Editorial on wrestler protest up

সাক্ষী মালিকদের সুবিচার কে দেবে?

সম্পাদকীয় বিভাগ

দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেতাবজয়ী মহিলা কুস্তিগীররা মারাত্মক অভিযোগ করেছেন কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি, বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ লাগাতার যৌন হেনস্তা। তাঁদের অভিযোগ, কেবল তাঁরাই নন এই হেনস্তার শিকার অন্যান্য মহিলা কুস্তিগীরদের অনেকেই। এমনকি নাবালিকাও এই হেনস্তার মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ কয়েক মাস আগেই তাঁরা করেছিলেন। দেশের ক্রীড়ামন্ত্রীকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। এইরকম অভিযোগের পরে যে সাধারণ এফআইআর করতে হয়, সেটুকুও করেনি কেন্দ্রের অধীন দিল্লি পুলিশ। 
বাধ্য হয়েই দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বীনেশ ফোগাত, সাক্ষী মালিকরা যন্তরমন্তরে ধরনায় বসেছেন। তাঁদের সঙ্গী হয়েছেন বজরঙ পুনিয়ার মতো অন্যান্যরাও। ক্রমে সমাজের অন্যান্য অংশের বিশিষ্টরাও তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অভিনব বিন্দ্রা, নীরজ চোপড়া, কপিল দেবের মতো ক্রীড়াবিদরা অভিযুক্তের শাস্তির দাবি তুলেছেন। মহিলা, ছাত্র, যুব আন্দোলনের কর্মীরা সংহতি জানিয়ে ধরনায় এসেছেন, দেশজুড়ে আওয়াজ তুলেছেন। 
কিন্তু কেন্দ্রের শাসক দলের সাংসদকে স্পর্শ করেনি পুলিশ। বোঝাই যাচ্ছে, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমতি নেই। উলটে অভিযুক্ত সাংসদ বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন কুস্তি ফেডারেশনের আসন্ন পদাধিকারী নির্বাচনে তিনি আবারও লড়বেন। অবশেষে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কুস্তিগীররা। সুপ্রিম কোর্ট নোটিস পাঠানোয় দিল্লি পুলিশ শুক্রবার জানিয়েছে তারা এফআইআর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘সিদ্ধান্ত’ নিতেই কয়েক মাস, তা-ও আদালতের প্রশ্নের মুখে। 
এর মধ্যেই রাজনৈতিক চাপ কীভাবে কাজ করছে তা প্রমাণ হয়ে গেছে ক্রীড়াবিদ, এখন ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পি টি উষার মন্তব্যে। তিনি উলটে কুস্তিগীরদেরই দোষারোপ করে বলেছেন, এভাবে রাস্তায় বসে দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি করছেন তাঁরা। পি টি উষাকে তাঁর ক্রীড়াজীবনের জন্য সকলেই সম্মান করেন। কিন্তু তাঁর এই মন্তব্যের পরে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। কুস্তিগীররা রাস্তায় বসে কেঁদে ফেলেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর ওপরে চাপ তৈরি করা হয়েছে। 
এই হচ্ছে বিজেপি! প্রধানমন্ত্রী ‘বেটি বাঁচাও’-এর স্লোগান দিচ্ছেন আর দেশের খ্যাতনামা মহিলা ক্রীড়াবিদদের সম্মানহানি হচ্ছে তাঁরই দলের সাংসদের হাতে। এঁরাই যখন প্রাপ্য সুরক্ষা পাচ্ছেন না, তখন দেশের সাধারণ ঘরের মহিলাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। দিল্লি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে হাথরস কেন হয়েছিল। এই প্রধানমন্ত্রীই মহিলাদের জন্য কতরকমের মনোহারি কথা বলে চলেছেন তাঁর ভাষণে। অথচ তাঁর সাহস নেই নিজের দলের সাংসদকে শাস্তি দেবার, তাঁকে এমনকি কুস্তি ফেডারেশন থেকে সরিয়ে দেবার। আসলে মানসিকতাই নেই। আরএসএস থেকে তৈরি হওয়া প্রধানমন্ত্রী, বিজেপি নেতারা মহিলাদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কেই বিকৃত ধারণা বহন করেন। মনুস্মৃতির ধারণা। 
আমাদের লক্ষ্য করতেই হচ্ছে, দেশের রাষ্ট্রপতি একজন মহিলা। সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে রয়েছেন তিনি। তাঁর তরফেও কোনও সাড়াশব্দ নেই। কেন নেই? সারা দেশ দেখছে আর সম্মানীয়া রাষ্ট্রপতি দেখতে পাচ্ছেন না? এর ফলে কি রাষ্ট্রপতি ভবনের সম্মান বাড়ছে?

Comments :0

Login to leave a comment