CITU HALDIA

সিআইটিইউ রাজ্য সম্মেলন: শ্রমজীবীর ব্যাপক ঐক্য গড়ে ধর্মঘট সর্বাত্মক করার আহ্বান

রাজ্য

রবিবার হলদিয়ায় সিআইটিইউ রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে তপন সেন, অনাদি সাহু, জিয়াউল আলম এবং নেতৃবৃন্দ।

অরিজিৎ মণ্ডল: হলদিয়া

রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ঐক্য গড়তে হবে শ্রমজীবী জনতার সব অংশের মধ্যে। সিআইটিইউ-কে এ কাজে নেতৃত্ব দিতে হবে। তার জন্য সংগ্রামে ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। রবিবার হলদিয়ায় সিআইটিইউ ১৩ম রাজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে ঘোষিত হয়েছে এই আহ্বান।
এদিন সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। জবাবী ভাষণ দিয়েছেন বিদায়ী কমিটির রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু। সংগঠন থেকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। নতুন রাজ্য কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অনাদি সাহু, সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে জিয়াউল আলম। 
নেতৃবৃন্দ বলেছেন, স্থানীয় স্তরে আন্দোলনে হস্তক্ষেপের দক্ষতা বাড়াতে হবে। শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে হবে। তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। তবেই সংগঠনের বিস্তার হবে। শ্রমিক শ্রেণির পাশাপাশি কৃষক, খেতমজুর, বস্তিবাসী, মেহনতি জনতার অন্য অংশের ঐক্য দৃঢ় করতে হবে। ব্রিগেড সমাবেশের সাফল্যকে সংহত করতে হবে। অত্যন্ত জোর দিতে হবে শ্রমজীবী মহিলাদের সংগঠিত করা, তাঁদের দাবি নিয়ে সংগ্রাম জোরালো করার কাজে। ৯ জুলাই ধর্মঘটের দাবিকে পৌঁছে দিতে হবে শ্রমজীবীর একেবারে তৃণমূল স্তরে। সর্বাত্মক করতে হবে ধর্মঘটকে।
রবিবার জবাবী ভাষণে বিদায়ী কমিটির রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু শ্রমিকদের প্রতিদিনের দাবি নিয়ে আন্দোলনে ধারাবাহিকতার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আন্দোলনে ধারাবাহিকতা চাই। তবেই আত্মবিশ্বাস বাড়বে, বাড়বে কর্মী বাহিনী। 
রবিবার সম্মেলনের তৃতীয় দিনেও বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। গৃহীত হয় একাধিক প্রস্তাব। তার মধ্যে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিউবার প্রতি সংহতি, শ্রম কোড বাতিলের দাবিতে প্রস্তাব ৯ জুলাই দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট সফলের আহ্বানও। মোট ২৫ টি প্রস্তাব উত্থাপিত গৃহীত হয়েছে। সম্মেলন থেকে নির্বাচিত হয়েছে নতুন নেতৃত্বও।
সাহু জবাবী ভাষণে বলেছেন যে শ্রমিকদের কাছে যেতে হবে। ছক ভেঙে বেরোতে পারলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে বেশি। ধারাবাহিক আন্দোলন থেকেই নতুন কর্মী তৈরি হয়। তা করতে পারলে শ্রেণির আন্দোলনও মজবুত হবে। সেই সঙ্গে চালাতে হবে রাজনৈতিক চেতনার মান বৃদ্ধির কাজ। 
সাহু বলেন, সিআইটিইউ কেবল জীবিকার দাবি নিয়ে আন্দোলন করে না। সেই সঙ্গে সমাজ বদলের কথা বলে। সিআইটিইউ’র লক্ষ্য শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করা। তিনি বলেন, রাজ্যজুড়ে ব্যাপকভাবে শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার লড়াইয়ের শপথ নিতে হবে।  লড়াই সংগ্রাম করেই শাসক শ্রেণী ও মালিকদের থেকে দাবি আদায় করা যায়। তিনি বলেন, শ্রমিক কর্মচারীদের পাশাপাশি কৃষক, খেতমজুর, বস্তিবাসী গরিব ও প্রান্তিক অংশের লড়াইকে এক জায়গায় নিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ধারাবাহিক চেষ্টার ফলে ব্রিগেড সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ ছয মাসে আমরা এই নিবিড় প্রয়াস চালিয়ে যেতে পেরেছি। এই প্রয়াস জারি রাখতে হবে। প্রতিটি অঞ্চলে সদস্য বৃদ্ধি করতে হবে। শ্রমিক মহল্লায় যেখানে শ্রমিকরা বসবাস করেন সেখানে পৌঁছাতে হবে। 
অনাদি সাহু শ্রমজীবী মহিলাদের লড়াইকে আরো বেশি জোরালো করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন শ্রমজীবী মহিলাদের লড়াই খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই সময়কালে। আইটি থেকে শুরু করে বিড়ি শিল্পে, চাষে এমনকি পরিযায়ী শ্রমিকদেরও মধ্যে রয়েছেন মহিলারা। তাঁদের লড়াই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে
তপন সেন বলেন, শাসক শ্রেণি অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি করেছে। শুধু তাই নয় সামাজিক সংকট ও রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা বেরিয়ে পড়ছে। তার বিরুদ্ধে আঘাত আনতে পারে একমাত্র শ্রমিক শ্রেণির সচেতন লড়াই। গড়তে হবে শ্রেণি চেতনা। এই চেতনাই তৈরি করবে জঙ্গি শ্রেণি আন্দোলন। এটাই একমাত্র পথ, এছাড়া কোন বিকল্প নেই। 
৯ জুলাই ধর্মঘট প্রসঙ্গে তপন সেন বলেন পুঁজি ও শ্রমের দ্বন্দ্ব যবে থেকে সমাজে রয়েছে সেই দিন থেকেই লড়াই সংগ্রাম সংগঠিত হচ্ছে। শ্রম কোডের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ধর্মঘট করতে না দেওয়া, শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করতে না দেওয়া। গোটা পৃথিবীর পুঁজিবাদী শ্রেণি চায় শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নিতে। তার বিরুদ্ধেই ৯ জুলাই ধর্মঘট। ধর্মঘট সফল করতে গেলে একেবারে তলার স্তরে আন্দোলন পৌঁছে দিতে হবে। 
রাজ্য সম্মেলনে মোট ৯৬১ জন প্রতিনিধি ও ৪৪ জন দর্শক উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রবীণতম বিশ্বনাথ সাউ (৮৩)। সবচেয়ে ছোট সপ্তমী মাঝি (২৬)।

Comments :0

Login to leave a comment