MANDA MITHAI — SOUMAYDIP JANA — BEGUM ROKEYA — NATUNPATA | 14 DECEMBER 2025, 3rd YEAR

মণ্ডা মিঠাই — সৌম্যদীপ জানা‌ — বর্তমান সমাজে মহীয়সী রোকেয়ার প্রয়োজনীয়তা — নতুনপাতা — ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

নতুনপাতা/মুক্তধারা

MANDA MITHAI  SOUMAYDIP JANA  BEGUM ROKEYA  NATUNPATA  14 DECEMBER 2025 3rd YEAR

মণ্ডা মিঠাই

নতুনপাতা

বর্তমান সমাজে মহীয়সী রোকেয়ার প্রয়োজনীয়তা

সৌম্যদীপ জানা‌ 

১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩


   আজ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাস, দেখতে দেখতে একবিংশ শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ পার করে এসেছি আমরা। সমাজে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন, সবার মনে মনে হাজারো অভিলাষ এর বুদবুদ। আজকের দিনে আমরা বলি আমরা আধুনিক প্রজন্ম, আমরা Gen-Z। আমরা নাকি আধুনিকতার শীর্ষস্থরে উঠে গিয়েছি এই কয়েক বছরে। কিন্তু আজ থেকে ১৪৬ বছর আগে অবিভক্ত বাংলার রংপুর জেলায় এক মহীয়সী নারীর জন্ম হয়েছিল যিনি আজকের এই তথাকথিত আধুনিকতার ভাবনা ভেবেছিলেন কুসংস্কার আচ্ছন্ন উনবিংশ শতকের শেষের সময়। সেই মহীয়সী নারীর নাম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ৯ই ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলার রংপুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বেগম রোকেয়া। তাঁর পিতা সম্ভ্রান্ত জমিদার জাহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলি হায়দার ছিলেন একজন রক্ষণশীল কঠোর পুরুষ। নিচের তিন ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করলেও নিজের তিন মেয়েকে কখনোই স্বাধীনতার আলো পর্যন্ত দেখতে দেননি। সমস্ত রক্ষণশীল পরিবারের যেমন রীতি সেই রীতিতে বড় হচ্ছিলেন ছোট্ট রোকেয়া, কিন্তু বয়স যত বাড়তে থাকে ততই তার মধ্যে ফুটে উঠতে থাকে আগ্রহ এবং স্বাধীনতার চেতনা। দাদাদের সাহায্যে ছোট বয়সেই তার অক্ষরজ্ঞান হয়। কিন্তু সেই কথা তাকে পরিবারের বাকি সদস্যদের কাছ থেকে গোপন করতে হয় , কারণ তৎকালীন মুসলিম সমাজে মেয়েদের শিক্ষার কোনরূপ অধিকার ছিল না। যাইহোক ১৮ বছর বয়সে তার সঙ্গে ভাগলপুরের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট সাখাওয়াদ হোসেনের বিবাহ হয়। তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত পণ্ডিত ও আধুনিক পুরুষ, বিবাহের পর থেকেই রোকেয়ার সকল প্রকার শিক্ষার দায়িত্ব নেন। অল্প দিনের মধ্যেই রোকেয়া হয়ে ওঠেন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সাবলীল। শুরু করেন নতুন করে জগৎটাকে চেনা এবং মানুষের কথা বোঝার যাত্রা। কয়েকদিন পর তার স্বামীর মৃত্যু হলে তিনি নারীশিক্ষার প্রসার ও নারীদের অগ্রাধিকারের জন্য ভাগলপুরে মাত্র পাঁচ জন ছাত্রীকে নিয়ে শুরু করেন সাখাওয়াত বিদ্যালয়। যদিও সমাজে চাপে ও অর্থাভাবে বিদ্যালয়টি কিছুদিন পরে বন্ধ হয়ে যায়, পরে তিনি কলকাতায় ফিরে এসে ইংরেজ সরকারের কাছে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আপিল করেন।

তৎকালীন ইংরেজ সরকার নির্দেশ দেন যে স্কুলের নাম যদি তৎকালীন বড়লাটের নামে রাখা হয় তবেই তারা বিদ্যালয়ের জন্য অনুদান ও জমি দান করবেন কিন্তু তার প্রকৃত ইচ্ছা ছিল তার পথনির্দেশক স্বামী সাখাওয়াত হোসেনের নামে একটি অমর স্মৃতিচিহ্ন রেখে যাওয়া। তাই তিনি সমাজ ও ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েই প্রতিষ্ঠা করেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয় , যা বর্তমানে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বালিকা বিদ্যালয়।
শুধু সমাজ সংস্কারক বা নারী শিক্ষার প্রসারক হিসেবেই রোকেয়া যে বিখ্যাত তাই নয়, আধুনিক সাহিত্যচর্চা ও নারীদের অগ্রাধিকার বিষয়টি তিনি সেই উনবিংশ শতকের শেষ ও বিংশ শতকের শুরুতে যেভাবে কল্পনা করেছিলেন তা বর্তমান দিনের আধুনিক সমাজের থেকে অনেকাংশেই এগিয়ে ছিল। তার লেখা সুলতানার স্বপ্ন এবং মতিচুরের মতো বইয়ে তিনি বদ্ধ জীবন থেকে মেয়েদের মুক্তি ও তাদের আত্মনির্ভর হওয়ার প্রবল বাসনার কথা লেখেন যা তৎকালীন বাঙালি নারী সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বইগুলির‌ প্রতিটি অক্ষর বারবার মনে করিয়ে দিত দেশের ভিত্তি বা স্তম্ভ হল নারী শিক্ষা ও নারীদের উন্নতি। তিনি বলেন যে, যদি নারী উন্নত না হয় তবে দেশের উন্নতির আশা করা উচিত নয়! তিনি আরো বলেন যে যেটুকু সময়  নারী তার স্বামীর গৃহে ঘরকন্যার কাজে ব্যয় করেন সেই সময় তিনি যদি আত্মনির্ভর হতে ব্যয় করতেন তাহলে দেশের আর্থিক অবনতি অনেকাংশেই প্রশমিত হতো। যদিও তৎকালীন সমাজের সবাই যে তাঁকে খুব ভালো চোখে দেখতো তাও নয় অনেকবারই তাকে নানা বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। ‌ তবুও তিনি কখনো নারীদের অগ্রাধিকার থেকে এক পা ও সরে আসেননি। এমনকি তার মৃত্যুর পরে তার সমাধিক্ষেত্র তার জন্ম ভিটা বা তার স্বামীর ভাগলপুরের গৃহে হয় নি।‌ তাঁর সমাধি ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করা হয় এখনকার পানিহাটি গার্লস স্কুল এর প্রাঙ্গণে যেখানে আজো রয়েছে রোকেয়ার  স্মৃতিস্তম্ভ। এই মহীয়সীর মৃত্যুর পরেও অনেকে তার অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে এদেশে নারী শিক্ষার প্রসারে আরো উৎসাহিত হয়ে ওঠন। রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের পরবর্তী যুগে নারী শিক্ষার প্রসারক হিসেবে এই মহীয়সী নারী আমাদের দেশের এক অমূল্য রত্ন বিশেষ ‌।
কিন্তু আজকের দিনে এটার কথা আসছে কেন তা আমরা কখনো ভেবে দেখেছি কী? 
এদিক-ওদিক দু একটা স্মরণসভা বা আলোচনা পর্বের মধ্যে সীমিত থেকে যায় এই মহীয়সীর জীবনের সংগ্রাম।
কিন্তু আজকের দিনে  তো আমরা বুক ফুলিয়ে বলি যে আমাদের দেশে কুসংস্কার নেই , আমরা উন্নত , আধুনিক আমরা কোন সংস্কারকে প্রশ্রয় দেই না, কিন্তু আজও   এদেশেও হাজার হাজার নারীকে অপমানিত হতে হয়, লাঞ্ছিত হতে হয় এবং শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত সহ্য করতে হয়। যখন কোন ত্রয়োদশী বালিকা তার মনের কথা এক সাদা চিরকুটের উপর লেখে তখন তাতে তার স্বপ্নের পরিবর্তে এটা কেন লেখা থাকবে যে সে কেন মেয়ে হয়ে জন্মালো? এই নরক তো রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন চাননি, তিনি তো তাঁর লেখনীতে বলেছিলেন যুদ্ধহীন, নিগ্রহহীন এক অনন্ত স্বর্গীয় পৃথিবীর কথা। তবুও তার লেখনীর কথা কি আমরা মনে রেখেছি! আজ কটা বইয়ের দোকানে সুলতানার স্বপ্ন বা মতিচুর খুঁজে পাওয়া যাবে?
হে মহীয়সী আজ এই লাঞ্ছিত অর্ধ মৃত সমাজে তোমার খুব দরকার। তোমার মত মানবিক মাতৃ তুল্য নারী পারে আজকের সমাজে নারীবিদ্বেষ ও নারী নিরাপত্তাকে পুন প্রতিষ্ঠা করতে। তোমার ১৪৬ তম জন্ম বছরে আমাদের সকলের হৃদয়ের অন্তস্থলে তোমাকে সহস্র প্রণাম জানাই এবং আশা করি তোমার অনুপ্রেরণায় ভবিষ্যতে এই অন্ধকার সমাজে তোমারে হৃদয়ে লিখনের সুর কিরণে সকল অন্ধকার দূর হবে।

নবম শ্রেণী 
কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা 
ডাঙ্গাপাড়া, রহড়া

Comments :0

Login to leave a comment