একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভোট সামগ্রিকতার বিচারে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি যদি হয় দেশের রাজধানী খোদ দিল্লিতে এবং তার নাম যদি হয় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে সম্ভবত এড়িয়ে যাওয়া সমীচীন হবে না। বস্তুতপক্ষে জেএনইউ’র ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মতো দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তো বটেই সাধারণের মধ্যেও বিস্তর কৌতূহল থাকে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই জেএনইউ-তে বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিরই রমরমা। বরাবর এখানে জিতে আসছে এসএফআই সহ বাম ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীরা। দক্ষিণপন্থী কোনও ছাত্র সংগঠন কোনোদিন জেএনইউ-তে দাঁত ফোটাতে পারেনি। হালে মোদী জমানায় সরকারি প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করে আরএসএস’র সংগঠন এবিভিপি’র পায়ের নিচের জমি শক্ত করার বেপরোয়া প্রয়াস চলছে। পাশাপাশি ব্যবহৃত হচ্ছে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তি। রীতিমতো সশস্ত্র দুর্বৃত্তরাজ কায়েমের চেষ্টা চলছে ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত চিন্তার ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ আজ কার্যত বন্দিশালায় আটক। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের আঙিনায় ধর্মান্ধতা আর কল্পিত ইতিহাসের চাষ চলছে কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনায়।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে এককালে কংগ্রেসের ছত্র সংগঠন এনএসইউআই’র দাপট থাকলেও বামপন্থীদের প্রভাব একেবারে কম ছিল না। পাশাপাশি বেড়েছিল মোদী জমানায় এবিভিপি’র দাপট। বিগত এক দশক ধরে এই দুই সংগঠনের দাপটে কোণঠাসা অবস্থা ছিল বামপন্থীদের। এবিভিপি এবং এনএসইউআই’র দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থাপনায় বামপন্থীদের অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলার জোরালো প্রয়াস চলে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতিতে বামপন্থাকে যে অপ্রাসঙ্গিক করা যায় না সেটা আরও একবার নতুন করে স্পষ্ট হয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সমাপ্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচনে। ছাত্র সংসদের চারটি প্রধান পদের কোনোটিতেই বাম ছাত্রজোট জয় পায়নি ঠিকই কিন্তু তৃতীয় বিকল্প হিসাবে প্রবলভাবে উঠে এসেছে। গত তিন বছরের মধ্যে প্রতিবারই আগের থেকে অনেক বেশি ছাত্র-ছাত্রীদের ভোট পেয়েছে বামজোট প্রার্থীরা।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপি এবং এনএসইউআই অর্থ ও পেশিশক্তির দাপটে ছাত্র রাজনীতির যে ঘরানা চালু করেছে তাতে ক্ষমতা দখল ও আধিপত্য ছিল শেষ কথা। এসএফআই সহ বামছাত্র সংগঠনের বাইরে শিক্ষা ও ছাত্র স্বার্থে আন্দোলনের বিকল্প ঘরানা হাজির করে। তাতে আকৃষ্ট হয় ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই আগের থেকে অনেক বেশি ছাত্র-ছাত্রী ভোটে অংশ নেয় এবং বামপ্রার্থীদের পক্ষে ভোট উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের সব জায়গা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়তে আসে। উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে আসা সাধারণ সম্পাদক পদে এসএফআই প্রার্থী সাড়ে নয় হাজারের বেশি ভোট পেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজে এককভাবেই সংসদ দখল করেছে এসএফআই। অন্য বেশ কয়েকটি কলেজেও এক বা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে জয়ী হয়েছে।
Editorial
চমকপ্রদ ফল

×
Comments :0