গল্প
আইডিয়া
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
"মাম, একটা আইডিয়া দেবে গো?"
ল্যাপটপে কাজ করছিলেন শ্রীলেখা দেবী। ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সড়িয়ে এবার মেয়ের দিকে তাকালেন। তাঁর বছর পনেরোর মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে তাঁর সোফার পাশটায়।
"আইডিয়া! কিসের আইডিয়া?"
"এই সানডের পরের সানডে পাড়ায় সিট্ অ্যান্ড ড্র কম্পিটিশন, না! তাতে কি যে আঁকি কিছুতেই মাথায় আসছে না, জানো।"
"ভাব্, ভাব্, ঠিক মাথায় আসবে। তাছাড়া, তোদের তো একটা বড় সুবিধা আছে। ওদের ছবি আঁকার সাবজেক্ট তো ফিক্সড। কোনো চেঞ্জ করে না ওরা। প্রতিবছর আগস্ট মাসেই এই ইভেন্টটা হয় বলে ইন্ডিয়ান ফ্রিডম মুভমেন্ট-ই প্রতি বছর থাকে সাবজেক্ট। তার মানে, সাবজেক্ট আগে থেকেই জানিস। তাহলে, অসুবিধাটা কোথায়? আরো ডিপলি চিন্তা করতে থাক্ সাবজেক্টটা নিয়ে, দেখবি, আঁকার আইডিয়া তুই নিজেই পেয়ে যাবি।"
"কতো তো চিন্তা করলাম। কিছুতেই মাথায় আসছে না নতুন আইডিয়া। হেল্প করো না মাম, প্লিজ, প্লিজ।"
শ্রীলেখা দেবী আর কি করেন। এরকম করে কোনো সন্তান বললে কোনো মা কি থাকতে পারেন কখনো? উনিও পারলেন না। বললেন, "ঠিক আছে, ঠিক আছে, দাঁড়া, আগে চিন্তা করতে দে ভালো করে। ইন্ডিয়ান ফ্রিডম মুভমেন্ট, তাই তো?"
শ্রীজা মায়ের পাশটায় সোফায় বসতে বসতে বলে, "হ্যাঁ, মাম।"
কয়েকক্ষণ ভাবেন কি যেন শ্রীলেখা দেবী। তারপর বলেন, "আচ্ছা, তোদের কম্পিটিশনটা এই সানডের পরের সানডে, তার মানে ইলেভেন্থ আগস্ট?"
"হ্যাঁ, ইলেভেন্থ আগস্টেই তো।"
"তাহলে একটা আইডিয়া এসছে মাথায়। তবে, তার আগে কনফার্ম হওয়া দরকার আমি যেটা ভাবছি সেটা ঠিক কি না। সে-ই কবে পড়েছি।" বলতে বলতেই ফের ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রাখেন শ্রীলেখা দেবী আর দ্রুত আঙুল তাঁর চলতে থাকে ল্যাপটপের কিগুলোতে।
মিনিট খানেকও কাটেনি। শ্রীলেখা দেবী বলে উঠলেন, "ভুলি নি রে শ্রী, ভুলি নি।"
শ্রীজা দেখে, কেন জানি, ওর মামের মুখটা বড় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
"কি হল মাম? কি ভোলোনি?"
"সে-ই কত বছর আগে পড়েছিলাম স্কুলে ক্ষুদিরাম বসুকে নিয়ে..."
"ক্ষুদিরাম বোস? সেই দুর্ধর্ষ ফ্রিডম ফাইটার?"
"হ্যাঁ রে, হ্যাঁ। ঐ ক্ষুদিরাম বসুরই মৃত্যুদিন ইলেভেন্থ আগস্ট। মানে, যেদিন তোদের সিট্ অ্যান্ড ড্র কম্পিটিশনটা হবে। তুই এবার ক্ষুদিরাম বসুরই একটা পোট্রেট আঁকবি ঐ কম্পিটিশনে। আমি তোকে ইন্টারনেট থেকে ওনার কটা ছবি প্রিন্ট করে দেব। তুই তো ভালোই আঁকিস, পারবি না এই ক'দিনে ক্ষুদিরাম বসুর পোট্রেট রপ্ত করতে?"
"আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট, মাম।"
"তাতেই হবে। তুই প্রাইজ জিতিস আর না জিতিস, সেটা অন্য ব্যাপার, তুই যে ঐ বিশেষ দিনটায় ওনার একটা ছবি আঁকবি, সেটাই বড় কথা। তুই যে দিনটা মনে রেখে ওনার পোট্রেট এঁকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিস, তাতে বিচারকরাও যে খুশি হবেনই হবেন, তাও আমি হলফ করে বলতে পারি। কি রে আইডিয়াটা কেমন?"
"দারুণ আইডিয়া মাম, দারুণ আইডিয়া।"
"তাহলে বল্, তোর মামটা কেমন?"
"ইউ আর দ্যা বেস্ট মম্ ইন দিস ওয়ার্ল্ড, মাম।" বলতে বলতেই ওর মামকে জড়িয়ে ধরে শ্রীজা। শ্রীলেখা দেবীও সস্নেহে বুকে ধরে থাকেন তাঁর মেয়েকে।
মায়ের আদর খেতে খেতেই, শ্রীজার চোখ পড়ে ওর মামের ল্যাপটপের স্ক্রিনে। ক্ষুদিরাম বসুর একটি ছবি ঐ স্ক্রিন জুড়ে। মনে মনে, বাংলার সেই বীর শহিদকে প্রণাম করে শ্রীজা।
Comments :0