ELECTORAL BOND CPIM

গাত্রদাহ

সম্পাদকীয় বিভাগ

একেবারে প্রথমদিন থেকেই সিপিআই(এম) নির্বাচনী বন্ডের ঘোরতর বিরোধী। এমনকি এই বন্ডের মাধ্যমে অসৎ ও অস্বচ্ছ পথে কর্পোরেট অর্থে দলীয় তহবিল ভরানোর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করেছে। সর্বোপরি সিপিআই(এম) নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দলের তহবিলের জন্য এক কানাকড়িও গ্রহণ করেনি। এতে গাত্রদাহ শুরু হয়েছে একাংশ মিডিয়ার এবং শাসক দলের আইটি সেলের। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করে দেবার পর গাত্রদাহ আরও বেড়ে গেছে। কিন্তু জ্বালা মেটানোর অনুপান আপাতত তাদের হাতে নেই। তাই সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মিথ্যা কুৎসায় নেমেছে তঁরা। একাংশ মিডিয়া কুৎসিতভাবে প্রচার করছে সিপিআই(এম) নাকি গোপনে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে টাকা নিয়েছে আর বাইরে বন্ডের বিরুদ্ধে কথা বলে বাহবা কুড়াচ্ছে। গোদী মিডিয়া যে এমন নির্লজ্জ হবে এমন অন্ধ মোদীভক্তরা যে এমন দু’কান কাটা হবে তাতে অবাক হবার কিছু নেই। আসলে মোদী সরকারের সৌজন্যে গড়ে ওঠা কর্পোরেট-রাজনীতির অশুভ আঁতাত ধরা পড়ে যাবার ফলে শাসক দল ও তাদের সহযোগীদের মাথায় বাজ পড়ার অবস্থা। নির্বাচনে কালো টাকার দাপট বা কালো টাকায় দলের তহবিল গড়া ঠেকাতেই নাকি মোদী সরকার নির্বাচনী বন্ড চালু করেছে। মানুষ এখন ধরে ফেলেছেন ওটা ছিল চোখে ধুলো দেবার ছক। সত্য হলো রাজনীতিতে কর্পোরেট পুঁজির দাপট কা‌য়েম করা। সরকারের উপর কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করা এবং কর্পোরেটের অঙ্গুলি হেলনে সরকার পরিচালনার লক্ষ্যেই এই ব্যবস্থা। তাই এর বিরুদ্ধে যারা গোড়া থেকে সোচ্চার সেই সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে কুৎসায় নেমেছে। আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে সিপিআই(এম) নির্বাচনী বন্ড থেকে কোনও অর্থ নেয়নি আদর্শগত ও নির্বাচনী অবস্থান থেকেই। এমনকি আইন অনুযায়ী অর্থ নিতে হলে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায় দলীয় অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক। সিপিআই(এম) কোনও অ্যাকাউন্ড খোলেনি। তাই অর্থ নেবার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
এদিকে গোটা দেশ, এমনকি সারা দুনিয়া জেনে গেছে মোদীর নেতৃত্বে ভারতে কর্পোরেট অর্থে দল চালদনোর দুর্নীতিকে আইনি নৈধতা দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী বন্ড চালু করে। শাসক দলের উপর প্রভাব বিস্তার করতে এবং শাসক দলকে দিয়ে কর্পোরেট চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করতে চালু হয় নির্বাচনী বন্ড। এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দাতার পরিচয় গোপন করে রাজনৈতিক দলের তহবিলে ঢালাও অর্থ ঢালা যায়। এটা আসলে বাণিজ্যিক স্বার্থে রাজনীতিতে কর্পোরেট বিনিয়োগ। যত বিনিয়োগ হবে তার বহুগুণ সরকারের কাছ থেকে আদায় করা হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নীতি নির্ধারণ ও আইন প্রনয়ণের মাধ্যমে কর্পোরেটকে প্রতিদান দেওয়া হয়। এহেন কর্পোরেট দানের বিনিময়েই কোনোরকম আলোচনা ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এক তরফাভাবে জোর করে পাশ করানো তিন কৃষি আইন। কৃষিতে পূর্ণ কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিতে বিপুল কর্পোরেট পুঁজি ঢেলে জমি ও কৃষি থেকে কৃষকদের উৎখাত করার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাকে এই তিন আইন বাতিলে বাধ্য করলেও য়মন অনেক আইন, যেগুলি মোদী জমানায় প্রণয়ন  হয়েছে, সেগুলি বহাল তবিয়তে কার্যকর আছে এবং কর্পোরেটকে যথেচ্ছ সুযোগ ও সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত সরকার যে সব নীতি ঘোষণা করে বা বিধি তৈরি করে সেগুলিও ঘুরে ফিরে সেই কর্পোরেট সেবাতেই উৎসর্গীকৃত।
কর্পোরেট-রাজনীতির এই অশুভ আঁতাতের ছকটাই বেআব্রু হয়ে গেছে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের ফলে। দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে আর এসএস-বিজেপি-র গোপন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। রাজনৈতিক দলকে কর্পোরেট স্বার্থের জালে জড়িয়ে সমগ্র অর্থনীতিতে নিরঙ্কুশ কর্পোরেট আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায় হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ধারক ও বাহকরা। এইভাবে রাষ্ট্রকে একচেটিয়া কর্পোরেট পুঁজির অধীনে নিয়ে এসে তার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নির্মূল করতে চায়। রাষ্ট্র হবে পুঁজির সীমাহীন শোষণের যন্ত্র। রাষ্ট্রের চরিত্র বিশ্লেষণ করে মার্কস—এঙ্গেলস যে ছবি এঁকেছেন আজ চোখের সামনে সেই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে ভারত রাষ্ট্রে।
 

Comments :0

Login to leave a comment