CAA REALITY

সিএএ'১৯ ও বিধি: বাইরে ঝলমল, ভিতরে অনন্ত কুয়াশা

উত্তর সম্পাদকীয়​

অলকেশ দাস

যন্ত্রণা
মানুষের জীবনের যে মৌলিক সমস্যাগুলো তাকে অহরহ যন্ত্রণাবিদ্ধ করছে তাকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য  নতুন যন্ত্রণা তৈরি করা মোদী সরকারের এক পুরানো কৌশল। সি এ এ '১৯ ও তার বিধিসমূহ এক নতুন যন্ত্রণা।
কেন বিধি চালু করছিল না?
প্রথম কথা হচ্ছে বিজেপি সত্যি  নাগরিকত্ব চায় না । ভোট চায়। নাগরিকত্ব নিয়ে ওরা ২০১৯ এর ভোটের প্রচার করলো। মোদি ভোটে জিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ এনে দিলেন।  কিন্তু তারপরে সব ভোঁ ভাঁ। আইন প্রয়োগ করতে গেলে বিধি তৈরি করতে হয় ,রুলস। চার বছর তিন মাস লেগে গেল। আসলে বিজেপি সবচেয়ে ভালো করে জানে যে এই আইনে কারো নাগরিকত্ব হবে না। জালিয়াতি ধরা পড়বে।
কেন এখন বিধি চালু করতে হলো?
সিপিআই(এম)  আদালতে মামলা করল নির্বাচনী বন্ডে, কোন রাজনৈতিক দলকে কে কত টাকা দিয়েছে তা প্রকাশ করতে হবে। শেষ অবধি কোর্টের রায়ে সেই তথ্য দিতে বাধ্য হল স্টেট ব্যাঙ্ক। সেই তথ্য ভোটের দফারফা করে দিতে পারে বুঝেই দৃষ্টি ঘোরাতে বিজেপি নারাজ হাতে সিএএ ২০১৯ এর বিধি প্রকাশ করল।
কিভাবে নাগরিকদের লোভ দেখিয়ে রাষ্ট্রহীন করা হবে- ষড়যন্ত্রের পর্বসমূহ:

পর্ব ১
নাগরিকত্বের প্রথম ফাঁদ সরকারের ডিজিটাল পোর্টাল নাম Indiancitizenshiponline.nic.in । এর লগ ইন করতে হবে নিজের মোবাইল নাম্বার দিয়ে । তারপরে প্রদত্ত ফরম পূরণ এবং ওদের চাওয়া নথিসমূহ আপলোড করা। সম্ভবত: 'হাম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে' আন্দোলনের সাফল্য তাকে কাগজ থেকে ডিজিটালে যেতে বাধ্য করেছে।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোক ডিজিটাল বিষয়ে অভ্যস্ত নন। চলে যাবেন অন্য ব্যক্তি বা এজেন্সির কাছে। আবেদনকারীর তথ্য ব্যক্তিগত থাকবে না। যেহেতু ডিজিটাল পোর্টাল সেহেতু এই তথ্য কোথায় পৌঁছাবে, কিভাবে ব্যবহৃত হবে— সেটাও তার অজানা।
পর্ব ২
নাম ,ঠিকানা, পেশা, শরীরের চিহ্ন আবেদনকারীকে দিতে হবে। নামের বানান, ঠিকানা একটু এদিক-ওদিক হলে তা তার পূর্বের দেওয়া তথ্য যেমন আধার, প্যানকার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করা হলে ,অমিল হলে সর্বনাশ হবে। যেমন আসামে হয়েছিল। তিনি ঝুলে থাকবেন। না ঘরকা, না ঘাটকা। আবেদনকারী  পালটা মামলা করতেই পারেন। বছরের পর বছর ঝুলে থাকবে। সঙ্গে নাগরিকত্ব। 
পর্ব ৩
লিখতে হবে আবেদনকারী কবে বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান বা পাকিস্তান থেকে এদেশে এসেছেন। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যে এসেছেন তার ন'টি নথির যেকোনও একটি তাকে পেশ করতে হবে। তার মানে  যদি বাংলাদেশ থেকে এসে থাকেন তাহলে বাংলাদেশের নথি প্রয়োজন। যেমন পাসপোর্ট, ভিসা, ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ফরেন রেজিস্ট্রেশন অফিসারের স্ট্যাম্প মারা নথি, ওই  দেশে জন্মেছেন তার জন্ম শংসাপত্র, ওই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সার্টিফিকেট, ওই দেশের বাড়ি ভাড়ার রসিদ, বা জমি থাকার কোনও কাগজ, ওই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে ইস্যু করা কোনও কাগজ যাতে তার নাম উল্লেখ থাকবে,  মা, বাবা, দাদু, ঠাকুমা যে ওই দেশের নাগরিক ছিলেন তার কোনও শংসাপত্র।
