বইকথা
পাতাবাহার
প্রদোষকুমার বাগচী
ভুলে যাওয়া একটি বইয়ের কথা
আজ তোমাদের নতুন একটি বইয়ের কথা বলবো যার নাম তোমাদের না শোনারই কথা। তোমরা কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের নাম জনো নিশ্চয়। তিনি বহু আগে ১৯৫৫ সালে ‘পাতাবাহার’ নামে একটি সংকলন করেছিলেন। তারপর সেই সংকলনের কথা প্রায় সবাই ভুলেও গিয়েছেন। অনেক পরে সেই সংকলনটির খোঁজ পাওয়া গেল অদ্ভূতভাবে, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সৌজন্যে। কী অপূর্ব সেই সংকলন। খালেদ চৌধুরীর আঁকা মলাট। ভিতরে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা ছবি। সত্যজিৎ ছাড়াও পূর্ণেন্দু পত্রীও ছবি এঁকেছিলেন। তোমাদের সকলেরই ভালো লাগবে সে বই।
সুকুমার রায় লিখিত ও সত্যজিৎ রায় চিত্রিত ‘কলিকাতা কোথা রে!’ বলে সংকলনটি শুরু হয়েছে। কলিকাতা নামটি চেনা লাগলেও সেটি কোথায় অবস্থিত খুঁজে পাচ্ছিলেন না ছড়াকার সুকুমার রায়। সুকুমার রায় তখন গিরিডিতে বাস করতেন। এমনকি রেলের টাইম টেবিলেও কলিকাতা নাম পাওয়া যায়নি। এখন অবশ্য তোমরা ‘কলকাতা’ নামে একটি স্টেশন পেয়েছো। ভাগ্যিস সে সময় ‘কলকাতা’ নামের কোনও স্টেশন ছিল না। তাই কলকাতা যে কোথায় অবস্থিত এবং তার নাম কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, তাই নিয়ে কত সুন্দর একটা ছড়া তিনি লিখেছিলেন না দেখলে তোমরা বিশ্বাসই করতে পারবে না। এর পরেই রয়েছে সুখলতা রাওয়ের একটি কবিতা। তার পরে পাবে অসম্ভব ভালো একটি গল্প, ‘ভানুমতীর খেল’। লিখেছেন লীলা মজুমদার।
ভালো লেখা, তোমাদের মনের মতো লেখার যেন শেষ নেই এই সংকলনটিতে। কোনটা আগে পড়বে কোনটা পড়ে পরবে তাই নিয়ে তোমাদের নিজেদের মনের মধ্যেই যুদ্ধ চলবে। কারণ এমন সুন্দর বাহারী সংকলন খুব কম মেলে। যেটা সামনে পাবে সেটাই আগে পড়তে ইচ্ছা করবে। মানিক বন্ধোপাধ্যায়ের ‘অলৌকিক লৌকিকতা’ এবং ননী ভৌমিকের ‘শালপতার ডাক’ গল্প দুটি তোমাদের খুব ভালো লাগবে। তবে সমরেশ বসুর লেখা একটি গল্প আছে নাম ‘পুনিয়া’। পুনিয়া মিষ্টির দোকানে কাজ করতে এসেছিল। দোকানের মালিক ‘পুনিয়া’কে কীভাবে চোর অপবাদ দিয়ে ভয়ঙ্কর অত্যাচার করেছিল তার বিবরণ পড়লে তোমাদের চোখে জল আসবে। দার্শনিক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘ম্যাজিক! ম্যাজিক! প্রবন্ধে অনেক জানবার কথা আছে। সোমনাথ লাহিড়ী সাংবাদিকতা করতেন একসময়ে। তিনি কমিউনিস্টও ছিলেন। সেই সোমনাথ লাহিড়ী তোমাদের মনের মতো করে সাংবাদিকতা কি জিনিস সে কথা সহজ সরস করে লিখেছেন।
এই সংকলনে যাঁদের নাম আছে তাঁদের সকলের নাম আমি উল্লেখ করছি না। তোমরা নিজেরাই দেখে নিও। তাঁরা সকলেই বিখ্যাত মানুষ। প্রমেন্দ্র মিত্র, অন্নদাশঙ্কর রায়, বিমলচন্দ্র ঘোষ, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, তুষার চট্টোপাধ্যায়, মনীন্দ্র রায় আরো অনেকে আছেন। পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘মুক্তোডাঙ্গার জল থৈথৈ মাঠ’ কবিতাট তোমাদের চিত্ত জয় করে নেবে। আজকের অনেক স্বার্থপর, দোষী, অপরাধী মানুষ সমাজের মধ্যে মিশে থাকে। তারা সমাজে খারাপ খারাপ কাজ করলেও তাদের কিছু হয় না। বরং সরল সাধাসিধে ভালো মানুষদের তারা বিপদে ফেলে এবং নিজেরা সাধু সাজে। সে কথার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ একটি ঊর্দু উপকথা লিখেছেন জ্যোতিভূষণ চাকী, যে গল্পের নাম ‘এক বাঘ, এক শিয়াল, এক গাধা’। আশা করি এই গল্প তোমাদের সকলেরই ভালো লাগবে। আরও সুন্দর ও মজার গল্প কবিতা এতে আছে। বাকি কথা জানতে হলে বইটি তোমাদের পড়তে হবে।
বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ন্যাশনাল বুক এজেন্সি থেকে ১৯৫৫ সালে। পরে তার প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে। সুন্দর মন ভোলানো ছবিতে সাজানো এই বইটি।
পাতাবাহার
সম্পাদনা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা : ন্যাশনাল বুক এজেন্সি। ১২-এ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা-৭৩। ১০০ টাকা।
Comments :0