লাদাখে যা চলছে তা অমানবিক। ওয়াঙচুককে কেন যোধপুর জেলে পাঠানো হলো কেন? প্রধানমন্ত্রীকে বলব, লাঠি দিয়ে বা দমন দিয়ে পরিস্থিতি সামলানো যায় না। বরং আগুনে জ্বালানি দেওয়া হয়। সদর্থক আলোচনাই সমাধানের পথ।
লাদাখে পূর্ণ রাজ্যের স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলনের সামনের সারির নেতা সোনম ওয়াঙচুককে গ্রেপ্তারির নিন্দায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইউসুফ তারিগামি।
জম্মু ও কাশ্মীরে এই বিধায়ক বলেছেন,
জম্মু ও কাশ্মীরে যা হচ্ছে বা লাদাখে আজ হচ্ছে তার শুরু ২০১৯’র ৫ আগস্টের আইন থেকে। জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন ওই দিন পেশ হয়, খারিজ হয় ৩৭০ ধারা। পুনর্গঠনের নামে একসঙ্গে মিলে নিজেদের চলার পথ ঠিক করার প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীর বা লাদাখের মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়ে পূর্ণরাজ্যকে ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়েছে। ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অথচ রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল। বেহাল অবস্থা রোজগারের। জম্মু হোক বা কাশ্মীর বা লাদাখ, কমবয়সীরা কাজ পাচ্ছে না। রোজগার নেই। জম্মুতে ফসল নষ্ট হয়েছে কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। কাশ্মীরের আপেলচাষিদের সঙ্কট বেড়েছে।
লাদাখে পূর্ণরাজ্যের দাবিতে দীর্ঘদিন চলছে আন্দোলন। লেহ অ্যাপেকস্ কাউন্সিলের আহ্বানে চলছিল অনশন। কেন্দ্রের আলোচনা প্রক্রিয়ায় দাবি মেনে নেওয়ার বার্তা নেই। অক্টোবরের ৬ তারিখ কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক ঘিরেও দেখা গিয়েছে সংশয়। এই অবস্থায় গত মঙ্গলবার তীব্র বিক্ষোভ হয় লাদাখের রাজধানী লেহতে। তার দায় ওয়াঙচুকের গাড়ে চাপিয়ে তাঁকে বন্দি করে যোধপুর জেলে পাঠানো হয়েছে। টানা পাঁচদিন লেহতে কারফিউ চলছে।
সরকারি স্তর থেকে জানানো হয়েছে গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত রয়েছে। রবিবার স্তানীয় আদালতে কংগ্রেসের দুই কাউন্সিলর সহ চারজন আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। তাঁদের নামে এফআইআর দায়ের করেছে প্রশাসন।
আদালত তাঁদের পুলিশ হেপাজতে পাঠালেও জেরার সময় আইনজীবীকে থাকার আবেদন মেনে নিয়েছে। বার অ্যাসোসিয়েশন আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তারির বিপক্ষে সওয়াল চালাচ্ছে। এদিন কংগ্রেস নেতা লাদাখের মানুষ এবং তাঁদের সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের জন্য দায়ী করেছেন আরএসএস-বিজেপি’কে।
এদিকে তারিগামি বলেছেন, ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি তার সেনা বা পুলিশ নয়, সবচেয়ে বড় শক্তি বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ধারণা। ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি বা পৃথক অঞ্চল নিয়েই ভারত। একসঙ্গে সাধারণতন্ত্র গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব অংশ। কেন্দ্রের সরকার তাকে মর্যাদা দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরেও সেই বৈশিষ্ট্য। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ মিলে একটি রাজ্য থাকার সময় বিভিন্নতা সত্ত্বেও একসঙ্গে চলার চিন্তাই প্রাধান্য পেয়েছে। বহু চড়াই উৎরাই সত্ত্বেও আমরা এগতে পেরেছি। কিন্তু কেন্দ্রের পুনর্গঠন আইন জম্মু বা কাশ্মীর বা লাদাখকে না জানিয়ে, এই অঞ্চলের কারও থেকে জানতে না চেয়ে, একতরফা জারি হয়েছে। রাজ্যের মর্যাদা খারিজ করে দু’টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়া হয়েছে। আমাদের আলাদা নজরে দেখা হলো। মনে করা হলো আমরা নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা পালন করতে অক্ষম। সিদ্ধান্ত যা হবে কেন্দ্রের। স্থানীয় মানুষের হক থাকবে না।
তারিগামি বলেছেন, আমরা সব সময়েই চেয়েছি দেশের মূলস্রোতের সঙ্গে যুক্ত হতে। সেই প্রক্রিয়ার উলটো পথে চলে আমাদের এক্তিয়ার কেড়ে নেওয়া হলো।
জম্মুতে ৪৩ শতাংশ জনসংখ্যা, বিধানসভায় আসনও ৪৩ শতাংশ ছিল। কাশ্মীরে ৫৫ শতাংশ জনসংখ্যা, বিধানসভায় আসন ৫০ শতাংশ। লাদাখে জনসংখ্যা রাজ্যের ২ শতাংশ, কিন্তু বিধানসভায় আসন ৪ শতাংশ। অথচ ভুল প্রচার করা হলো যে কোনও কোনও অংশের প্রতিনিধিত্ব কম। প্রতিটি অংশের জনতার অধিকার সমান, এটি মনে রাখতে হবে। এই ভাবনাকে আঘাত করা হয়েছে কেন্দ্রের আইনে।
তিনি বলেছেন, লেহতে যা হচ্ছে তা নিন্দাজনক। জবরদস্তির এই রাস্তা সমাধান দেবে না। এই লড়াই কেবল লাদাখের নয়, জম্মু এবং কাশ্মীরের মানুষেরও।
Tarigami Ladakh
লাদাখে দমন অমানবিক, সমস্যার মূলে কেন্দ্রের আইন, বললেন তারিগামি
×
Comments :0