Murshidabad Hawker, Harassed

বাংলাদেশি সন্দেহে মুর্শিদাবাদের ফেরিওয়ালাকে হেনস্থা এরাজ্যেই

রাজ্য জেলা

তুফানগঞ্জ মহকুমা শাসকের দপ্তরে ফেরিওয়ালাদের সাথে নিয়ে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব।

অমিত কুমার দেব: কোচবিহার 

ভিনরাজ্যে নয়, পশ্চিমবঙ্গেই আক্রান্ত রাজ্যেরই এক ফেরিওয়ালা। ভিন রাজ্যে যেমন এরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি মুসলমান বলে হেনস্তা করা হচ্ছে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত। ঠিক একই ভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ায় মুর্শিদাবাদ থেকে কোচবিহারে আসা এক কম্বল ফেরিওয়ালাকে বাংলাদেশী মুসলমান বলে দাগিয়ে দিয়ে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করে তুলে দেওয়া হলো পুলিশের হাতে। সিপিআই(এম) নেতৃত্বদের তৎপরতায় পুলিশের হাত থেকে মঙ্গলবার রাতে ছাড়া পেলেন এরাজ্যেরই মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল থানার অন্তর্গত গোকুলচক থেকে আসা ফেরিওয়ালা হাসিবুল শেখ। বুধবার সকালে তুফানগঞ্জ শহরে এই ফেরিওয়ালাদের অস্থায়ী বাসস্থানে গিয়ে এই আক্রান্ত ফেরিওয়ালা সহ অন্যান্য ফেরিওয়ালাদের সাথে কথা বলেন সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় সহ সিপিআই(এম) নেত্রী শিখা আদিত্য, পার্টি নেতা আকিক হাসান, পূণ্যেশ্বর অধিকারী, ধনঞ্জয় রাভা প্রমূখ। তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। এরপর তাদেরকে সাথে নিয়ে তুফানগঞ্জ মহকুমা শাসকের দপ্তরে যান তারা। এই ফেরিওয়ালাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি নিয়ে এদিন নেতৃত্বরা কথা বলেন, তুফানগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত মহকুমা শাসক জিতেন্দ্র তামাঙের সাথে।
এসআইআর আবহে এরাজ্যের বাসিন্দাদেরও দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশী বলে। মঙ্গলবার তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের শালবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বোচামারি এলাকায় মুর্শিদাবাদ থেকে আসা এক ফেরিওয়ালাকে বক্সিরহাট পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। আরএসএস এবং বিজেপির প্ররোচনায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি পার্টি নেতৃত্বের।  
প্রতিবছর শীতের শুরুতে রাজ্যের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি কোচবিহার জেলাতেও আসেন এই কম্বল ফেরিওয়ালারা। ঠিক একই ভাবে মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল থানার অন্তর্গত গোকুলচক এলাকার এই ফেরিওয়ালারা ২০০৭ সাল থেকে দলবেঁধে আসেন তুফানগঞ্জে। তুফানগঞ্জে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন তাঁরা। সাইকেল সহযোগে গোটা তুফানগঞ্জ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে কম্বল বিক্রি করেন তাঁরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শীতের শুরুতেই কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ শহরের কামাত ফুলবাড়ি স্টেশন রোড এলাকার এক বাড়িতে ভাড়া রয়েছেন এই কম্বল ব্যবসায়ীদের ২৩ জনের একটি দল। তাদেরই একজন এই হাসিবুল শেখ।
জানা যায়, প্রতিদিনের মতো গ্রামে গ্রামে ঘুরে শীতবস্ত্র বিক্রি করছিলেন এই ফেরিওয়ালা। মঙ্গলবার সকালে বোচামারি এলাকায় আচমকাই তাকে ঘিরে ধরেন বাসিন্দারা। এরপর তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন তারা। ভারতের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে এভাবে হেনস্থা হতে হবে তা কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। এরপর খবর যায় তার সঙ্গীদের কাছে। তাঁরা রীতিমত অসহায় হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়ান সিপিআই(এম) নেত্রী শিখা আদিত্য সহ দলের নেতা পূণ্যেশ্বর অধিকারী, ধনঞ্জয় রাভা, অসীম সাহা, যুবনেতা ইউসুফ আলি প্রমুখ। তাদের হস্তক্ষেপে পুলিশের কবল থেকে মুক্ত হন এই ফেরিওয়ালা।
আসলে কেউই শখ করে নিজের ঘর বাড়ি, নিজের জেলা কিংবা পরিবার পরিজন ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে থাকেন না। নিজের জেলায় কোন কাজ না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা উপার্জনের লক্ষ্যে পাড়ি দেন অন্যত্র। এই কম্বল ফেরিওয়ালারাও ব্যতিক্রম নন। তাঁরাও রোজগারের আশাতেই মুর্শিদাবাদ ছেড়ে এসেছেন কোচবিহারে। গ্রামে গঞ্জে ফেরি করে কম্বল বিক্রির মাধ্যমে যে উপার্জন হবে, তা নিয়ে ফিরবেন বাড়িতে। ২০০৭ সাল নাগাদ প্রথম কম্বল ফেরি করতে মুর্শিদাবাদ থেকে আসাম সীমান্তবর্তী তুফানগঞ্জ এলাকায় আসেন তাদের পূর্বসুরিরা। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে আসছেন এই ফেরিওয়ালারা। সেই সময় যারা আসতেন, বর্তমানে বয়স জনিত কারণে তাঁরা আসতে পারেন না। তাই তাদের উত্তরসুরিরা এখন এই ব্যবসায়ী নিয়োজিত করেছেন নিজেদের। এদের মধ্যে যেমন রয়েছেন হাসিবুল শেখ, ঠিক একই ভাবে আছেন মহঃ হাফিজুল শেখ, আঞ্জাবুল শেখ, রশিদ মোল্লা প্রমুখ যুবকেরা। এদের মধ্যে আছেন তুজাম আলির মতো যুবকও। যিনি একজন বিএড, ডিএলএড ডিগ্রি উত্তীর্ণ। সরকারি ব্যর্থতায় চাকরি হয়নি এই কৃতির। তাই পেটের টানে কম্বল ফেরিওয়ালা হয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে কোচবিহারে এসে গ্রামে গ্রামে কম্বল ফেরি করতে হচ্ছে তাঁকেও।
এদিন অত্যন্ত আক্ষেপ করে তাঁরা বলেন, নিজের রাজ্যেই যদি এভাবে আক্রান্ত হতে হয় তাদের। ভারতবাসী হয়েও যদি বাংলাদেশী লেভেল সেটে দেওয়া হয় তাদের কপালে, এর চেয়ে দুঃখের আর কিছুই হতে পারে না। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
 তুফানগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত মহকুমা শাসকের সাথে কথা বলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এদিন সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, বাংলার বাইরে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকরা বিভিন্ন ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। এবার এরাজ্যে আক্রান্ত হতে হচ্ছে রাজ্যেরই অন্য এক জেলার বাসিন্দাকে,  যা অকল্পনীয়। একমাত্র বাঙালি মুসলমান বলেই তাদের বাংলাদেশী বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোন রাজ্যে বাস করছি আমরা? বলে এদিন প্রশ্ন তোলেন তিনি। অনন্ত রায় বলেন, প্রশাসনকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পশ্চিমবাংলায় এই জিনিস হতে দেবেনা সিপিআই(এম)। প্রশাসনিক ভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, এরপর বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হবেন তাঁরা।

Comments :0

Login to leave a comment