Salim on SIR

এসআইআর হিন্দুরাষ্ট্রের দিকে এগনোর ধাপ : সেলিম

জাতীয় রাজ্য

‘এসআইআর হিন্দুরাষ্ট্রের দিকে এগনোর ধাপ।’ বৃহস্পতিবার সিপিআই(এম) রাজ্য সদর দপ্তর মুজফ‌ট্ফর আহমেদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন সেলিম বলেন, ‘প্রথমত এসআইআর’র দরকার ছিল না। দ্বিতীয়ত দুই দল তৃণমূল এবং বিজেপি মানুষের মধ্যে ভয় ছড়াচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে তালিকা বের করলে ত্রুটিমুক্ত হবে না। তাই ধৈর্য ধরে এই কাজ করা উচিত। যদি তা না হয় এবং ত্রুটি থাকে জনতাকে বলব আমরা সর্বশক্তি নিয়ে পাশে থাকব। ভয় পাবেন না।’ তিনি বলেন, পুঁজিবাদ সর্বজনীন ভোটাধিকার চালু করেনি। লড়াই করে আমাদের দেশে সর্বজনীন ভোটাধিকার আদায় করা হয়েছে। আজ সেই অধিকার সঙ্কটের মুখে। আদিবাসী, দলিত, মতুয়া সবাই আজ আক্রান্ত। কমিশনকে ব্যবহার করে এই কাজ করছে বিজেপি আরএসএস, মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে।
উল্লেখ্য এসআইআরের ফর্ম ফিলাপ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে সিপিআই(এম) এর পক্ষ থেকে ভিডিও টিউটোরিয়াল প্রকাশ করা হয়। সেই প্রসঙ্গ টেনে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘ফর্ম ফিলাপের সময় আমরা ভিডিও টিউটোরিয়াল করেছিলাম। তালিকা প্রকাশের পরও করব। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী সব সময় তো নিজেদের প্রচারে ব্যাস্ত থাকে। অথচ ভোটাধিকার রক্ষার ব্যাপারে মানুষকে কোন সহায়তা করছে না। ৯ তারিখ তালিকা প্রকাশের পরও আমরা সক্রিয় থাকব।’
কেন এসআইআর প্রক্রিয়ার সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেলিম। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘সময় কেন বাড়াচ্ছেন না? মৃতদের নাম বাদ দিলে একশো শতাংশ ফর্ম বিতরণ করতে হতো না। সেগুলো ফিল আপ এবং রিকালেক্ট করার কোনও দরকার ছিল না। বরং, কমিশনের সদিচ্ছা প্রশ্নের মুখে পড়ল। এখন বলছে ছেঁটে দেব।’
তিনি অভিযোগ করেন, বাঁধে থাকে চরে থাকে। বন্যা, নদী ভাঙনে যাদের বাড়ি ভেসে গিয়েছে। উদ্বাস্তু ছিন্নমূল বাস্তুহারা মানুষ আছেন। মহিলারা একটা সংসার থেকে অন্য সংসারে যান। অনেকের পুরনো কাগজ থাকে না। তাঁদের সেই নথি জোগার করতে বলা হচ্ছে। তার ওপর নামের বিভ্রাট। ভুল থাকেই। সামাজিক, প্রশাসনিক শিক্ষাক্ষেত্রে সমান অংশ গ্রহণ হয় না। এমন অপরিচিত নাম আছে, তার বানান ভুল। আদিবাসী, মুসলিমের পদবি বদলায় না। আজকাল অনেকে পদবি বদলান না। অনেকের অন্য ধর্মে বিয়ে হয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বর্ধমানে তা নিয়ে হৈ চৈ করা হয়েছে। আরএসএস’র বদ্ধ মানসিকতা যদি প্রশাসনে প্রবেশ করে তার বিপদ দেখা যাচ্ছে।’ 
সেলিম বলেন, ‘বিধানসভায় উচিত ছিল বিল পাশ করিয়ে ইংরেজি এবং বাংলা বানানের প্রশাসনিক বিধি নির্দিষ্ট করা। মমতা এসব না করে গেজেট নোটিফিকেশন করে এটা করতে পারেন। মণ্ডল, ভট্টাচার্য, মুখার্জি মুখোপাধ্যায় একই। এগুলি মানুষের কষ্টকর অধ্যায়। এজন্য ভোটার অধিকার রক্ষা সহায়তা কেন্দ্র করেছি। মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাইছি।’
একদিকে যখন এসআইআরের কাজ চলছে তখন অন্য দিকে বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে এরাজ্যে যারা এসেছেন সেই হিন্দুদের তারা সিএএ কার্ডের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেবে। সেলিম বলেন, ‘দেশের সংবিধান, ভোটার তালিকা, কোন ধারাপাতেই বিজেপির এই অঙ্ক মেলেনি। বিজেপি প্রচার করেছিল যে তারা সীমানায় পাঁচ হাজার ক্যাম্প করবে। কোথায় ক্যাম্প। যে কোনও সাম্প্রদায়িক অন্ধ শক্তি এসব মিথ্যা প্রচার করে রাজনীতি করে। মিথ্যা বলতে বলতে বিশ্বাস করতে থাকে। আরএসএস এখন মনে করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ মানেই মুসলিম। এখন শুভেন্দু বলছে না। দিলীপ ঘোষ এখন বলছে না ২ কোটি বাঙালিকে বাংলাছাড়া করবে সিএএ’র সময় বলেছিল।’
মতুয়াদের প্রসঙ্গ তুলে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘মতুয়া ভাইবোনেরা বুঝেছেন দু’জনেই ধাপ্পা দিচ্ছেন। বনগাঁয় মিটিং করতে পারেননি বলে বারাসতে নাটক করেছেন। চাকরি দিয়ে পুশিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যেই দুর্নীতি তার কোন তদন্ত বা করে তাকে মদত দিচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘বিজেপি মমতাকে নতুন নতুন কথা বলতে হচ্ছে কারণ মানুষ ওদের বিশ্বাস করছে না। বলেছিলেন এসআইআর হতে দেব না। এখন চুপিসাড়ে ফর্ম ভরছে।  বাস্তুহারা বহু মানুষ এসআইআর ফর্ম ফিল আপ করছেন না। মনে করছেন তা’হলে সরকারকে তথ্য দিতে হবে।’

Comments :0

Login to leave a comment