এশিয়া কাপ জুড়ে ভারতের দাপটের মূল কারিগর দু’জন। অভিষেক শর্মা ও কুলদীপ যাদব। বিপক্ষের কোনও রকম পরিকল্পনাই কাজ করেনি এদের বিপক্ষে। ফাইনালে অভিষেক ব্যর্থ হলেও, পুরো প্রতিযোগিতায় ৩১৪ রান করেছেন, স্ট্রাইক রেট দুশো। ভারতীয় দলের একমাত্র ধারাবাহিক ক্রিকেটার কুলদীপ। ফাইনালেও তাঁর ঘূর্ণি ভারতকে ম্যাচে ফেরায়। ম্যাচে জয়ের পর কুলদীপ বলেন, ‘অবিশ্বাস্য তিলক। ওর ইনিংসই আমাদের ম্যাচ জেতাল।’ নিজের বোলিং নিয়ে বললেন, ‘আমরা জানতাম যদি বেশ কিছু উইকেট তুলে নিই তাহলে ওদের নতুন ব্যাটাররা রানের গতি বজায় রাখতে সমস্যায় পড়বে। আমি প্রথম ওভারে যখন বল করতে আসি তখন চেষ্টা করেছিলাম পাকিস্তান ব্যাটারদের আউট করার। আমাদের সাপোর্ট স্টাফ হরি, পাকিস্তান ব্যাটারদের কোন লাইন লেংথে বল করলে আউট করা যাবে, তা আমার মোবাইলে স্ক্রিনশট পাঠিয়ে দেয়। ওর পরামর্শে আমি উপকৃত হই। হরির কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
গত বিশ্বকাপ ফাইনালের পর প্রায় এক বছর দলের বাইরে ছিলেন কুলদীপ। ফিরে এসেই তিনি ভেল্কি দেখিয়েছেন বল হাতে। এশিয়া কাপে ১৭টি উইকেট নিয়েছেন তিনি এবার। মাত্র ৯.২৯ গড়ে কুলদীপের স্ট্রাইকরেট ৮.৮২। তিনি দু’বার ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন। ফাইনালেও দেখা গেল কুলদীপ-ম্যাজিক। প্রথম ২ ওভারে ২৩ রান দিলেন। শেষ ২ ওভারে ৭ রানে ৪ উইকেট। পাকিস্তান ১২.৪ ওভারে ১১৩/১ থেকে ১৯.১ ওভারে ১৪৬ অল আউট। ব্যাটারকে বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি বৈচিত্র পূর্ণ বল করেছেন। ৮টি উইকেট এসেছেন এই সব বলে। তাঁর প্রধান অস্ত্র তাঁকে এনে দিয়েছে আরও ৯টি উইকেট। ফাজাউল্লা ফারুকি ও অর্শদীপ সিংয়ের সঙ্গে এখন এক আসনে বসেছেন তিনি। কোনও টি-২০ প্রতিযোগিতায় পূর্ণ সদস্য দেশ থেকে সর্বাধিক উইকেট। ফারুখি ও অর্শদীপ দু’জনেই ১৭টি করে উইকেট নিয়েছেন। দু’জনেই ২০২৪ টি-২০ বিশ্বকাপে নিয়েছিলেন।
এই সংস্করণে ৩২টি চার ও ১৯টি ছয় মেরেছেন অভিষেক। ফাইনালে তাঁর একমাত্র চারটি ছিল দর্শনীয়। তাঁর খেলার ধরন ব্যাখ্যা করতে হিমশিম খাচ্ছেন বড় বড় বিশেষজ্ঞ। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে, শুরুতেই বিপক্ষকে মনোবল ভেঙে দিয়েছেন অভিষেক। প্রথম খেলায় ১৬ বলে ৩০ করেন আরব আমিরশাহির বিপক্ষে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর সংগ্রহ ছিল ১৩ বলে ৩১। ওমানের বিপক্ষে ১৫ বলে৩৮। লিগের খেলায় কোনও হাফ সেঞ্চুরি ছিল না অভিষেকের। সুপার ফোরে তাঁর ব্যাট আরও ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৯ বলে ৭৪ করেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৭ বলে ৭৫। শেষ ম্যাচে শ্রীল্কার বিপক্ষে ৩১ বলে ৬১।
প্রথম থেকেই বিপক্ষের বোলারদের আক্রমণ করেন অভিষেক। ফলে পাওয়ার প্লে’তে ভারতের রান অনেকটাই এগিয়ে থাকে। পরবর্তী ব্যাটারদের উপর এই কারণে চাপ অনেক কমে যায়। সুপার ফোরে পাকিস্তান ম্যাচে এর সুবিধা হাতে নাতে পেয়েছে ভারত।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন অভিষেক। তাঁর সতীর্থ পৃথ্বী শাহ অনেক আগেই টেস্ট খেলেন। অভিষেক টেস্টে শতরান করে তিনি হারিয়ে যান। এখন মুম্বাইয়ের রঞ্জি দলে সুযোগ হয় না তাঁর। অপর সতীর্থ শুভমন গিল টেস্ট দলের অধিনায়ক। এশিয়া কাপে তিনি অভিষেকের সঙ্গেই ওপেন করছেন, দলের সহ অধিনায়ক। তুলনামূলকভাবে অনেক পরে দলে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তারপরেও এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর টি-২০ ব্যাটার অভিষেক।
এশিয়া কাপে ভারতের দাপটের ইতিহাস কম পুরানো নয়। এর আগে আটবার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। তবে অভিষেক-কুলদীপের মতো আধিপত্য এর আগে দেখা গিয়েছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে।
Asia Cup 2025 Final
অবিশ্বাস্য তিলক, বললেন কুলদীপ

×
Comments :0