্থাৎ, একথা প্রমাণিত সত্য— ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় ভয় ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক শ্রেণি।
আজকের ভারতেও সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে— মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, বিরোধী মত দমন, ধর্মীয় বিভাজন, ইতিহাস-বিকৃতি— সবকিছুর সঙ্গে সঙ্গে এসেছে নতুন শ্রম কোড, যা শ্রমিকদের শত বছরের অর্জিত অধিকারকে বিপজ্জনকভাবে দুর্বল করছে।
কেন শ্রম কোডের বিরোধিতা?
শ্রম কোড শ্রমিকের সংগঠন ভাঙতে তৈরি করা হয়েছে— কারণ শ্রমকোডে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন কঠিন করে দেওয়া হয়েছে—কোনো ইউনিয়ন রেজিস্টার করতে হলে কমপক্ষে ১০% শ্রমিক বা ১০০ জন শ্রমিক (যেটি কম) সদস্য হতে হবে। ছোট ছোট ইউনিয়ন, নতুন ইউনিয়ন, কর্মস্থলে বিরোধী মতাদর্শের ইউনিয়ন— সবকিছুই দমন করার সুযোগ তৈরি।
কোনও ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটিতে বাইরের সংগঠকের সংখ্যা মোট সদস্যের ১/৩ বা ৫ জনের বেশি হতে পারবে না। ফলে, পেশাদার পূর্ণকালীন সংগঠকদের ভূমিকা সীমিত করা হয়েছে— যারা দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করেন তারা সংগঠনে সরাসরি ভূমিকা নিতে পারবেন না।
স্বীকৃত ইউনিয়ন পাওয়াও কঠিন- একটি ইউনিয়নের ৫১% শ্রমিক সমর্থন না থাকলে ‘নেগোশিয়েটিং ইউনিয়ন’ হবে না। অন্য ক্ষেত্রে মালিক ‘নেগোশিয়েটিং কাউন্সিল’ গঠন করবে। সরকার ও মালিকদের ইচ্ছামতো ইউনিয়নকে বাছাই করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গোপন ভোটাধিকার নেই, ফলে স্বচ্ছতা নষ্ট করা হয়েছে।
যথেচ্ছ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অধিকার দেওয়া হয়েছে— পূর্বে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০–র কম শ্রমিক থাকলে সরকারের অনুমতি না নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানে লে–অফ বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা যেত, এখন তা বদলে ৩০০–এর নিচে শ্রমিক থাকলে মালিকের শ্রমিক ছাঁটাই, শিল্প প্রতিষ্ঠানে লে–অফ বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে সরকারের অনুমতি লাগবে না। হাজার হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান সহজেই শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে।
বিবাদ মীমাংসা ব্যবস্থা শ্রমিকবিরোধী করা হয়েছে । শ্রম আদালত তুলে দেওয়া হয়েছে, ইন্ডাসট্রিয়াল ট্রাইবুনালে প্রশাসনিক আধিকারিকদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘Failure of Conciliation’ হলে ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না । ফলে, বিচারের পথ দীর্ঘায়িত হবে এবং শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ধর্মঘটের অধিকার প্রায় বাতিল করা হয়েছে । ধর্মঘটের আগে ১৪ দিন বা ৬০ দিনের নোটিস দিতে হবে। এটা নিয়ে ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে। মালিক ও সরকার যেকোনো নিয়ম দেখিয়ে ধর্মঘটকে ‘অবৈধ’ বলবে।
কনসিলিয়েশন বা ট্রাইব্যুনাল চললে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগে এটি শুধু “public utility services”–এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। এখন সব শিল্পে লাগু করা হয়েছে। শ্রমিকের শেষ অস্ত্র ধর্মঘটকে কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মালিকেরা ধর্মঘট চলাকালীন শুধু জানিয়ে দিলেই লকআউট করতে পারবে। শ্রমিকের ধর্মঘটকে বেআইনি ঘোষণা করা আরও সহজ হয়ে গেছে। ম্যানেজমেন্ট ন্যূনতম নোটিশ দেখিয়ে অমানবিকভাবে শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে।
এই আইনগুলো আসলে ইউনিয়নের কার্যক্রম চালাতে দেবে না, শ্রমিককে কোণঠাসা করে দেবে।
ফ্যাসিবাদ সবসময় সংগঠন ভাঙতে চায়— শ্রম কোড সেই কাজটিই করছে।
শ্রম কোডে ১২ ঘণ্টা কাজের রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। আগে ৮ ঘণ্টা কাজ শ্রমিক আন্দোলনের শত বছরের লড়াইয়ের ফল। নতুন শ্রম কোড সেই সুরক্ষাকে দুর্বল করেছে। খুব প্রয়োজন দেখিয়ে, শ্রমিককে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করানো যাবে— এটা কি উন্নয়ন? নাকি শ্রমিককে আবার ব্রিটিশ আমলের মতো ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, অসহায় করে তোলার পরিকল্পনা?
