তন্ময় ভট্টাচার্য
কলকাতায় ৮ জন, বাঁকুড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায় আরও ২ জন— সর্বমোট ১০ জন সহনাগরিকের মৃত্যুবেদনা নিয়ে উমার আগমনের অপেক্ষায় দেবীপক্ষের দ্বিতীয়া তিথির বাংলা। শহর কলকাতা, মফস্বল এমনকি সমস্ত গঞ্জ এলাকাও সেজে উঠেছে আলোর রোশনাইয়ে। আর সেই আলো আসবার পথ বিভ্রাটেই বা তার ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা ক্ষেত্রের অক্ষমতা, নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতায় এতগুলো জীবনের এহেন করুণ পরিণতি। মেঘ ভাঙা বৃষ্টি কথাটা পাহাড়ি এলাকায় যতটা অভিজ্ঞতালদ্ধ, শহর কলকাতায় তা নয়।
২২ সেপ্টেম্বর রাতের বৃষ্টির যে হিসাব আবহাওয়া দপ্তর দিয়েছে তাতে বৃহত্তর কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাপ সবচাইতে কম ছিল দক্ষিণ দমদমে— ৬১ মিমি এবং সর্বোচ্চ বালিগঞ্জে— ২৯৫ মিমি। যে ২০টি জায়গার বৃষ্টিপাতের হিসাব তাতে আছে তার গড় করলে দাঁড়ায় ২০২.৬ মিলিমিটার। স্বাভাবিকের থেকে নিশ্চিতভাবেই তা অনেকটা বেশি কিন্তু শহরবাসীর কাছে পূর্ব অভিজ্ঞতা বিহীন নয়, বিশেষত গত ৫০ বছরের নিরিখে। কলকাতা শহরে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হলো ৩৬৯.৬ মিলিমিটার, যা হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। তবে সাম্প্রতিক সময়েও কলকাতায় রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেমন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একদিনে ২৫১.৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছিল, যা গত ৩৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এক দিনের বৃষ্টিপাত ছিল। ফলে গতকালের ২০২.৬ মিলিমিটার গড় বৃষ্টিপাতের চাইতে বেশি বৃষ্টির অভিজ্ঞতা এই শহরবাসীর রয়েছে।
এখন এই মৌসুমী প্রকৃতির জলবায়ু কখন কি রূপ নিতে পারে. তার ফলে বৃষ্টিপাত কি মাত্রায় পৌঁছাতে পারে এই সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা ছিলই। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের আগাম পূর্বাভাস গত কয়েকদিন ধরে টেলিভিশন আর খবরের কাগজের মাধ্যমে আমরা সকলেই জেনেছি। আশা করি আপনিও জেনেছেন। বিশ্বাস করেননি, নাকি টাকা গোনা ছাড়া আর কোনও কাজ ওই হাত করতে পারেনা বলে তা গুটিয়ে বসেছিলেন! শেষ বাজেট অধিবেশনে নগর পরিকল্পনা নিয়ে বক্তৃতা করার সময় ২০২৩ সালে প্রকাশিত ইন্টার গভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের ষষ্ঠ রিপোর্টটিকে আদৌ বিবেচনা বা গ্রাহ্যর মধ্যে এনেছিলেন কি? ২০২৩ এর ২০ মার্চ এই মূল্যায়ন প্রকাশিত হয়। ইন্টার লাকেন সুইজেরল্যান্ড-এ ১৩-১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত। এই প্যানেলের ৫৮তম অধিবেশনে যে সতর্কবার্তা উচ্চারিত হয়েছিল তা বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়াকে ভিত্তি করে উষ্ণায়ন এবং তার পরিপেক্ষিতে বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য যে বিপজ্জনক মাত্রা নিতে পারে সে সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। ২০২৪ সালে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ২৯তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে তার পুনরুচ্চারিত হয়। যেখানে আমাদের করের টাকায় কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার সঙ্গীসাথি সহ যোগ দিয়েছিলেন। অবশ্য কি বুঝেছিলেন. কি শিখেছিলেন আর মহানাগরিক হিসাবে আপনাকেই বা কী রিপোর্ট করেছিলেন, তা আমরা কিছুই জানি না। যদিও লন্ডনে উল্টো হাঁটা দেখার পরে বুঝেছি এই রাজ্য উল্টো পথে চলার অবাধ লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়ে গেছে।
খবর রাখাটা আমাদের একটা বদ অভ্যাস জানেন। সেই কবে কাগজে পড়েছিলাম জলবায়ু সহনশীল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনশীল নিকাশি ব্যবস্থায় গোটা শহরকে মুড়ে দেবার জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে ২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছিলো কলকাতা কর্পোরেশন। বিধানসভায় এবং কলকাতা কর্পোরেশন এবং সাংবাদিক সম্মেলনে আপনি কলকাতাবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন। আমরা জানি এর আগেও দূষণ কমাতে বেশ বড় অঙ্কের ক্লাইমেট মিটিগেশন ফান্ড আপনার কর্পোরেশন পেয়েছে। সেগুলো কোথায় গেল?
শেষ কথা তড়িদাহত হয়ে মারা গেলেন এতগুলো মানুষ, অবশ্যই দায় বিদ্যুৎ দপ্তরের। এবং আরও স্পষ্ট করে বললে সিইএসসি’র। আরপি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপের ‘হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড’ প্রায় ২৮১ কোটি টাকা এবং ‘ধারিওয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’ প্রায় ৯০ কোটি টাকা আপনার দল তৃণমূল কংগ্রেসকে ইলেকটোরাল বন্ডে দিয়েছিল। ক্ষতিপূরণটা তাঁরা দেবেন, নাকি আপনার দল দেবেন সেটা একমেবাদ্বিতীয়মাকে জিজ্ঞেস করে দ্রুত রাজ্যেবাসীকে জানিয়ে না দিলে স্যান্ডো গেঞ্জির কাপড় অক্ষুণ্ণ থাকবে কি?
Post Editorial
কলকাতার মহানাগরিকের প্রতি

×
Comments :0