GENERAL KNOWLEDGE — TAPAN KUMAR BIRAGAYA — RABINDRANATH O NILRATAN SARKAR — NATUNPATA | 8 AUGHST 2025, 3rd YEAR

জানা অজানা — তপন কুমার বৈরাগ্য — রবীন্দ্রনাথ ও ডাক্তার নীলরতন সরকার — নতুনপাতা, ৮ আগস্ট ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

GENERAL KNOWLEDGE  TAPAN KUMAR BIRAGAYA  RABINDRANATH O NILRATAN SARKAR  NATUNPATA  8 AUGHST 2025 3rd YEAR

জানা অজানানতুনপাতা

রবীন্দ্রনাথ ও ডাক্তার নীলরতন সরকার
তপন কুমার বৈরাগ্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে অনেক চিকিৎসক এসেছেন।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডাক্তার নীলরতন সরকার,ডাক্তার
বিধানচন্দ্র রায়,ডাক্তার শচীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়,ডাক্তার ললিত 
বন্দ্যোপাধ্যায়,কবিরাজ বিমলানন্দ। রবীন্দ্রনাথের
সবচেয়ে আস্থাভাজন ছিলেন ডাক্তার নীলরতন সরকার।
১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি রবীন্দ্রনাথের গৃহ চিকিৎসক
ছিলেন।তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমবয়সি ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর চিকিৎসায় বেশ সুস্থভাবে দিনযাপন করছিলেন।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে রবীন্দ্রনাথ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যায় ভুগছিলেন।নীলরতন ছাড়াও 
আরো দু'জন তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকলেন।এরা হলেন
ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় এবং ডাক্তার ললিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরা অস্ত্রোপচারের পক্ষে ছিলেন।কিন্তু ডাক্তার নীলরতন সরকার
অস্ত্রোপচারের পক্ষে ছিলেন না।তিনি প্রথম থেকেই এর
বিরোধিতা করে গেছেন।
ডাক্তার নীলরতন সরকারের স্ত্রী বিয়োগ হলে তিনি মানসিক
আঘাত পেয়ে গিরিডিতে গিয়ে বসবাস করতে আরম্ভ করেন।
কবিকে ২৫শে জুলাই ১৯৪১খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতন থেকে
কলকাতায় আনা হলো। ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় এবং 
ডাক্তার ললিত বন্দ্যোপাধ্যায় কবির সত্বর অপারেশন করতে
চায়লেন।
কিন্তু ডাক্তার নীলরতন সরকার গিরিডি
থেকে জানান --এই অস্ত্রোপচারের দরকার নেই ।তাতে
কবির অবস্থা আরো খারাপ হবে ।বরং ঔষধের দিকে
লক্ষ্য দিলে কবির আয়ু আরও বৃদ্ধি পাবে।
কবির পুত্র রথীন্দ্রনাথ নীলরতনের পক্ষে ছিলেন।
তিনি মনেপ্রাণে চাননি পিতার অস্ত্রোপচার।
রবীন্দ্রনাথও চাননি নিজের দেহের কাটাছেঁড়া। তিনি
ছিলেন সুন্দরের পূজারী।নিখুঁত দেহ নিয়ে তিনি
পৃথিবীতে এসেছিলেন।সেই নিখুঁত দেহ নিয়েই
তিনি মহাপ্রয়াণে যেতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তবুও ৩০শে
জুলাই জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে কবির অস্ত্রোপচার
করা হল।কবির অস্ত্রোপচার করলেন  ডাক্তার ললিত
বন্দ্যোপাধ্যায়। অস্ত্রোপচারের পর কবির অবস্থা দিনের
পর দিন খারাপের দিকে যেতে লাগল। কবিপুত্রের আহ্বানে
ডাক্তার নীলরতন সরকার কবিকে দেখতে আসেন।
কবির মাথায় এবং কপালে হাত দিয়ে দেখলেন।প্রচন্ড
জ্বর।বেহুঁশ অবস্থায় আছেন। তিনি চোখ ভরা জল
নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন।
সকলে বুঝতে পারলেন কবির দিন ঘনিয়ে এসেছে।
৭ই আগস্ট ১৯৪১, বাংলার  ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮
রাখীপূর্ণিমার দিন দুপুর ১২টা ১০মিনিটে কবি শেষ নিঃশ্বাস
ত্যাগ করেন।
রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন ডাক্তার
নীলরতন সরকার। সুচিকিৎসক হিসাবে সারা ভারতবর্ষে
তাঁর সুনাম ছিলো।আর, জি,কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,
কুমুদশঙ্কর রায় যক্ষ্মা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর
সক্রিয় ভূমিকা ছিলো।
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন
গঠনেও তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিলো।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসমান্য অবদানের জন্য তাঁকে
নাইট উপাধি দেওয়া হয়।১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা 
বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডি,এস,সি উপাধিতে
ভূষিত করে।
তাঁর মৃত্যুর বেশ কিছু বছর পর শিয়ালদহ 
ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল কলেজের নাম পরিবর্তন
করে তাঁর সম্মানার্থে রাখা হয় --নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ। 


 

Comments :0

Login to leave a comment