Modi Ladakh

মোদীর লাদাখাতঙ্ক

সম্পাদকীয় বিভাগ

একরকম প্রত্যাশিত পথেই মোদী সরকার লাদাখে মানুষের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুককে আটক করে লাদাখের বাইরে চালান করে দিয়েছে। আপাতত তাঁর ঠিকানা যোধপুরের কেন্দ্রীয় জেল। জামিন ছাড়া বিনা বিচারে যাতে তাঁকে অনির্দিষ্টকাল জেলে আটকে রাখা যায় তার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে। অর্থাৎ লাদাখের মানুষের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনে গোটা লাদাখবাসীকে সমবেত করার ফলে মোদীরা রীতিমতো শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। লাদাখের মানুষের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় ওয়াংচুক যদি এই আন্দোলন আরও তীব্র করে ফেলেন তাহলে মোদী-শাহদের বিপদ অনিবার্য। এই অবস্থায় ভীত সন্ত্রস্ত ও শঙ্কিত মোদীরা ওয়াংচুককেই তাদের প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলেন। ঠিক করে ফেলেন ওয়াংচুককে বিচ্ছিন্ন করে জেলে আটকে রাখা হবে যাতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে না পারেন। তাই তাঁকে বলির পাঁঠা সাজাতে দেশবিরোধী, জাতীয় স্বার্থবিরোধী তকমা দিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় তিনি বিদেশি শক্তির মদতে লাদাখে অশান্তি সৃষ্টি করছেন। যুব বিক্ষোভে অশান্তি ও হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে তাঁর উসকানি আছে।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো মোদী সরকার যেখানে তাদের সাজানো ছক অনুযায়ী চলতে ব্যর্থ হয়, যেখানকার পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় অর্থাৎ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, প্রতিবাদ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে সেখানে মোদী-শাহ বিদেশি শক্তির ভূত খুঁজতে থাকেন। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রসারমান আন্দোলনের নেতা কর্মীদের বিদেশি মদতপুষ্ট বলে দেগে দিয়ে উগ্র দেশপ্রেমের ধুয়ো তোলেন। অতঃপর তাদের বিরুদ্ধে নামিয়ে আনেন নির্মম পদক্ষেপ। এক ভয়ের ও সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে নামানো হয় পুলিশ ও আধা সেনাদের। নির্মমভাবে দমনের চেষ্টা হয় বিক্ষোভ আন্দোলন। কাশ্মীরে এমনটাই দেখে অভ্যস্ত মানুষ। মণিপুরে তিন বছর ধরে এমনই আচরণ করে চলেছে মোদী সরকার। জম্মু-কাশ্মীরে যেকোনও ধরনের সরকার বিরোধিতার সঙ্গে কায়দা করে বিদেশি শক্তির যোগসূত্রের অভিযোগ তুলে দেওয়া হয়। মণিপুরে আঙুল তোলা হয় বেআইনি অনুপ্রবেশের দিকে। মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবির শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে উপেক্ষা-অস্বীকার করতে করতে যখন কোনও এক সময় ক্ষোভ বিক্ষোভ তীব্র হয়ে ‍‌ওঠে তখনই দমনে ঝাঁপিয়ে পড়ে সরকার। লে-তে সেদিনের যুব বিক্ষোভে পুলিশ জলকামান, শূন্যে গুলি ইত্যাদি পদক্ষেপ না নিয়ে সরাসরি কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালিয়ে চারজনকে খুন করে ফেলে।
তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব ছক অনুযায়ী বিক্ষোভের মদতদাতা হিসাবে ওয়াংচুককে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইনে তার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করা হয়। তাঁকে ঘুরিয়ে বিদেশি শক্তির এজেন্ট বানিয়ে দেওয়া হয়। তার সংস্থার ৪০ বছরের লিজও বাতিল হয়। আরও একাধিক অভিযোগ তুলে সিবিআই-কে নামানো হয় তদন্তে। আচমকা এমন অবিশ্বাস্য তৎপরতা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না মোদীর লাদাখ পরিকল্পনা বুমেরাং হয়ে উঠেছে। লাদাখের মানুষ বুঝে গেছেন এই সরকার তাদের স্বপ্ন পূরণের বদলে আরএসএস, বিজেপি’র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য লাদাখকে ব্যবহার করছে। লাদাখের মানুষের অধিকার, স্বাতন্ত্র্য, পরিচিতি, সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে।

Comments :0

Login to leave a comment