MONDA MITHI — NATUNPATA / PALLAV MUKHOPADHYA

মণ্ডা মিঠাই / অনবদ্য আগস্ট - এক — পল্লব মুখোপাধ্যায়

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHI  NATUNPATA   PALLAV MUKHOPADHYA

মণ্ডা মিঠাই

নতুনপাতা

অনবদ্য আগস্ট - এক 
পল্লব মুখোপাধ্যায়

বাঙালি তথা ভারতবাসীর কাছে আগস্ট মানে বিদ্রোহ, বিপ্লব, গণচেতনা। আন্তর্জাতিক থেকে
জাতীয় ক্ষেত্রে একের পর এক রাজনৈতিক ঘটনার পরম্পরা গোটা আগস্ট মাস জুড়েই। ১৯৪৫
এর ৬ এবং ৯ আগস্ট যথাক্রমে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার নিক্ষেপ ও তার
বীভৎসায় গোটা বিশ্ববাসী স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন।


দেশের পরিপ্রেক্ষিতেও আগস্ট এক স্পর্ধার মাস, জাগরণের মাস, উজ্জীবনের মাস। ১৮৫৮ সালের
২ আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতে 'সুশাসন' প্রবর্তনের জন্য একটি আইন পাস্ করে। ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। ভারত হল সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের
উপনিবেশ বা সাম্রাজ্য। শাসন সংস্কারের নামে স্বায়ত্বশাসনহীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অচ্ছেদ্য অঙ্গ
হিসেবে 'ভারতের উপযোগী স্বশাসন' দেওয়ার এক আশ্বাস ঘোষিত হয়। বিলেতের কমন্সসভায়
ভারত সচিব মন্টেগু এই ঘোষণা করেন ১৯১৭ সালের ২০ আগস্ট। বাংলায় বিপ্লবীদের দমনের
জন্য পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট তাঁর পীরণনীতিতে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ১৯৩০
সালের ২৫ আগস্ট ডালহৌসি স্কোয়ারে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেন বিপ্লবী
অনুজাচরণ সেন ও দীনেশ মজুমদার। বোমা বিস্ফোরণ করতে গিয়ে অনুজাচরণ সেন নিজেই
ঘটনাস্থলে নিহত হন। গ্রেপ্তার হন আহত দীনেশ মজুমদার। পরে তিনি ফাঁসিতে প্রাণ দেন। এই
সময় বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিপ্লবী আন্দোলন অব্যাহত ছিল। ১৯৩০ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায়
পুলিশের ইন্সপেক্টর-জেনারেল লোম্যান-কে গুলি করে হত্যা করা হয়।


জাতীয় আন্দোলনের একটি পর্বান্তরের সূচনা হয় ১৯৪২ সালের আগস্টে। কংগ্রেস-এর বোম্বাই
অধিবেশন বসে ১৯৪২ সালের ৭ ও ৮ আগস্ট। উত্থাপিত হয় 'ভারত ছাড়ো' প্রস্তাব। গান্ধীজী
ডাক দিলেন - 'করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে'। হয় স্বাধীনতা নয় মৃত্যু। ৮ আগস্ট গান্ধীজি-সহ ওয়ার্কিং
কমিটির সমস্ত নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ৯ আগস্ট থেকে বোম্বাই সহ দেশের নানা প্রান্তে এই
খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেখা দেয় স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ ও ব্রিটিশ পুলিশ-মিলিটারি-র সঙ্গে সংঘর্ষ।
কংগ্রেস-এর মধ্যে সমাজতন্ত্রী দলের নেতৃবৃন্দ আত্মগোপন করে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুথান
সংগঠিত করেন। মহারাষ্ট্রের সাতারায়, উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায়, আজমগড়ে, ওড়িশার তালচের
এবং বাংলার মেদিনীপুর ও বালুরঘাটে এই আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করে। এই অঞ্চলগুলিতে
বিপ্লবী সরকারও গঠিত হয়। 

কলকাতায় আগস্ট আন্দোলন সংগ্রামী রূপ নেয় ১৯৪২ সালের ১৩
আগস্ট থেকে। ব্যাপক ধরপাকড়ের ফলে নেতৃবৃন্দ কারান্তরালে। স্কুল-কলেজ-এ ছাত্রছাত্রীরা
ধর্মঘট করে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। ওয়েলিংটন স্কোয়ারে (বর্তমানে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার)
ছাত্র সমাবেশের ওপর ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ হামলা চালিয়ে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরদিন

সারা শহরেই অঘোষিত হরতাল পালিত হয়। মধ্য কলকাতায় শ্রীমানী বাজারের সামনে পুলিশ
বেপরোয়া গুলি চালিয়ে ছাত্র হত্যা করে। এরপর থেকে গণবিক্ষোভ প্রচণ্ড আকার ধারণ করে।
ট্রাম-বাসে আগুন দেওয়া হয়। টেলিফোন-টেলিগ্রাফের তার ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সংগ্রামী
জনসাধারণ তাঁদের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আগস্ট আন্দোলনের খবরের ওপর নিষেধাজ্ঞা
জারি করার প্রতিবাদে ১৯৪২ সালের ১৮ আগস্ট থেকে জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্রগুলির প্রকাশ
বন্ধ করা হয়।

Comments :0

Login to leave a comment