ধূপগুড়ির বন্যা দুর্গতদের ডেপুটেশনে বাধা পুলিশের। আহত সিপিআই(এম) নেতা জয়ন্ত মজুমদার সহ কয়েকজন। ধূপগুড়ি ব্লকের বন্যাকবলিত গধেয়াকুঠি এলাকার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের ন্যায্য দাবিদাওয়া জানাতে গিয়ে শুক্রবার বিকেলে ধূপগুড়ি বিডিও অফিসে তীব্র উত্তেজনা ছড়াল। ১৭ দফা দাবি নিয়ে ডেপুটেশন দিতে আসা সিপিআই(এম)’র মিছিলকে পুলিশের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বচসা, ধাক্কাধাক্কি, এবং অবশেষে গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সিপিআই(এম) বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন বলে অভিযোগ। কিছু সময়ের জন্য গোটা বিডিও অফিস চত্বর রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।
এদিন ফালাকাটা রোডে অবস্থিত দলীয় কার্যালয় থেকে সিপিআই(এম) নেতা-কর্মীরা বন্যাদুর্গত মানুষদের সঙ্গে নিয়ে ১৭ দফা দাবির ভিত্তিতে একটি বিশাল মিছিল করে। মিছিলটি বিডিও অফিসের প্রধান গেটে পৌঁছালে বিশাল পুলিশবাহিনী তাদের আটকে দেয়। এরপরেই শুরু হয় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। পরিস্থিতি দ্রুত ধাক্কাধাক্কিতে মোড় নেয়।
সিপিআই(এম)’র অভিযোগ, পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে কর্মীরা যখন গেট খুলে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন, তখন দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এই ধস্তাধস্তির ফলে কয়েকজন কর্মী মাটিতে পড়ে যান এবং আহত হন। অভিযোগ, প্রশাসন মানুষকে বঞ্চিত করে অন্যায়কে ঢাকতে চাইছে, আর সেই কারণেই জনগণের দপ্তরে তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হলো। পরে অবশ্য পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশি উত্তেজনা ও ধস্তাধস্তির মধ্যেও সিপিআই(এম)’র একটি প্রতিনিধি দল বিডিওর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের ১৭ দফা দাবিপত্র পেশ করে। তাদের মূল অভিযোগ, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করে যারা ক্ষতিগ্রস্থ নন, তাদের ২–৩টি করে ঘরের টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের সমস্ত অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। বন্যার কারণে বাস্তুচ্যুত পরিবারের জন্য অবিলম্বে জলাভূমি ভরাট করে স্থায়ী গৃহ নির্মাণ করা। ফসল ক্ষতির সম্পূর্ণ বিমা টাকা অবিলম্বে দেওয়া। ভেঙে যাওয়া রাস্তা এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। বন্যাদুর্গত এলাকায় পানীয় জল ও খাদ্যের সরবরাহ অবিলম্বে চালু করা।
মিছিলে অংশ নেওয়া বন্যাদুর্গত মানুষেরা তাদের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রূপচাঁদ মন্ডল, মায়া রায়, শম্ভু মন্ডল অভিযোগ করেন, “এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকায় ঘর তৈরি করা অসম্ভব। আমরা এখনও তাবুর নিচে চরম ঠান্ডার মধ্যে রাত কাটাচ্ছি। অথচ প্রশাসন জল-খাবারের সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে।”
সিপিআই(এম) নেতা জয়ন্ত মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেন, “দুর্গত মানুষের ন্যায্য দাবি নিয়ে আসতেই পুলিশ বাধা দিচ্ছে। গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকতে বাধ্য হতে হয়েছে। এটি বিডিওর ব্যক্তিগত অফিস নয়—জনগণের দপ্তরে জনগণের প্রবেশে কেন বাধা দেওয়া হবে?”
বন্যাকবলিত এলাকার ঘরবাড়ি নির্মাণ, ক্ষতিপূরণ দ্রুত প্রদান এবং পুনর্বাসন ব্যবস্থার অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে বিডিও ও এসডিও অফিস অভিযানের ডাক আগেই দেওয়া হয়েছিল। এই আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে জারি থাকবে বলেও নেতৃত্ব জানিয়েছে।
Comments :0