Flood situation in Northeast

উত্তর-পূর্বে অবনতি বন্যা পরিস্থিতি, দু’দিনে মৃত ৩০

জাতীয়

বিশ্বজিৎ দাস
উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। আসাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও সিকিমে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রবিবার আরও পাঁচজনের মৃত্যু ঘটেছে।  ফলে গত দু’দিনে উত্তরপূর্বে বন্যা ও ধসে ৩০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। রবিবার রাতে সরকার থেকে বলা হয়েছে  আসামের   ১৯ টি জেলা বন্যার কবলে। বানভাসি মানুষের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৪৬ জন।রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১৫৫ টি শরণার্থী শিবির খোলা হয়েছে। তাছাড়া, ১০ হাজার ২৭২টি স্থানে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। রাজ্যের ৩ হাজার ৫২৪ হেক্টর কৃষি জমি জলের তলায়। তবে বেসরকারি হিসেবে বানভাসি মানুষের সংখ্যা চার লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। আসামের একাধিক সড়ক ও রেলপথ জলের তলায়। উজান আসাম, বরাক উপত্যকার জেলাগুলি, ডিমাহাসাও জেলা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।গুয়াহাটি মহানগরের বড় অংশ জলের তলায়। ব্রক্ষ্মপুত্র, বরাক নদী,সুবনসিরি সহ রাজ্যের দশটি প্রধান নদীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। জলের তোড়ে মুহূর্তে ভেঙে পড়ছে নদীবাঁধ, স্লুইসগেট। চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে বাড়ি৷  অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি জলের তলায়। নদী তীরবর্তী বসবাসকারী অনেকের বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে অগণিত পরিবার।  হাজার হাজার  মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। পর্যাপ্ত শিবির না থাকায় উঁচু বাধ,টিলায় আশ্রয় নিয়েছেন। রবিবার ডিমাহাসাও জেলায় চোখের সামনে ভেসে গেছে একটি মুরগি বোঝাই লরি।এদিন কাছাড় জেলার কাটিগড়া এলাকায় একটি বাড়িতে ধসে চাপা পড়েন সাতজন৷ গ্রামবাসীরা তাদের উদ্ধার করলেও তিনজনের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে জানা গেছে। মেঘালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে ঘনঘন ধস নামছে। গুয়াহাটি থেকে আগরতলা সংযোগকারী ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের মেঘালয়ের একটি অংশ জলের তোড়ে ভেসে গেছে। ফলে এই  জাতীয় সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। শিলচর-দুল্লভছড়া রেলরুট জলে ভেসে গেছে। ফলে ওই রুট দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। লামডিং-বদরপুর পাহাড় লাইনের জাটিঙা স্টেশনের কাছে রেললাইন জলের তলায়। রবিবার পর্যন্ত ওই রুটে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করেছে। জলস্তর বাড়লে এই রুটও বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে।গুয়াহাটি থেকে মাজুলি চলাচলকারী ফেরিসেবা রবিবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল সহ সেনাপতি, উখরুল,তামেঙলঙ, নোনি,কাঙপকপি ইত্যাদি জেলার পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ বন্যার কবলে। ইম্ফলে রিমস হাসপাতাল জলের তলায়। মণিপুরে বানভাসীদের উদ্ধারে সেনা নামানো হয়েছে । অরুণাচল প্রদেশের ছয়টি জেলার মানুষ বানভাসী। ভূমিধসে অরুণাচলের গুরুত্বপূর্ণ সবকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। রবিবার অরুণাচলের বোমজির নদীতে আটকে পড়া আসামের ১৪ জন যুবককে হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করে বায়ূসেনার জওয়ানরা। মিজোরামের রাজধানী আইজলে ঘনঘন ধস নামছে। গত শনিবার ধসে আইজলে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা সকলেই মায়নামারের বাসিন্দা। ধস প্রবন এলাকার মানুষদের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দিয়েছে মিজোরাম সরকার। বন্যা পরিস্থিতির জন্য আসাম, মণিপুর, মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশে আগামী দুইদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।  টেলিফোনে উত্তর-পূর্বের বন্যার খোঁজ নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। এক্স হ্যান্ডেলে নিজেই একথা জানিয়ে শাহ লিখেছেন, 
'রবিবার আসাম,অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী ও মণিপুরের রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে বন্যার খোঁজ নিয়েছি। মোদী সরকার এই রাজ্যগুলিকে সাহায্য করবে'। উল্লেখ্য, প্রতি বছর বন্যার সময় টেলিফোনে খোঁজ নেন শাহ। তবে আসামের বন্যায় পর্যাপ্ত সাহায্য দেয় না কেন্দ্র। আসামের বন্যার স্থায়ী সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিলেও যথারীতি কথা রাখেনি কেন্দ্র ও রাজ্যের ডাবল ইঞ্জিনের সরকার। রবিবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সামাজিক মাধ্যমে আসামবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, অরুণাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাই আসামে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। বিরোধীদের অভিযোগ,  নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ও পূর্বে বন্যায় ভেঙে যাওয়া নদী বাঁধ মেরামত না করায় এবছর দু’দিনের বৃষ্টিতেই বন্যার ভেসে গেছে আসাম৷ বন্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যর্থতা এজন্য দায়ী।
 

Comments :0

Login to leave a comment