গল্প
নতুনপাতা
------------------------
সোয়েটার
------------------------
সৌরীশ মিশ্র
"তিন্নি, দ্যাখ্ কে এসছে?" মেয়ের ঘরে ঢুকে কথাকটা মেয়েকে বললেন তিন্নির মা কৃষ্ণাদেবী।
তিন্নি বসেছিল বিছানার উপর। যেদিকে ঐ ঘরে ঢোকার দরজা সেইদিকে পিছন ফিরে। "কে মা?" বলতে বলতেই সে ঘাড় ঘুরিয়ে যেই না দরজার দিকে তাকাল, ওর মনটাই খুশিতে ভরে উঠল পুরো, দেখে যে, ঘরে ওর মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে ওর স্কুলের বেস্ট ফ্রেন্ড শীর্ষা।
"আরে তুই! আয় আয়।" প্রিয় বন্ধুকে দেখে বলে ওঠে উচ্ছ্বসিত তিন্নি।
"ইলা ম্যামের নোটসগুলো নিতে এলাম।" বলে শীর্ষা।
"ভালো করেছিস, আয় বোস।" বিছানায় ওর পাশটায় বসতে বন্ধুকে ইশারা করে তিন্নি।
"তোরা গল্প কর্, আমি তোদের জন্য একটু খাবার করে নিয়ে আসি।" বলেন কৃষ্ণাদেবী।
"মা, শীর্ষার কিন্তু নুডলস্ ফেভারিট।" বন্ধুর দিকে একটু দুষ্টু হেসে বলে তিন্নি।
"তোকে আর বেশি পাকামি করতে হবে না।" মেয়ের উপর একটু ছদ্মরাগ দেখান কৃষ্ণাদেবী। তারপর ঠোঁটের কোনে একটু হেসে বলেন, "ও কি আজ প্রথমবার আসছে নাকি আমাদের বাড়ি। ও কি ভালোবাসে, যেমন তুই জানিস, আমিও জানি। আমি নুডলস-ই করতাম। তোরা গল্প কর্।" কথাকটা বলে ঘর থেকে চলে গেলেন কৃষ্ণাদেবী।
শীর্ষা এসে বসে তিন্নির পাশটাতে। এইবার ওর চোখ পড়ে, তিন্নি সোয়েটার বুনছে। "অজপা, তুই সোয়েটার বুনতে পারিস!"
"হ্যাঁ তো।"
"কার কাছে শিখলি?"
"ঠাম্মি।"
"ও।" একটু থামে শীর্ষা, তারপর ফের বলে ওঠে, "ছেলেদের সোয়েটার বানাচ্ছিস, না?"
"হ্যাঁ রে।"
"কার জন্য রে? কাকুর, না তোর দাদুর জন্যে?"
"বাবার জন্যেও নয়, দাদুর জন্যেও নয়। দাদুর এক ছোটবেলার বন্ধুর জন্যে। নাম, শিবতোষ সান্যাল। আমার শিবতোষ দাদু। মাঝেমধ্যে আসেন আমাদের বাড়ি। দাদুও যায়। কাছেই থাকেন। কেউ নেই জানিস ওনার। দিদিমা ছিলেন। কোভিডের সময় তিনিও মারা গেছেন। লাস্ট টাইম যখন আমাদের বাড়ি এলেন, এই কিছুদিন আগে, তখন সবে শীতটা পড়তে শুরু করেছে, হঠাৎ খেয়াল করলাম, যে সোয়েটারটা উনি পড়ে আছেন সেটা ফুটো ফুটো হয়ে গেছে নানান জায়গায়। এতো খারাপ লাগল না, তাই..." এইটুকু বলেই চুপ করে যায় তিন্নি। শীর্ষা ভালোই জানে তার বন্ধুর ভীষণই নরম মন। তার বন্ধুর চোখের কোন দুটোয় জল চিকচিক করছে যে, তাও চোখ এড়ায় না তার। "খুব ভালো করছিস অজপা, খুব ভালো।" না বলে পারে না শীর্ষা। একটু থামে সে। কয়েকক্ষণ কি যেন ভাবে, তারপর ফের বলে ওঠে, "সেইদিন আমাদের ইংলিশ ক্লাসে রিতা ম্যাম 'এ হার্ট অফ গোল্ড' বলে একটা ইডিয়ম বলেছিলেন, মনে আছে তোর? "
"হ্যাঁ মনে আছে। তাতে কি?"
"তোর মনটাও ঠিক ঐরকমই, বুঝলি?"
বন্ধুর কথা শুনে লজ্জা পেয়ে যায় তিন্নি। সে মাথা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, "ধ্যুস্।"
---------------------------
Comments :0