Mamata Banerjee

মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফরের মধ্যেই অভিষেকের তলব

কলকাতা

 

রাত ১২টায় রাজভবন থেকে খামবন্দি গোপন চিঠি আসছে মমতা ব্যানার্জির বিদেশ সফরের জন্য শুভেচ্ছা নিয়ে!
বিদেশ সফরের আগে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘টেনশন’ দেবেন না বলে চিঠির প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই নবান্ন থেকে মমতা ব্যানার্জি জানালেন, বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে রাজ্যপাল তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েই চিঠি দিয়েছেন।
চিঠি বিতর্কে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে এদিনও স্পষ্ট হলো না আসলে রাজ্য সরকারকে চিঠিতে কী লিখেছেন সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপাল চিঠির প্রশ্নে এদিন সচেতনভাবেই বিষয়বস্তুকে এড়িয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে টেনশন না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর চিঠি নিয়ে প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই নবান্নে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘ না, না, না। সেরকম কোনও চিঠি দেননি। আমি বাইরে যাচ্ছি, তাই ‘বেস্ট উইশেস’ দিয়েছেন। এটা একান্ত ব্যক্তিগত।’’ 
ফের সাংবাদিকরা নবান্নে মমতা ব্যানার্জির কাছে জানতে চান, রাজ্যপাল বলেছেন বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে আপনাকে টেনশন দিতে চান না। তারপরেও সুর নরম করে মমতা ব্যানার্জির জবাব ছিল, ‘বললাম তো, আমার বিদেশ সফরের জন্য ‘বেস্ট উইশেস’ দিয়েছেন। শুভ কামনা জানিয়েছেন।’’ 
চিঠি বিতর্কে বিরোধী দলনেতার নাম করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বিরোধী দলনেতা চিঠির বিষয়বস্তু কী তা প্রকাশ্যে জানাতে বলেছেন। অতীতে বহুবার এই প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষিপ্ত হয়ে উত্তর দিতে শোনা গেছে। এদিন তার ধারপাশে না গিয়ে ফের মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘ ব্যক্তিগত চিঠি, আমি প্রকাশ করতে পারবো না। এটা গোপনীয়। ব্যক্তিগত। এই চিঠির সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ 
জি ২০ সম্মেলনের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ডিনার টেবিলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পাশেই ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তা নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি কটাক্ষ করেছেন। নৈশভোজ থেকে রবিবার রাজ্যে ফিরে এদিন নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাঁচ বছর পর ফের তিনি ১২ দিনের জন্য স্পেন সফরে যাচ্ছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে  রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কোনও চড়া সুরে কথা বলতে শোনা যায়নি। 
যে রাজ্যপালের সঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ ইস্যুতে শিক্ষক দিবসের মঞ্চ থেকে কড়া ভাষায় সিভি আনন্দ বোসকে আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছিল, এদিন সেই উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন শুনেই মমতা ব্যানার্জির মুখে শোনা গেছে আলাপ আলোচনার বার্তা। শিক্ষামন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবদের রাজ্যপালের আচরণের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার ডাক নিয়ে এদিন তাঁকে বলতে শোনা গেছে, ‘‘ আমি এসব নিয়ে কোনও মন্তব্য করছি না। যা করবার ফিরে এসে করবো। প্লিজ আমাকে বাইরে যেতে দিন। পাঁচ বছর পর আমি যাচ্ছি। কথা বলে বহু সমস্যার সমাধান করা যায়। আমি ভালোটাই আশা করবো।’’
