Duttapukur Blast

হাথরসের বিজেপি নেতার হাত ধরে দত্তপুকুরে তৃণমূল নেতার বাজি ব্যবসা

রাজ্য

অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা

৩১ আগস্ট— মোচপোলকাণ্ডে ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে তৃণমূল-বিজেপির গোপন আঁতাত। পশ্চিমবঙ্গের বাজি কারবারির সঙ্গে উত্তর প্রদেশের বিস্ফোরক কারবারিদের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ সামনে চলে এল। নীলগঞ্জের বাজির ব্যবসার বেশিরভাগ মালপত্র আসত যোগীর রাজ্য উত্তর প্রদেশের হাথরস থেকে। এলাকার তৃণমূল নেতা আজিবর রহমান রাজ্যস্তরের এক বিজেপি নেতার হাত ধরে উত্তর প্রদেশের হাথরসে সেই রাসায়নিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই বিস্ফোরক ব্যবসায়ীর নাম ভাস্কর পণ্ডিত। উত্তর প্রদেশে হাথরসের বাসিন্দা ভাস্কর পণ্ডিত হাথরসের বড়মাপের বিজেপি নেতা। তাঁর সঙ্গেই গত কয়েক বছর ধরেই ভালোই চলছিল নিষিদ্ধ বাজির কারবার।

এনআইএ তদন্ত সূত্রে এবিষয়ে অনেকটাই জানা গেছে। মোচপোলের বিস্ফোরণের ঘটনার পর পর এনআইএ বিস্ফোরণের তদন্ত করতে যতটা উৎসাহী ছিলহাথরস সামনে চলে আসায় এখন ততটাই পিছাতে শুরু করেছে। কেননাবিজেপি পরিচালিত উত্তর প্রদেশের হাথরসে বিস্ফোরক রাসায়নিকের দেশজোড়া ব্যবসা। বিজেপি পরিচালিত রাজ্যে এনিয়ে এনআইএর দাঁত ফোটানো বেশ কঠিন। জানা যাচ্ছেদিল্লির এক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মারফত কলকাতায় নিষিদ্ধ রাসায়নিক পাঠাতো ভাস্কর পণ্ডিত। মোচপোলের তৃণমূল নেতা আজিবর রহমানশামসুল আলি, মুর্শিদাবাদের জিরাট শেখ সহ রাজ্যের একাধিক তৃণমূলের নেতার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলত ভাস্কর পণ্ডিত।

তৃণমূল-বিজেপি যোগসাজশের জেরেই এতদিন কাঁড়ি কাঁড়ি কাঁচামাল পথে কোথাও ধরা পড়েনি। রাজ্য-কেন্দ্রের প্রাপ্য জিএসটি দিয়ে অ্যাসিড সল্ট’-এর নাম করে পশ্চিমবঙ্গে ওই বিস্ফোরকের রাসায়নিক পাঠাতো ভাস্কর পণ্ডিত। উত্তর প্রদেশের হাথরস থেকে বিহারের পাটনা হয়ে সোজা ডানকুনি। বিহার পুলিশকে সামলানো ছিল ভাস্কর পণ্ডিতের দায়িত্ব। এ বিষয়ে অনেক প্রমাণ এনআইএ তদন্তকারীদের হাতেও এসেছে। ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির একটি রশিদে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে উত্তর প্রদেশের হাথরস থেকে সোজাসুজি মাল এসেছে হাওড়ার ডানকুনিতে ট্রান্সপোর্টের ওয়্যারহাউসে। 

প্রতি বস্তায় ৫০ কিলোগ্রাম করে ৫০০ কিলোগ্রাম মাল এসেছিল ওই বরাতে। হাথরসের কমলা বাজার থেকে ওই মাল ট্রান্সপোর্টকে দেওয়া হয়। রাজ্য-কেন্দ্রের জিএসটি মিটিয়ে সেখান থেকে ডানকুনিতে আসতে বিল হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এটা শুধু মাল আনার ভাড়া। মালের দাম আলাদা। সেটা কখনো কখনো অনলাইনেকখনো খোদ ভাস্কর পণ্ডিতের লোক আসত টাকা নিতে। তদন্ত চালাতে গিয়ে ভাস্কর পণ্ডিতের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের খালি চেক বই মিলেছে। কেন এই চেক মোচপোলের ব্যবসায়ীদের কাছে কিছু তা এখনো বোঝা না গেলেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের চেকের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।

খালি চেকে ছাপানো যে অ্যাকাউন্ট নম্বর ( ৫০২০০০৬০৩১২৯৩৫) রয়েছে সেটা ভাস্কর পণ্ডিতের। আগ্রা-আলিগড় রোডের ব্যস্ত সড়কের পাশে সদাবাদ গেটের কাছে ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা থেকে প্রচুর লেনদেনের নজির মিলেছে। জানা যাচ্ছেমোচপোলের বিস্ফোরণ থেকে পালিয়ে বাঁচা জিরাট শেখের মাধ্যমে মুর্শিদাবাদেও ঘাঁটি গেড়েছিল ওই পণ্ডিত। কেন্দ্র-রাজ্যের দুই প্রশাসন হাতের মধ্যে থাকায় কোটি কোটি টাকার নিষিদ্ধ বাজির ব্যবসা চালিয়ে গেলেও কোনও সময়ই কারো কোনও সমস্যা হয়নি। জিরাট শেখ আগেও মুর্শিদাবাদে নিষিদ্ধ বাজি তৈরিতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। সে শুধু নয়জিরাট শেখের দাদাও এখনো জেলে রয়েছে। 

নীলগঞ্জের তৃণমূল নেতা আজিবর রহমানের নিজের ছেলেকে মুর্শিদাবাদে বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই নিষিদ্ধ বাজি ব্যবসার কথা তাঁর মাথায় আসে। প্রশাসনে হাত থাকায় তাঁকে যোগাযোগ করেছিল জিরাট শেখ। সে লোক আর মালপত্রের জোগান দেবে বলেছিল। তাই মোচপোলের তৃণমূলের স্থানীয় নেতা শামসুল আলির বাড়ি ও পিছনের আমের বাগান ভাড়া নিয়ে শুরু হয় রকমারি নিষিদ্ধ বাজি তৈরি। নিজে শাসক দলের নেতা বলে পরিচিত থাকায় পাশের গ্রামের কেরামত আলিকে হাতে করেছিল আজিবর। আজিবর-কেরামত আর শামসুল-জিরাট শুরু করে বিস্ফোরকের মারকাটারি ব্যবসা। সময় যত এগোচ্ছেততই বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে। 

নীলগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে দত্তপুকুরবারাসত থেকে দমদম সর্বত্র থানার পুলিশের মাসোহারা টাকার ব্যবস্থা ছিল বলে অভিযোগ। আর শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা জুড়ে রয়েছেন ওই কারবারে, সেটা জানার পরেও পুলিশ প্রশাসন কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গেছিল। তবে মোচপোলের ঘটনার পর এলাকার মানুষের চেতনা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে ইছাপুর নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য আর্শাদ আলির ইটভাটা থেকে এক লরি শব্দবাজি উদ্ধার হয়। বিস্ফোরণস্থলের অদূরে ওই বন্ধ ইটভাটাতেও প্রচুর বাজি জমা রয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করলেসেখানে গিয়ে দেখা যায় লরি ভর্তি বাজি ঢাকা রয়েছে। রাতের অন্ধকারে তা অন্যত্র পাচারের কথা ছিল।

Comments :0

Login to leave a comment