এদেশের পূর্ববঙ্গীয়, বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ যারা এক বিশেষ পরিস্থিতিতে এদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে তখন কোনও কাগজ নিয়ে আসার মতো পরিবেশ তাদের ছিল না। তাদের কাছে ওদেশের কোনও কাগজ নেই । নতুন করে ওই দেশ থেকে কাগজ আনা যে কত দুরুহ আজকের পরিস্থিতিতে তা অনুমেয়। অনেকের ক্ষেত্রে আবার রাষ্ট্র পরিবর্তন হয়েছে। যে সময় এসেছেন তখন পাকিস্তান ছিল। এখন তা বাংলাদেশে রূপান্তরিত। সেই কাগজ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় তলানিতে।
পর্ব ৪
এদেশে আবেদনকারী যে এসেছেন এবং কবে এসেছেন তার কুড়িটি প্রমাণপত্রের যে কোনও একটি তাকে দাখিল করতে হবে।  কবে  ভারতে এসেছেন বেশিরভাগ লোকের সেই দিনক্ষণ স্মরণে নেই। যেকোনও একটা তারিখ বসিয়ে দেওয়ার পর যদি দেখা যায় সেই সময়ের আগের কোনও এদেশের তথ্য রয়ে গেছে তখন বিড়ম্বনায়  পড়বেন সেই ব্যক্তি।
পর্ব ৫
আবেদনকারী যে হিন্দু ,শিখ, বৌদ্ধ,জৈন, ক্রিশ্চিয়ান, পারসি ধর্মাবলম্বী মানুষ এবং বাংলাদেশ ,পাকিস্তান, আফগানিস্তান  থেকে  এসেছেন তার শংসাপত্র নিয়ে আসতে হবে স্থানীয়  স্বনামধন্য সম্প্রদায়গত সংস্থার থেকে। এই যে স্বনামধন্য সম্প্রদায়গত সংস্থা কারা তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। কেন কোনও সংস্থা এদেশে অন্য দেশ থেকে অনুপ্রবেশের শংসাপত্র কারুকে দেবে? কেন সে অকারণে বিতর্কের মধ্যে ঢুকবে? তাহলে হতেই পারে সঙ্ঘী পরিবারের হিন্দুত্বমূলক সংগঠনগুলোকে এই সুযোগে মানুষের কাছে এগিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা এটা। 'হিন্দু ধর্মাবলম্বী' এই শংসাপত্র দেওয়ার সময় হিন্দুত্বে দীক্ষাকরণের পর্বও হয়তো চলবে।
পর্ব ৬
আবেদনকারীকে দিতে হবে তিনি কোথায় জন্মেছিলেন, কবে জন্মেছিলেন তার বিবরণ। লিখতে হবে  জন্মসূত্রে কোথাকার নাগরিক। এখন কোথাকার নাগরিক হতে চান।  যদি বিবাহিত হন তাহলে কোথায় বিয়ে হয়েছিল, কবে হয়েছিল?  স্ত্রী কোথাকার নাগরিক? বাবার নাম ঠিকানা।  বাবা কোথায় জন্মেছিলেন?  মার নাম ঠিকানা এবং কোথায় তিনি জন্মেছিলেন? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এদেশে জন্ম মৃত্যু নিবন্ধীকরণ আইন হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। কার্যকর হয় ১৯৭০ সালের ১ এপ্রিল থেকে। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতে অর্থাৎ গ্রামীণ এলাকায় জন্ম ও মৃত্যু শংসাপত্র প্রদান শুরু হয় ২০০২ সালের ১ এপ্রিল থেকে। তাহলে তার আগের জন্ম শংসাপত্র  মিলবে কি করে? আসলে লিগাসি লিংকেজ বা উত্তরাধিকার সংযোগ পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেই জন্যেই নিজের, স্ত্রীর, বাবা, মা জন্ম, এমনকি দাদু ,ঠাকুরমার নাগরিকত্বের শংসাপত্রও চাওয়া হয়েছে। আগেই বলা হয়েছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ এক্সক্লুসনারি,বর্জমূলক। অন্তর্ভুক্তিকরণের বিপরীতে। যত পারো বাদ দাও। যা আসামে হয়েছে। মা-বাবা-ঠাকুরদা অবধি পৌঁছে যাওয়ার পিছনে আছে গভীর ষড়যন্ত্র। আসামে হয়েছিল। বিয়ের পরে মেয়েদের পদবি পরিবর্তন হয়। কেন দুটি পদবি-অসংখ্য মানুষ সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে ডাউটফুল হয়ে গিয়েছিলেন।