সমাজ বদলের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে বামপন্থী আন্দোলনের কোনও বিকল্প নেই। সমাজবদলের লড়াইয়ের সৈনিক শহীদ সুকুমার ব্যানার্জিদের লড়াই আন্দোলনের অভিমুখ ছিল দেশকে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকের হাত থেকে মুক্ত করা ও দেশের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার সুরক্ষিত করা। মাত্র ২৩ বছর বয়সে নিজের জীবন উৎসর্গ করে সেই কাজ করেছিলেন সুকুমার ব্যানার্জি। শনিবার বল্লভপুর পেপারমিল গেটের সামনে শহিদ সুকুমার ব্যানার্জির স্মরণসভায় একথা বলেন শ্রমিকনেতা ও সিপিআই(এম) পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি। স্মরণ সমাবেশে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কয়লা শ্রমিক নেতা মনোজ দত্ত, সুপ্রিয় রায় প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন রুনু দত্ত। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, শহীদ সুকুমার ব্যানার্জির স্বাধীনতা আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলনের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজ বদলের লড়াইকে জোরদার করতে হবে।" ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ পরিচালিত বেঙ্গল পেপারমিলে শ্রমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলে ব্রিটিশ কর্তপক্ষ তাঁর বুকের উপর লরি চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে। সুকুমার ব্যানার্জির ৮৮ তম শহিদ দিবসে তাঁর আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান শ্রমিক-কৃষক ও গণ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। বিপি মিল মজদুর ইউনিয়ন (সিআইটিইউ) আয়োজিত এই স্মরণসভায় বন্ধ পেপারমিলের মজদুররা ছাড়াও এলাকার বহু মানুষ হাজির হন।
এদিন স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, "দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আক্রমণ তীব্র হয়েছে। ব্রিটিশরাজের সাথে বর্তমান সময়ের কোনও তফাৎ নেই। বিজেপি ও তৃণমূল সমঝোতা করে সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ তৈরি করে বিভাজন, শোষণ জারি রাখতে মরিয়া। দেশের শাসকেরা মূল্যবৃদ্ধি, বেকারির বিরুদ্ধে আন্দোলন ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এসআইআরের নামে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। বামপন্থীদের দাবি ভুঁয়ো ও মৃত ভোটার বাদ যাক ও স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি হোক। বল্লভপুর পেপার মিল সহ জেলার বহু রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানা বন্ধ। কাজ নেই। রুটি রুজি বিপন্ন। বন্ধ কারখানা খোলার জন্য বামপন্থীরা ছাড়া তৃণমূল বিজেপি সবাই নীরব। রাজ্যের বামফ্রণ্ট সরকারের উদ্যোগে এই জেলায় বহু ছোট মাঝারি কারখানা স্থাপন করা হয়েছিল। সেখানে এখন তৃণমূল দাদাগিরি চালাচ্ছে। রানিগঞ্জের জুটমিল বন্ধের মুখে। নূন্যতম মজুরি, ইএসআই-পিএফ, সামাজিক সুরক্ষা নেই। শ্রমকোড চালু করে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে বিজেপি। শ্রমিকদের স্বার্থে লালঝাণ্ডা লড়ছে। ধর্মঘট করলে তৃণমূল ও বিজেপি দুটো দলই ধর্মঘটীদের আক্রমণ করছে।"
নেতৃত্বরা বলেন, “পশ্চিম বর্ধমান জেলায় শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক আক্রমণ নেমে এসেছে। কারখানা ও খনি বেসরকারিকরণ হচ্ছে। শ্রমিক সহ সাধারণ মানুষের লড়াইও চলছে। একশো দিনের কাজ বন্ধ। কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছেন না। কাজ না পেয়ে ভিন রাজ্যে যাচ্ছে বেকার যুবরা। পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিনরাজ্যে আক্রান্ত হচ্ছে। শিল্পাঞ্চলের অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে শিল্প বাঁচানো ও শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে। তৃণমূল ও বিজেপির আঁতাতের রাজনীতি ভেঙে বামপন্থীদের শক্তিশালী করতে হবে। এই ব্যবস্থার বদলের জন্য লড়াই একমাত্র রাস্তা। এই লড়াইয়ে সুকুমার ব্যানার্জির চলার পথ আমাদের দিশা দেখাবে।”
comrade sukamar banerjee commemorated
পেপার মিলের শ্রমিকরা স্মরণ করলেন কমিউনিস্ট নেতা সুকুমার ব্যানার্জিকে
×
Comments :0