১২ ঘণ্টা কাজ করানো মানে—  শ্রমিকের স্বাস্থ্য নষ্ট, পরিবারকে সময় দিতে না পারা, ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে দুর্ঘটনা বাড়ার সম্ভাবনা এবং দেশে আরও বেশি বেকারত্ব, কারণ কম শ্রমিক দিয়ে বেশি কাজ করানো যাবে। শ্রম কোড আসলে পুঁজিপতিদের লাভ বাড়ানোর আইন।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ভারতের অন্যতম শীর্ষ শিল্পপতি নারায়ণ মূর্তি বহুবার দাবি তুলেছেন— ভারতের যুবকদের নাকি দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করা উচিত। ২০১৯ সালে তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন—“ভারতকে উন্নত করতে হলে আমাদের চীনের মতো ৯-৯-৬ প্যাটার্ন — সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা, সপ্তাহে ৬ দিন —অনুসরণ করতে হবে।” মজার বিষয়, ভারতের শ্রম কোডে ১২ ঘণ্টা কাজের যে সুযোগ সরকারের মাধ্যমে তৈরি হলো, সেটিই সেই কর্পোরেট দর্শনের বাস্তব রূপ। অর্থাৎ কর্পোরেট চাইছে সস্তা শ্রমে সর্বোচ্চ মুনাফা আর সরকার সেই মুনাফার জন্যই শ্রমিকের অধিকার খর্ব করছে।
কিন্তু চীন সরকার কী করেছে ? চীনের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির অনেকেই ৯-৯-৬ প্যাটার্ন চালু করেছিল। কিন্তু চীনের সুপ্রিম পিপলস কোর্ট ২০২১ সালে এটিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে। চীনের সরকারও জানিয়েছে — এটি শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘন করে, শ্রম আইনের বিরোধী। অর্থাৎ চীন ৯-৯-৬ বাতিল করেছে । কিন্তু ভারতের কর্পোরেট ও ভারত সরকারের অংশ বিশেষ সেটিকে মডেল হিসাবে প্রচার করছে ! এতেই স্পষ্ট, শ্রম কোড ‘দেশের উন্নয়ন, নয়, বরং কর্পোরেটের মুনাফা বাড়ানোর আইন।
চুক্তিভিত্তিক ও নিরাপত্তাহীন চাকরি আরও বাড়বে। নতুন কোডে ‘ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়মেন্ট’ বৈধ করা হয়েছে। মানে মালিক চাইলে যে কোনও শ্রমিককে ৩ মাস, ৬ মাস, ১১ মাস বা ১ বছরের চুক্তিতে নেবে, তারপর চাকরি শেষ। না নোটিস, না ক্ষতিপূরণ। শ্রমিক জীবনের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা স্থায়ী চাকরি, একে এক আঘাতে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে।
যেখানে স্থায়ী শ্রমিক একটু ভালো বেতন পেতেন, সেখানে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক অত্যন্ত কম মজুরিতে কাজ করে যেতে বাধ্য হবেন। ফ্যাসিবাদ সবসময়েই মানুষের নিরাপত্তাকে ভেঙে দেয়, যাতে তারা ভয় পেয়ে প্রশ্ন না করে।
ইএসআই, পিএফ, গ্র্যাচুইটি সবকিছুর ওপর আঘাত আনতে এই আইন। ‘সোশাল সিকিউরিটি কোড’ এই অংশে সামাজিক সুরক্ষাকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র রচিত হয়েছে । অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য কোনও স্কিম বা ফান্ড নেই, কোড শুধু নামমাত্র। প্রকৃতপক্ষে কোনও সরকারি ব্যয় বরাদ্দ নেই। শ্রম কোড সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করছে।