বাবা,মা,দাদু, ঠাকুরমার জন্ম, জন্মস্থান নিয়ে অসঙ্গতি ধরার জন্য মুখিয়ে থাকবে ওরা। প্রথমে ডাউটফুল, তারপর ভোটার লিস্ট থেকে বাদ, তারপর আধার ইত্যাদি সাসপেনশন। মানে ব্যাংক একাউন্ট থেকে পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্ট সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়া। তারপর ঠিকানা ডিটেনশন ক্যাম্পের অন্ধকার কুঠি। ধুসর চোখে,শুন্য বুকে খোলা আকাশের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।
সমগ্র প্রশ্নমালা দেখে বোঝা যাচ্ছে পুরোপুরি এন পি আরের প্রশ্নমালা। অমিত শাহ বলেছিল -'পহেলে সি এ এ হোগা,উসকে বাদ এন পি আর। সবসে অন্ত মে এন আর সি।' এখন বোঝা যাচ্ছে ওগুলো লোক ভুলানো কথা। সি এ এ, এন পি আর,এন আর সি একই সঙ্গে চলছে। জনগণকে রাষ্ট্রহীন করার মহাযজ্ঞ।
পর্ব ৭
আবেদনকারী কোথায় কাজ করেন তা শুধু নয় তার নিয়োগকর্তার ঠিকানাও দিতে হবে। মানে নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয়ের কোনও জায়গা তৈরি হলেই নিয়োগকর্তার কাছে খবর। কাজ, চাকরি যাবে। তার বিরুদ্ধের মামলা সংক্রান্ত নথির তথ্য ওরা নেবে। এরাজ্যে তৃণমূলের বাহুবলীদের আর দলদাস পুলিশের দৌলতে মিথ্যা মামলার ছড়াছড়ি। মামলা ঝুলে থাকলে তাহলে কি নাগরিকত্বও ঝুলে থাকবে?
নাগরিকত্ব আইনের নতুন বিধির সবচেয়ে বড় সংবেদনশীল অংশ যে আবেদনকারীকে জানাতে হচ্ছে যে তিনি বাঙলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের নাগরিক। এতেই শুধু নয় তার নাগরিকত্ব হীনতাকে নিশ্চিত করার জন্য কেন তিনি এদেশের নাগরিক হতে চান তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তাহলে আবেদনকারী জেনে শুনে অন্য দেশের নাগরিকত্ব স্বীকার করে নিচ্ছেন। নিজভূমে পরবাসী হচ্ছেন। এ'দেশের নাগরিকত্ব কোনভাবে অস্বীকৃত হলে সটান অতল খাদের গভীরে। পূর্ব, বর্তমান সব অধিকার এক লহমায় শুন্য হচ্ছে। ভ্রম সংশোধনের সুযোগ নেই। আবেদনকারী এফিডেভিটে লিখে দিয়েছেন -যাহা লিখেছি তাহাই সত্য। 
পর্ব ৮
আবেদনকারীকে তার পরিবারের সকলের বিবরণ দিতে হবে। দিতে হবে তিনি এদেশে কোথায় কোথায় ছিলেন, তার সময়কাল, তার ঠিকানা। নিজের বাড়ি না থাকলে ভাড়া বাড়িতে থাকলে যে সময়কাল উল্লেখ তিনি করছেন তা প্রতিটি গৃহকর্তাকে জানিয়ে দিতে হবে। যদি সেখানে বাড়ির মালিক এবং আবেদনকারীর তথ্যে কোনও নেতিবাচক অসঙ্গতি থাকে তাহলেই বিপদ। পরিবারের সকলের বিবরণ দেওয়া মানে আসলে ফ্যামিলি ট্রি আঁকা হবে। যাকে বলা হয় বংশবৃক্ষ। পুলিশের আই বি'র লোককে দিয়ে খুঁটিয়ে তদন্ত,পরীক্ষা করা হবে। একটু এদিক-ওদিক হলেই নাগরিকত্ব ফসকে যাবে, মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত হবে।
পর্ব ৯
অষ্টম তফসিলে যে ভাষাগুলি অন্তর্ভুক্ত সেই ভাষাগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। জ্ঞান কি ধরনের তা উল্লেখ করা হয়নি। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে ওই ভাষায় বলতে, পড়তে , লিখতে দক্ষ হতে হবে। কিন্তু যদি কেউ নিরক্ষর হয়? 
