পূজা বোস
এও এক জঙ্গলরাজ। কোনও আইন নেই, বিধি নেই। শ্রমিক বা কর্মীর স্বীকৃতি। একতরফা কাটা হয় কমিশন। একতরফা দেওয়া হয় শাস্তি। এমনকি বক্তব্য জানানোরও সুযোগ নেই।
‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’-য় এই যন্ত্রণা নিয়েই হাজির হয়েছিলেন গিগ ওয়ার্কাররা। কিন্তু তাঁরা কেবল যন্ত্রণাই জানাননি। জানিয়েছেন লড়াইয়ের প্রস্তুতিও।
মিহির প্রামাণিক কাজ করেন সুইগি ইনস্টামার্টে। আর সুশান্ত হালদারও এসেছিলেন বুধবার চিনার পার্কে সমাবেশে। তিনিও সুইগি ইনস্টামার্টে কাজ করেন। আবার কখনও ওলা বাইক চালান।
দুই গিগ শ্রমিকই জানিয়েছেন যে কাজের জন্য সময়ের কোনও ঠিক নেই। ১২ ঘন্টা কাজ করেও পরিবার চালানোর মতো রোজগার করা যাচ্ছে না। অন্য কাজও করতে হচ্ছে।
সমাবেশে সংক্ষেপে বলেছেন গিগ শ্রমিক এবং আন্দোলনের নেতা সিআইটিইউ কর্মী সোহাগ খান এবং নরেশ মাহাতো। তাঁরা বলেছেন, সংস্থার শোষণ যেমন চলে একদিকে। আরেকদিকে চলে প্রশাসনের জুলুম। পুলিশ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কেস দেয়, টাকা তোলে। কেবল সিআইআইউ লালঝান্ডা নিয়ে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছে।
কেন্দ্রের বিজেপি জোট সরকার চালু করে দিয়েছে শ্রম কোড। ২৯টি শ্রম আইনকে বাতিল করে চালু হয়েছে চারটি শ্রম কোড। শ্রমিকরা এমনকি সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ জানালেও এদেশে তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌযদারি অপরাধের ধারায় দায়ের করা যাচ্ছে মামলা। তাকেই দেশের শ্রমিক আন্দোলন বলেছে জঙ্গলরাজ। চিনার পার্কে সেই জঙ্গলরাজের সঙ্গে লড়াইয়ের উপাখ্যান শুনিয়েছেন গিগ কর্মী আন্দোলনে যুক্ত মিহির প্রামাণিকরা।
তাঁরা বলেছেন, বহুজাতিক তথ্য প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকা এই সংস্থাগুলির কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানোই কোনও উপায় নেই। পুরোটাই হয় অ্যাপ মারফত। অ্যাপে সমস্যা হলে নানা বাধা আসে। সহজে বা সরাসরি নিয়োগকর্তার কাছে যাওয়ার উপায় নেই। কথা বলতে যাওয়া হলেও সময় পর্যন্ত দেওয়া হয় না।
মিহির প্রামাণিক বললেন যে মহিলা গিগ ওয়ার্কারদের জন্য যে যে নিরাপত্তা থাকা উচিত, যে ব্যবস্থা থাকা উচিত, সে দিকে কোনও ভ্রূপেক্ষই নেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে চলা এসব সংস্থার।
গিগ কর্মীরা জানিয়েছেন যে সংগঠনের কাজ করতে গেলে তার প্রভাব পড়েছে পেশায়। দ্রুত পড়তে হচ্ছে বিষনজরে।
প্রযুক্তিজনিত সমস্যাও আছে। লগ-ইন করার পর হঠাৎ হঠাৎ লগ-আউট হয়ে যায়। কাজ করতেই পারেন না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। কাস্টমার কেয়ার ছাড়া আর কোথাও জানানোর উপায় নেই। শ্রমিক বা কর্মীদের কথা শোনার বিশেষ ব্যবস্থাই নেই।
সুশান্ত বললেন, ‘‘তিনি যেহেতু ওলাও চালান গুরুতর সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কাস্টমার যদি বাজে খারাপ ব্যবহার করে তিনি কিন্তু কোথাও জানাতে পারেন না। খুচরো নিয়ে জুলুমের শিকার হতে হয়। মদ্যপ যাত্রীকে ঘিরেও সমস্যার মুখে পড়তে হয়। সংস্থার সেসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই।’’
মিহির বললেন, ‘‘কোনও অর্ডার কোনও কারণে কাস্টমারের ব্যবহারের জন্য ক্যানসেল হলে পয়সা তাঁদেরই কাটা হয়। না হলে বসিয়ে দেওয়া হয়।’’
চিনার পার্কের সমাবেশ বলেছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জুলুমের বিরুদ্ধে শক্ত করে ধরতে হবে লালঝান্ডা। নামতে হবে পথে।
এই সমাবেশের বক্তব্য রেখেছেন সিপিআই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখার্জি সহ নেতৃবৃন্দ।
Gig Workers
জঙ্গলরাজের সঙ্গে লড়ছেন সুশান্ত-মিহিররা, শক্ত হাতে ধরছেন লালঝান্ডা
×
Comments :0