কলকাতা মহানগর ও লাগোয়া বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায় কমপক্ষে ২০ লক্ষাধিক নাম বাদ পড়তে চলেছে!
নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ সূত্রের খবর, ‘‘ মূলত কলকাতা ও লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাট, নিউটাউন এলাকার সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর, বারুইপুর, বেহালা এলাকা থেকেই ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় নাম এই ২০ লক্ষ ভোটারের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এই সংখ্যার মধ্যে মৃত, স্থানান্তরিত ও বুথে খোঁজ না পাওয়া ভোটাররাও আছেন।’’
কমিশন সূত্রের খবর, কলকাতা বন্দর বিধানসভা এলাকার বুথের হিসাব থেকে প্রায় ৫০ হাজার নাম বাদ পড়তে চলেছে। এই সংখ্যায় যুক্ত আছে কসবা বিধানসভা কেন্দ্রও। কমিশন সূত্রের খবর, কসবা বিধানসভা এলাকা থেকেও ৫০ হাজারের কাছাকাছি নাম বাদ পড়তে পারে। আসানসোল শহর লাগোয়া বুথ এলাকা থেকেই কমিশনের প্রাপ্ত তথ্যে প্রায় ৩ লক্ষাধিক নাম বাদ পড়তে পারে। কমিশনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন,‘‘ ভোটার এনিউমারেশন ফরম ডিজিটাইড করার সূত্রে এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে কলকাতা ও আসানসোল লাগোয়া শহর এলাকা থেকে এই তথ্য কমিশনের সামনে এসেছে।’’
ঘটনা হলো, কলকাতা ও লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা রাজ্যের শাসক দলের দখলেই প্রায় সব বিধানসভা আসন। ফলে খসড়া তালিকা প্রকাশের পর ভোটার তালিকা থেকে বিপুল সংখ্যায় নাম বাদ পড়ার রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে চিন্তিত কমিশন। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর কী হতে পারে তা নিয়ে আগাম আশঙ্কা করে রেখেছেন। গত মঙ্গলবারই বনগাঁয় এক জনসভা থেকে মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘ খসড়া তালিকা প্রকাশ হলে দেখবেন, কী ভয়ঙ্কর অবস্থা। আমরা বলছি, একটা বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া যাবে না। যারা ভোট দিয়েছে, যারা সরকারের বিভিন্ন স্কিমে টাকা পায়, যারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করে তাদের নাম কাটার কোনও অধিকার কমিশনের নেই।’’
তবে চলতি ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাওয়া ভোটারদের নাম এবারই প্রথম প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে কাদের কাছ কাদের কাছ থেকে এনিউমারেশন ফরম ফেরত এল না তা জানার ব্যবস্থা করেছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, রাজ্যের ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ভোটারের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ভোটারের এনিউমারেশন ফরম বিলি করা যায়নি। আর ইতিমধ্যেই ৬ কোটির ওপর এনিউমারেশন ফরম ডিজিটাইজড করার কাজ শেষ করে ফেলেছে কমিশন। দ্বিতীয় পর্যায়ের এসআইআর প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রশাসিত অ্ঞ্চল ও ১২টি রাজ্য মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত এনিউমারেশন ফরমের ডিজিটাইজেশনের হার ৬৩ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে এনিউমারেশন ফরমের ডিজিটাইজেশনের হার ৭৮ শতাংশের ওপর।
এনিউমারেশন ফরম বিএলও’রা আপলোড করার সময় শুরুতে ভোটারদের ২০০২ সালে ও বর্তমান তালিকায় নাম থাকার বিষয়টিকে মিলিয়ে নিয়েছেন। পরের ধাপে ২০২৫ সালে ভোটার তালিকায় নাম আছে কিন্তু ২০০২ সালে নাম না থাকলেও পারিবারিক সূত্রে ম্যাচিং হচ্ছে কিনা দেখে নিয়েছেন। শেষে চলতি ভোটার লিস্টে নাম থাকলেও কোনোভাবে ২০০২ সালের সঙ্গে ম্যাচিং নেই, সেইসব ভোটারদের তথ্য আপলোড করেছেন। এই ভোটারদেরই মূলত নাগরিকত্ব যাচাই করার জন্য শুনানিতে ডাকা হবে। আর ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হতে যাওয়া ভোটার তালিকায় এই তিন অংশের ভোটারদের নামই রাখা হবে বলে কমিশন জানিয়েছে।
কিন্তু বাড়ি, বাড়ি এনিউমারেশন ফরম বিলি করার সময় মৃত ভোটারদের অস্তিত্ব টের পাওয়ার পর পরিবারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নেওয়া হয়েছে ডেথ সার্টিফিকেট। মৃত্যুর সার্টিফিকেট না থাকলেও মৃত ভোটারের এনিউমারেশন ফরমের ওপর পরিবারের কোনও এক সদস্যকে দিয়ে তাঁ ভোটার পরিচিতি কার্ডের নাম্বার দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে বিয়ের পর মহিলাদের শ্বশুরবাড়িতে চলে যাওয়া সহ অন্যান্য কারণে স্থানান্তরিত ভোটারদের তথ্য নেওয়া হয়েছে। এলাকায় গিয়ে বহু তালিকায় নাম থাকা ভোটারদের অস্তিত্ব না মেলারও খোঁজ পাচ্ছেন বিএলও’রা। ডিজিটাইড করার সময় বিএলও অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন অপশনে গিয়ে মৃত, স্থানান্তরিত ও নট ট্রেসেবল ভোটারদের চিহ্নিন্ত করার কাজ করছে বিএলও’রা।
এরাজ্যে ২০০২ সালে শেষবার ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন হয়েছিল। তারপর থেকে ২৩ বছর পর রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন অভিযানে নেমেছে নির্বাচন কমিশন। এবারের সংশোধন অভিযান অবশ্য নজিরবিহীন। কারণ, এবারই প্রথম গোটা দেশে ভোটার তালিকায় নাম তোলার সঙ্গে নাগরিকত্ব যাচাই করার বিষয়টিকে সামনে এনেছে কমিশন। গত ৪ নভেম্বর থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে ভোটারদের বাড়ি, বাড়ি এনিউমারেশন ফরম বিলি। ভোটারদের কাছ থেকে বিলি করা ফরম ফেরত আসার পর এখন বিএলও’রা ডিজিটাইজড করার কাজে ব্যস্ত। আগামী ৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।
SIR
কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে বাদ ২০ লক্ষ!
×
Comments :0