পিএফ দেওয়া আর বাধ্যতামূলক নয়, এমন বহু রাস্তাই খুলে গেছে। যেখানে ১২% পিএফে জমা করা বাধ্যতামূলক ছিল, সেটিকে ১০% করা হয়েছে, ফলে এই ভবিষ্যনিধি প্রকল্পের ভবিষ্যৎই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে । গ্র্যাচুইটির ক্ষেত্রে শর্ত বদলে এবং ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়মেন্টকে আইন সিদ্ধ করে শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটির অধিকারকে কার্যত ধবংস করার পরিকল্পনা করা হয়েছে । ইএসআই’র কভারেজেও অস্পষ্টতা বাড়ছে। ২০ জনের কম কর্মী থাকলে বহু অধিকারই আর প্রযোজ্য নয়। এর ফলে দেশের কোটি কোটি শ্রমিককে কোনও সামাজিক সুরক্ষা ছাড়াই অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। এটাই ফ্যাসিবাদের লক্ষ্য— মানুষকে দুর্বল, নির্ভরশীল, ভীত করে রাখা।
ফলে শ্রমিকের কণ্ঠস্বর বন্ধ করার জন্য শ্রম কোডকে আদর্শ অস্ত্র করা হয়েছে , এখন সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে সংবাদ মাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা সংস্থা, ইতিহাস পাঠক্রম, সেই একই সরকার শ্রমিকের সংগঠনকেও নিয়ন্ত্রণে আনতে শ্রম কোড তৈরি করেছে। ফ্যাসিবাদ জানে,
শ্রমিক একবার সংগঠিত হলে কোনও স্বৈরশাসনই টিকতে পারে না। তাই শ্রম কোড কখনোই শুধু শ্রম আইন নয়— এটি শাসকের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার।
শ্রম কোডের বিরুদ্ধে লড়াই মানেই নয়া ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। শ্রম কোডের বিরোধিতা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লড়াই নয়— এটি গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই। কারণ যেখানে ১২ ঘণ্টা কাজ স্বাভাবিক করা হয়, যেখানে ইউনিয়নকে দমিয়ে রাখা হয়, যেখানে চুক্তি শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ানো হয়, যেখানে মজুরি কম, বেকারত্ব বেশি, যেখানে পুঁজিপতিদের লাভই প্রধান লক্ষ্য — সেখানে গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না।
ফলে, শ্রম কোডের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে, শ্রমিকের অধিকার বাঁচানো, সংবিধানের শ্রমিকপন্থী নীতিগুলো রক্ষা করা, ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে শ্রেণি ঐক্য গড়া,  বিরোধী মতকে সম্মান দেওয়া, মানুষের মর্যাদা রক্ষা করা। 
অর্থাৎ, শ্রম কোড–এর বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণীর ঐক্যবদ্ধ লড়াই নয়া ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ গড়ার হাতিয়ার। একমাত্র শ্রমিক শ্রেণিই এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে পারে।
ফ্যাসিবাদ মানুষের ভয়, দুঃখ এবং বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে বড় হয়। শ্রম কোড সেই ফ্যাসিবাদেরই অর্থনৈতিক রূপ, যেখানে পুঁজি শক্তিশালী, শ্রম দুর্বল। এই প্রেক্ষিতে শ্রমিক যদি চুপ করে থাকে, তবে অধিকার থাকবে না, নিরাপত্তা থাকবে না, সংগঠন থাকবে না, ভবিষ্যৎ থাকবে না। কিন্তু, শ্রমিক একবার সংগঠিত হয়ে দাঁড়ালে ইতিহাস বদলে যায়।
এই কারণে শ্রম কোডের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, এটি ভারতের ভবিষ্যৎ রক্ষার লড়াই, গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই, সমতা রক্ষার লড়াই, ফ্যাসিবাদের অন্ধকার ঠেকানোর লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিতে হবে শ্রমিক শ্রেণিকে।

Comments :0

Login to leave a comment