মঙ্গলবার দুবাই হয়ে মমতা ব্যানার্জি স্পেনের উদ্দেশে রওনা হবেন। তার মধ্যেই আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর অভিষেক ব্যানার্জিকে ইডি তলব করেছে। ফলে তাঁর বিদেশে থাকাকালীন অবস্থায় যাতে পরিবারের ওপর নতুন কোনও সমস্যা চেপে না বসে তা নিয়েই বেশ সচেষ্ট ছিলেন এদিন মমতা ব্যানার্জি। ইন্ডিয়া নাম বাদ দিয়ে ভারত কেন, সেই প্রসঙ্গে সব বলেও মমতা ব্যানার্জির মুখে শোনা গেছে, ‘‘ভারত তো আমরা বলিই। ইন্ডিয়া কেটে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এই যে জি ২০ সম্মেলনে পদ্মফুলের ছড়াছড়ি ছিল। পদ্মফুল তো জাতীয় ফুল। আবার কোনও একটি দলের প্রতীক।’’ এরপরই তাৎপর্যপূর্ণভাবে মমতা ব্যানার্জিকে বলতে শোনা গেছে, ‘‘আমি ঝগড়া করার জন্য এসব কথা বলছি না। আমি আলাপ আলোচনার জন্য বলছি।’’ 
কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লিতে তৃণমূলকে ২ অক্টোবর সমাবেশ করতে বাধা দিচ্ছে। এমন প্রশ্নেও মমতা ব্যানার্জি সমাবেশ না করতে পারলে রাজঘাটে গিয়ে গান্ধীজীর বেদীতে মাল্যদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। টানা দু’বছর রাজ্যে ১০০ দিনের টাকা, আবাস যোজনা, রাস্তার টাকা আটকে রাখার জন্য সমাবেশ না করতে পারলেও কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্ক রক্ষার কথা শুনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী! আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশ প্রসঙ্গে তিনি কী বিল আসছে, তা না জেনে কোনও মন্তব্য করবেন বলে এদিন জানান। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গিয়ে এদিন ফিরে এসে রাজ্যপালের সঙ্গে আলাপ আলোচনার করার বার্তাই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ । 
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে রাজভবনের একতরফা নিয়োগ ঘিরে তুমুল সংঘাতের মধ্যে গত শনিবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস মধ্যরাতে অ্যাকশনের হুমকি দিয়েছিলেন। যার পালটা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু রাজ্যপালকে ‘রক্তচোষা’ বলেছিলেন। সেই রাজ্যপাল রাত পৌনে বারোটায় দুটি খামবন্ধ গোপন চিঠি পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। চিঠির একটি পাঠিয়েছিলেন নবান্নে। অন্যটি নয়াদিল্লিতে। গত শনিবার রাত থেকে রাজ্যপালের চিঠিতে কী আছে তা নিয়ে তুমুল জল্পনা তৈরি হয়ে যায়। রবিবার পার করে এদিন মুখ্যমন্ত্রী যা বললেন, তাতে রাত ১২টায় রাজ্যপাল তাঁকে বিদেশ সফরের শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। রাজভবনে এদিন চিঠি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল বলেন,‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। তাঁকে আমি নতুন করে টেনশন দিতে চাই না। বিদেশ যাত্রার সময় কোনও বোঝা যাতে বয়ে বেড়াতে না হয়, তিনি ফিরে আসুন। তারপর এই নিয়ে আলোচনা হবে।’’ 
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্যপালের কাছ থেকে শনিবার রাতে আসা চিঠি পুলিশ মারফত ওই রাতেই পৌঁছে দিয়ে আসা হয়েছিল মুখ্যসচিবের কাছে। মুখ্যসচিব ও মুখ্যমন্ত্রীর বাইরে রাজ্য প্রশাসনের কোনও স্তরে রাজভবনের চিঠির বিষয়বস্তু কী তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যপালের চিঠি প্রসঙ্গে প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিকের মন্তব্য,‘‘ চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে গোপনীয়তা রক্ষা করলেন তা পরিষ্কার। কিন্তু রাজ্যপালের সঙ্গে যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল তাতে ওঁর জবাব থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে। চিঠি জল্পনার সমাধানে এরপর উনি বিদেশ থেকে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় কি না সেটাই দেখার।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment