Rangati River in Dooars

ডুয়ার্সের রাঙাতি নদীতে ভাসছে মরা মাছের ঝাঁক, তীব্র চাঞ্চল্য

জেলা

ডুয়ার্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী রাঙাতিতে বুধবার সাতসকালে অসংখ্য মৃত মাছ ভেসে ওঠার ঘটনায় বানারহাট ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আংড়াভাষা ১ ও ২, এবং শালবাড়ি ১ ও ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বুক চিরে বয়ে যাওয়া এই নদীতে ভোর হতেই নদীর জলে রাশি রাশি মাছের মড়ক প্রথম স্থানীয়দের নজরে আসে। খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে নদীর দু’ধারে ভিড় জমতে শুরু করে। নদী দূষণ ও পরিবেশের সঙ্কট নিয়ে স্থানীয় মানুষের উদ্বেগ আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
মঙ্গলবার তিস্তা নদীতে একই ধরনের মড়কের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এই পুনরাবৃত্তি। এই ঘটনা কেবল পরিবেশগত সঙ্কট নয়, বরং নদী দূষণ এবং অবৈধ বালি-পাথর উত্তোলনজনিত নাব্যতা হ্রাসের মতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলিকে প্রকট করে তুলেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই রাঙাতি নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বালি ও পাথর উত্তোলনের অভিযোগ করে আসছিলেন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, লাগাতার এই কাজের ফলে নদীর স্বাভাবিক নাব্যতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। নদীর প্রাকৃতিক স্রোত, জলাধার এবং সামগ্রিক জীববৈচিত্র্য ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিবেশগত দুর্বলতার মধ্যেই হঠাৎ বিপুল সংখ্যক মাছের মৃত্যুতে এলাকার একাংশ নিশ্চিত যে, রাতে নদীতে বিষাক্ত রাসায়নিক কেউ গোপনে ঢেলে থাকতে পারে। যদিও এর সপক্ষে এখনও কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি, তবুও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ তীব্র।


এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মৎসজীবী সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য বিকাশ দাস বলেন, “রাঙাতি নদীর উপর যে অত্যাচার এতদিন ধরে চলে আসছে, তারই ফল আজ চোখের সামনে দেখতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বালি–পাথর উত্তোলন এবং তার সঙ্গে সম্ভাব্য বিষক্রিয়ার যৌথ প্রভাবে আজ নদীর প্রাণশক্তি বিপন্ন। নদীর বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় এবং দোষীদের শাস্তির জন্য প্রশাসনের অবিলম্বে কড়া তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে প্রশাসনও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। জেলা মৎস্য দপ্তরের আধিকারিক রমেশচন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, “দপ্তরের একটি বিশেষজ্ঞ দল ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে। তারা নদী থেকে জল এবং মৃত মাছের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠাবে। দূষণের উৎস চিহ্নিত করে যাঁরা এই ভয়াবহ ঘটনার জন্য দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাঙাতি নদীর উপর নির্ভরশীল স্থানীয় মানুষের জীবনযাপন, কৃষিকাজ এবং মাছ নির্ভর অর্থনীতি এখন বড় বিপদের মুখে। আজকের এই ঘটনা বানারহাট অঞ্চলে পরিবেশ রক্ষা ও নদী বাঁচাও আন্দোলনে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশ রক্ষা ও নদী রক্ষায় প্রশাসন কত দ্রুত এবং কতটা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, এখন সেটাই দেখার।

Comments :0

Login to leave a comment