Bangladesh violence

হিংসার নিন্দা ইউনুস সরকারের, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। হাদির মৃত্যুর পর, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস শনিবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। 
খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডুমুরিয়া উপজেলার শলুয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলন (৪৫) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হন। গতকাল রাতে ডুমুরিয়া উপজেলার আড়ংঘাটা ইউনিয়নের শলুয়া বাজার এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে জানিয়েছেন আড়ংঘাটা থানার ওসি শাহজাহান আহমেদ।
হাদিকে হত্যার বিরোধিতার নামে বৃহস্পতিবার রাত থেকে তাণ্ডব শুরু করেছে একদল বিক্ষোভকারী। শুক্রবার বিবৃতি জারি করেছে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রসে সচিব শফিকুল আলম বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘ময়মনসিংহে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুনের ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। নতুন বাংলাদেশে এই ধরনের প্রতিহিংসায় কোনও স্থান নেই। এই নৃশংস অপরাধের সাথে জড়িত যে কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না।" 
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস শচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন যে সরকার হিংসা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অগ্নিসংযোগ এবং জীবন ও সম্পত্তি ধ্বংসের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
এদিন পুলিশ ঊর্ধ্বতন আধিকারিক জানিয়েছেন যে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা টেলিভিশনে ভাষণে হাদির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করার পর বাংলাদেশে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। 
সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে  বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। এদিন ঢাকার অদুরে গাজীপুরেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখা গেছে। সেখানে সড়ক অবরোধ করে  হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। সিলেটেও হয় বিক্ষোভ সমাবেশ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যে-কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা, কারওয়ান বাজার, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সংলগ্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবির টহল ও অবস্থান জোরদার করা হয়েছে। 
এদিন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের বাইরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের আধিকারিক সহ চারজন আহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় ভারতীয় মিশনের বাইরে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে পাথর ছুঁড়ে এবং অফিস চত্বরে ভাঙচুর চালায়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ জানিয়েছেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করেছে।
বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিট নাগাদ হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। আততায়ীদের গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন হাদি। তাঁর মৃত্যুতে তাঁর পরিবার এবং সমর্থকদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে মার্কিন দূতাবাস।
স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৩২ ধানমণ্ডির এই বাড়িই ভেঙেছিল উগ্র ইসলামিক মৌলবাদী মদতে চলা বিভিন্ন অংশ। বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো পত্রিকার অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর, দুটি সংবাদপত্রই শুক্রবার প্রকাশ হয়নি। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডও শুক্রবার প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 
বিক্ষোভকারীদের হামলায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আটকা পড়েছিলেন এবং পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশে রাতভর চলা বিক্ষোভের জেরে  সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তী সরকার একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছে। বৈঠক শুক্রবার রাতেও চলছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলমও রয়েছেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা। তাঁর পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। মহম্মদ ইউনুসের বাসভবনের সামনে অবস্থানের হুমকি দিয়েছে ঢাকার শাহবাগে অবস্থানরত ‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’।
হাদির সংগঠন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ বাংলাদেশের জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছে। একটি ফেসবুক পোস্টে সংগঠনটি বলেছে, "বাংলাদেশের জনগণকে যেকোনো হিংসা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। 
ওসমান হাদির মৃত্যুর পর হিংসার কারণে বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য পরামর্শ জারি করেছে হাইকমিশন। যতটা সম্ভব বাড়ি থেকে কম বের হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। এর পাশাপাশি, জরুরি পরিস্থিতিতে, তাদের বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং সহকারী হাই কমিশনের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। 
ওসমান হাদীর মৃত্যুর পর রাজশাহীতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে স্থানীয় আওয়ামি লিগের অফিস বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা বুলডোজার নিয়ে আওয়ামী লীগের কুমারপাড়া অফিসে পৌঁছায় এবং ভবন ভাঙতে শুরু করে। হাদির মৃত্যুর ঘটনায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। 
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ’নাগরিক সমাজ’৷ প্রতিবাদ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে৷ শুক্রবার ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর অফিসে এবং ছায়ানট ভবনের সামনে হামলার নিন্দা জানান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। 
হাদির মরদেহ বহনকারী বিমানটি শুক্রবার সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার কফিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হয়।

Comments :0

Login to leave a comment