STORY — SUKANTA PAL — JALER TANE — MUKTADHARA — 14 DECEMBER 2025, 3rd YEAR

গল্প — সুকান্ত পাল — জলের টান — মুক্তধারা — ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

নতুনপাতা/মুক্তধারা

STORY  SUKANTA PAL  JALER TANE  MUKTADHARA  14 DECEMBER 2025 3rd YEAR

গল্প  


মুক্তধারা

  ----------------------------- 
   জলের টান
  ----------------------------- 

 

সুকান্ত পাল
      

দাঁড় না বাইলেও হুড়মুড়িয়ে ছোট ডিঙি নৌকোটা এগিয়ে যাচ্ছে জলের স্রোতে। নৌকোর মধ্যে ঠিকঠাক গুছিয়ে রাখা মাছ ধরার জালটা শুধু ছেড়ে দিতে হয় জলের মধ্যে। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর জাল শেষ হয়ে যায়। তারপর জালের শেষ প্রান্তটা বেশ শক্ত করে ধরে জালটাকে ধীরে ধীরে পাড়ের কাছে নিয়ে গিয়ে একটা ছুঁচলো বাঁশ মাটিতে গেঁথে তার সঙ্গে জালটাকে বেঁধে ফেলে ছিদাম মাঝি। যেখান থেকে সে জাল পাতা শুরু করেছিল সেখানেও নদীর পাড়ে একটি বাঁশ মাটিতে গেঁথে জালের প্রথম প্রান্তটাকে বেঁধে রেখে এসেছে। ফলে নদীর জলের তলায় ছিদাম মাঝির জাল একটা অর্ধবৃত্ত তৈরি করে ফেলেছে।

পাড়ে বসে ছিদাম মাঝি বেশ আয়েশ করেই একটা বিড়ি ধরিয়ে টানছে। 
ঘন্টা দুয়েক এখন হাতে সময় আছে। এই সময়টাকে ছিদাম অন্য কাজে লাগায়। নদীর পাড়ের পলি জমিতে নানারকম আপন-জালা শাক,কচু, কোথাও কোথাও কলাগাছ থেকে ঝুলে থাকা মোচাও আছে। ছিদাম খুঁটে খুঁটে শাক- পাতা, কচুর লতি তোলে। দুজনের সংসার এতেই এবং দু চারটে মাছে চলে যায় তরল জলের মতো।

সূর্য ওঠার ঘন্টা খানেক পর জালে টান দিতে হবে। মানুষের মতো মাছেরাও তো ঘুমায়! সূর্য উঠলে ওদের ঘুম ভাঙে। ঘুমন্ত মাছেদের জালে বন্দী করতে ছিদামের মন চায় না। এতে পাপ লেগে যায় শরীরে। এই ধারণাটা ছিদামের নিজস্ব। মাছেরা জলের নিচে রাতে যে ঘুমিয়ে থাকে এরকম কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা আছে কিনা তা অবশ্য ছিদামের জানা নেই। বাপ ঠাকুরদার মুখে শোনা। তাদের মাঝি পাড়ার অনেকেই সাররাত নদীর বুক ফালা ফালা করে চিরে ভোরবেলায় সূর্য ওঠার আগেই নৌকো ভরে মাছ নিয়ে পাড়ে এসে ভিড়ে যায়।

ছিদামের কান্ডকারখানা দেখে অনেকে তাকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে ঠিকই

কিন্তু ছিদাম তার বিশ্বাসে অটল থাকে। সে যা মাছ পায় তা বিক্রি করে দিব্যি তাদের সংসার চলে যায়। এই কাজ করেই তো সে একটা টিনের চালা দেওয়া কোঠা বাড়ি বানিয়েছে। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে।

বলরাম মাঝির জোরাজুরিতে একবার রাতে সে মাছ ধরতে গিয়েছিল। পরের দিনই খবর পেল তার মেয়েটা শ্বশুর বাড়িতে রান্না করার সময় জ্বালানি কাঠের আগুনে পুড়ে মরেছে।

মীন দেবতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এতদিনকার বাপ ঠাকুরদার মুখের কথাটাই যে সত্যি তাতে কোনো ভুল নেই। ছিদাম এর জন্য কোনোদিনই বলরামকে ক্ষমা করতে পারে নি।

ভেবেছিল আর কোনদিন মাছই ধরবে না। বেশ কয়েকদিন পর খবর পেল জামাই আবার বিয়ে করেছে। এই খবর পাবার পরের দিনই বিকেল বেলায় বারান্দার চালের বাঁশে ঝুলিয়ে রাখা জালটা নামিয়ে নিল। তার শরীর জুড়ে জলের তরল টান....

Comments :0

Login to leave a comment