পর্ব ১০
এইবার এই সব তথ্যগুলো যাচাই করার পালা। প্রথমে জেলা স্তরীয় কমিটি।  জেলা স্তরীয়  কমিটি থেকে এবার তথ্য যাবে এম্পাওয়ারমেন্ট কমিটিতে। সেই কমিটিতে ডাইরেক্টর অব সেন্সাস অপারেশন হচ্ছে প্রধান। কমিটিতে আর থাকবেন আই বি বা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর  লোক। থাকবেন ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার। রাজ্য তথ্য আধিকারিক। পোস্টমাস্টার জেনারেল। রেলের প্রতিনিধি। দুই কমিটিতেই সভায় কোরামের সংখ্যা দুই। যে কোনও খারাপ সিদ্ধান্তই পাশ করিয়ে নেওয়া যাবে। এমপাওয়ারমেন্ট  কমিটিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি পাঁচজন, রাজ্য সরকারের একজন। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূলে আঘাত দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্বর মত সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে এককভাবে এগোতে চাইছেন। মনে রাখতে হবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ১৯-এর বিষয়ে বেশিরভাগ রাজ্য সরকার তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু জেলাস্তরীয় কমিটি বা এম্পাওয়ারমেন্ট কমিটি এখনো গঠন হয়নি। কবে হবে কেউ জানে না। কবে তার কাজ শুরু হবে? সময় চলে যাবে আর আবেদনকারী তার নাগরিকত্ব অন্য দেশের কাছে সঁপে দিয়ে বসে থাকবেন নিজের দেশের নাগরিকত্বের জন্য ! এদিকে বিজেপি, তৃণমূল বড়শিতে নাগরিকত্বের টোপ দিয়ে ভোট গেঁথার অপেক্ষায় থাকবে। ভোটের পরে আবার সব ভুলে যাবে।
সিএএ আর এক রামমন্দির প্রকল্প 
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ এবং তার বিধিতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের লক্ষ্য। কেন তিন মুসলিম সংখ্যাধিক্য দেশ ? কেন কেবলমাত্র ছ'টি ধর্ম? কেন মুসলিম বা তামিল বা রোহিঙ্গা ইত্যাদিরা চাইলেও নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবে না।  হিন্দু রাষ্ট্রের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী প্রবণতার এক রাজনৈতিক প্রকল্প সিএএ ২০১৯।
সংবিধানের উলটো দিকে হাঁটা আইন
সংবিধানে আছে,১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৩ ধারায় আছে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের কথা। শর্তহীন। সিএএ'১৯ এ তা অস্বীকৃত।সিএএ'১৯ অনুযায়ী যে কোনও সময়  ধর্মীয় নিপীড়নের কাগজ সরকার চাইবে। বাংলাদেশের যে হিন্দুরা এদেশে প্রবেশ করেছে তারা কিভাবে বাংলাদেশ সরকারের থেকে মুসলমানদের দ্বারা অত্যাচারের শংসাপত্র যোগাড় করবে? অসম্ভব। তাহলে নাগরিকত্বও অসম্ভব।
যারা এখন বলছে নাগরিকত্ব দিচ্ছি তারাই একসময় নাগরিকত্ব কেড়েছিল
২০০৩ সালেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। এনেছিল বাজপেয়ী -আদবানি। মমতা তখন মন্ত্রিসভায়। আইনে লেখা হলো- যাদের হাতে কোনও বৈধ কাগজ নেই তারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তারা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবে না। (ধারা২(১)বি)।  এক লহমায় কয়েক দশক ধরে এদেশে শিকড় তাদের তাদের ছিন্নমূল করে দেয় তৎকালীন বিজেপি-তৃণমূল সরকার। সেই থেকে এই ২০২৪ অবধি সুদীর্ঘ ২১ বছর উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেনি। এরাই বলছে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা। 
মমতা কতখানি বিশ্বাসযোগ্য ?
আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তৃণমূলকে বাঁচার জন্য সি এ এ'১৯'র উদগাতা বিজেপির সঙ্গে আপস করতেই হবে। তার সাজানো ক্যা,ক্যা-ছি,ছি অঙ্ক করে। মুসলমানের ভোটটা ব্যাগবন্দি করার জন্য। বামের দিকে যাতে না চলে যায় তা রোখার জন্য। মোদী হিন্দু উদ্বাস্তু আর মতুয়াদের টানবেন নাগরিকত্বের জন্য, মমতা মুসলমানদের টানবেন নাগরিকত্ব রক্ষার জন্য। আপাতত পরিকল্পনা এটাই। দ্বিমেরুকরণ। সেই জন্য ভয় দেখাচ্ছেন। আবেদন করলে সরকারি প্রকল্প দেব না। যেমন আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে রাজনৈতিক দল সিএএ’র বিরোধিতা করবে তাদের রেজিস্ট্রেশন  বাতিল  করে দেবেন। পিছনে যে অনেক বড় খেলা। ডিটেক্ট, ডিলিট, ডিপোর্ট। ৪৩ শতাংশ মানুষের কাছে সেই কাগজ নেই যা ওরা চাইছে। সর্বনাশের শেষের শুরু না শুরুর শেষ— মানুষের কাছে সেটাই বোঝাতে হবে।
কাগজ দিয়ে আবেদন করলে কি পার পাওয়া যাবে?
যারা ভাবছে কাগজ দিয়ে আবেদন করলেই নাগরিকত্ব দরজা দিয়ে ঢুকে পড়বে তাদের উদ্দেশ্যে সাবধান বাণী: এভিডেন্স অ্যাক্ট সেকশন ৫০ অনুযায়ী কোনও পাবলিক ডকুমেন্ট যেমন স্কুল সার্টিফিকেট ইত্যাদি আইনগতভাবে পেশ করলে তা প্রথমে গ্রাহ্য করতে হবে। আসামে এনআরসি’র তালিকা থেকে যে ১৯ লক্ষ লোকের নাম বাদ দিয়েছিল তাদের মধ্যে ১৫ লক্ষ লোক বলেছিল আমরা ঠিকমতো আমাদের কাগজ আইনগতভাবে জমা দিয়েছিলাম। আমরা কি ওই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেব?
আমরা তো নাগরিক
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর ২০১৫ এর ২৩ এপ্রিল সংসদে ৪৯২০ নম্বর প্রশ্ন হয়-২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ভোটার তালিকায় কোনও বিদেশির নাম অন্তর্ভুক্ত আছে কি না? সরকার উত্তর দেয়-না। সংবিধানের ৩২৬ নম্বর ধারায় আছে-একুশ বছরের বেশি (পরে তা ১৮ হয় ) বয়সের ভারতীয় নাগরিক ভোটার হিসাবে যোগ্য। উলটো করলে দাঁড়ায় ভোটারও ভারতীয় নাগরিক। ৯৬.৮ কোটি ভোটার দেশে। দেশের মানুষের হাতে ১৩৮ কোটি ৮ লক্ষ আধার। ২০১৯ এ দেশের মানুষের হাতে ৮১ কোটি রেশন কার্ড ছিল। এর বাইরে প্যান কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যা কাউন্ট, পোস্ট অফিস অ্যাকাউন্ট। নাগরিকত্বের অসংখ্য প্রমাণ। কেন আবেদন করতে হবে? কেন নাগরিকত্ব নিঃশর্ত এবং স্বয়ংক্রিয় হবে না?

কেন বিশ্বাস করব?
ধর্মের আগুনে রাজনীতিতে সেঁকা সিএএ'১৯ আর তার বিধি নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য নয়,কেড়ে নেওয়ার জন্য। আর নয়। সরিয়ে নাও  সিএএ ২০০৩ এর অবৈধ অনুপ্রবেশকারী অংশ, সরিয়ে নাও এনআরসি’র জাল। তৈরি করো নিঃশর্ত নাগরিকত্বের নতুন পরিবেশ ।

Comments :0

Login to leave a comment