ভয় দেখিয়ে অভয়া-লড়াই ভাঙতে
৬ চিকিৎসককে সমন পুলিশের
নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ৫ আগস্ট— প্রায় এক বছর হতে চলেছে, ন্যায় বিচারের দাবি এখনও অধরা। আরজি করের ধর্ষণ খুনের মামলায় সিবিআই তদন্তও প্রায় শীতঘুমে। এক বছরের মাথাতেও দ্বিতীয় দফার চার্জশিট পেশ করেনি সিবিআই। আদালতের এজলাসে এখন রাজ্য সরকার আর সিবিআই’র সুর একই বিন্দুতে এসে পৌঁছেছে।
এই পরিস্থিতিতে ন্যায় বিচারের দাবিতে ৮, ৯, ১৪ আগস্ট রাজ্য জুড়ে ফের চিকিৎসক সমাজের সঙ্গে পথে নামতে চলেছেন সাধারণ মানুষ। আবারও এই শহর, এই রাজ্যের বিস্তীর্ণ জনপদে আরজি করের বর্বরতার বিচারের দাবিতে স্লোগান উঠবে, মিছিলে সাজবে রাজপথ। আর ঠিক সেই সময় ফের প্রতিহিংসার রাজনীতির পথেই মমতা ব্যানার্জির সরকার, প্রশাসন। আরজি কর কাণ্ডের এক বছরের দোরগোড়ায় এসেও সরকার, শাসক দল, পুলিশ প্রশাসন যে আন্দোলনকারীদেরই নিশানা করছে তা আরও একবার স্পষ্ট হলো কলকাতা পুলিশের অতি তৎপরতায়।
কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে চিকিৎসক আন্দোলনের নেতা, এএইচএসডি’র ডাঃ মানস গুমটা, সুবর্ণ গোস্বামী, কৌশিক চাকী, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের কিঞ্জল নন্দ, দেবাশিস হালদারদের সমন পাঠানো হয়েছে। গত বছর শারদোৎসবের সময় রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রীর কার্নিভালের বিপরীতে এই শহর দেখছিল এক বেনজির প্রতিবাদের বিস্ফোরণ। সরকারি হাসপাতালের ভিতরে কর্মরত তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে, বিচারের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ নেমে এসেছিলেন রাস্তায়— দ্রোহের কার্নিভালে। উৎসবের সময়েই ধর্মতলায় জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান, অনশন কর্মসূচি হয়েছিল। সেই সময় নাকি আইন ভাঙা হয়েছিল। আর তার জন্য প্রায় ১১ মাস বাদে কলকাতা পুলিশের সমন পাঠানো হচ্ছে! মোট তিনটি মামলায় সমন পাঠানো হয়েছে সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকদের। তিনটি কেসের নম্বর হল ২৫৯, ২৬১ ও ২৬৩। উৎসবের সময় মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডোরিনা পর্যন্ত মিছিলের জন্য মামলা রুজু হয় (২৫৯নম্বর কেস)। এছাড়াও উৎসবের সময় আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা গাড়িতে করে শহরের একাধক বড় বড় মন্ডপের সামনে গিয়েছিল, ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েই। সেই পুজো পরিক্রমা করার জন্যও একটি মামলা (কেস নম্বর ২৬১) হয়। এছাড়াও গত বছর অষ্টমীর দিন মেট্রো চ্যানেলে জমায়েত এবং ‘দ্রোহের উৎসব’ পালন করার জন্য মামলা দায়ের হয়। ২৬৩ নম্বর কেস। সেই মামলাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই ৬ জন সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসককে সমন পাঠানো হয়েছে বৌবাজার থানার তরফে। কিন্তু এক বছর পর কেন সমন পাঠানো হলো? প্রতিহিংসা রাজনীতি থেকেই মেধার ভিত্তিতে কাউন্সেলিং না করে আন্দোলনকারীদের একাংশের দূরবর্তী জেলায় পোস্টিং দেওয়ার অভিযোগও এর আগে উঠেছিল সরকারের বিরুদ্ধে। আদালতে তার জন্য ভর্ৎসিতও হতে হয় সরকারকে।
এদিন রাতে ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী গোটা ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘এটি প্রতিহিংসার ঘৃণ্য রাজনীতি ছাড়া আর কি হতে পারে? সমনের নোটিশ এখনও হাতে আসেনি। এলে দেখবো। তবে এই সরকারের কাছ থেকে এগুলি প্রত্যাশিত। সরকার ভয় পাচ্ছে যে আবার ৯ তারিখে, ১৪ তারিখে জনবিস্ফোরণ হবে। ন্যায় বিচারের আকাঙ্ক্ষায় এই শহরে আবার আন্দোলিত হবে। তার আগে ভয় দেখাতে চাইছে। কিন্তু কেউ এখন আর ভয় পাবে না।’’ এদিন জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার সাংবাদিকদের সামনে বলেন, গত ৩-৪ দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, ইন্টার্ন, পড়ুয়াদের কাছে পুলিশের নোটিস যাচ্ছে। বৌবাজার এবং হেয়ার স্ট্রিট থানার তরফে একাধিক জুনিয়র চিকিৎসকের নোটিস পাঠানো হচ্ছে। গত বছর ধর্মতলায় অনশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধারা দেওয়া হয়েছে। বেআইনি জমায়েত, পুলিশের কাজে বাধাদান, মহিলা পুলিশের শ্লীলতাহানি, পুলিশকে আঘাত ইত্যাদি জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলেও দাবি জুনিয়র চিকিৎসকদের।
এদিকে, অভয়া মঞ্চের তরফে ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ, ডাঃ তমোনাশ চৌধুরি, মনীষা আদক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আগামী ৮আগস্ট, শুক্রবার ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে রাত ৯টায় কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার মশাল মিছিল হবে। তারপর রাতে শ্যামবাজারে অবস্থান। ৯ তারিখ, শনিবার সকালে রাজ্যের দিকে দিকে অভয়ার জন্য আমাদের রাখিবন্ধন এবং বিকেল ৪টেয় অভয়া মঞ্চের ডাকে ‘কালীঘাট চলো’। যারা আমাদের মেয়ের ন্যায় বিচার চান, আমাদের মেয়েদের পক্ষে আর ধর্ষক-খুনি এবং তাদের মদতদাতাদের বিপক্ষে, তাঁরা একটি বিশাল পরিবার। একতাই শক্তি। সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে শাসকের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত হই একসাথে, চলো কালীঘাট।
RG kar protest
৮’এ মশাল মিছিল, ৯’এ ‘কালীঘাট চলো’

×
Comments :0