বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে যে রাজনৈতিক সওদা চলছে তাতেই দেশ ছেড়ে যেতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি। সোমবার মেদিনীপুরে সাংবাদিকদের একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, এত মামলা, এত শুনানি, আর ফসকে পালিয়ে গেল মাফিয়া ডন? কেন্দ্রীয় সরকারের ইডি, সিবিআই, স্বরাষ্ট্র দপ্তর, অভিবাসন দপ্তর সবার যোগসাজসেই বিদেশে পালিয়েছেন তিনি। মাফিয়ারা যেভাবে খনিজ সম্পদ, ড্রাগস, অস্ত্র পাচারের টাকা পাচার করে সেভাবেই এরাজ্যের গরিব মানুষের টাকা, চাকরি লুটের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশি মহিলাদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে টাকা পাচার করা হয়েছে। ইডি সিবিআই সব জানলেও ঠেকায়নি কেন? রাজ্যের মানুষ না খেয়ে মরবে আর মাফিয়ারা বিদেশে মৌজ করবে?
সেলিম একথাও বলেন, বেশিরভাগ মিডিয়া মালিক এসব খবর প্রচার চায় না। তারা মণিপুরে আদিবাসী মহিলাকে উলঙ্গ করে অত্যাচারের খবর প্রকাশ করেনি মোদী চাননি বলে। বিজেপি আর তৃণমূলের দালাল চক্রের অংশীদার হয়ে গেছে বলেই বড় বড় মিডিয়া স্পষ্ট ভাষায় খবর দিচ্ছে না। তারা তৃণমূল বনাম বিজেপি’র সাজানো লড়াই প্রচারে ব্যস্ত।
সোমবার মেদিনীপুর শহরে সিপিআই(এম)’র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির বৈঠকে অংশ নেন মহম্মদ সেলিম। তার ফাঁকেই সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম এদিন বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে সওদা চলছে। দর কষাকষি হচ্ছে লোকসভায় কে কটা আসন নেবে, আর বাম কংগ্রেস আইএসএফ’কে কীভাবে শূন্য করবে। এরজন্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল আর বিজেপি’র গুন্ডা মস্তান পুলিশ প্রশাসন সব এক হয়ে গেছিল, রাজভবন আর নবান্ন যুদ্ধ দেখিয়ে উভয়ের মধ্যে কেবল দর কষাকষিই চালিয়েছে।
তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী ধৃত পার্থ চ্যাটার্জিকে বিশেষ ব্যবস্থা দেওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরেও সেলিম বলেছেন, অপরাধী হলেও বিশেষ বিশেষ লোকদের জন্য বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা। কারণ দুই পক্ষের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
বেঙ্গালুরুতে জাতীয় স্তরের বিজেপি বিরোধী বৈঠকে তৃণমূল এবং বামেদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে সেলিম বলেছেন, পাটনায় এবং বেঙ্গালুরুতে আমরা গোপনে তো কিছু করিনি। মিটিং করে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। নবান্নের চোদ্দ তলায় অমিত শাহ এবং মমতা ব্যানার্জির বৈঠকে কী হয়েছে কেউ বলেছে? ওটা পর্দার পিছনে হয়েছে, কারণ সওদায় দর কষাকষি এভাবেই হয়।
‘ইন্ডিয়া’তে তৃণমূলের ভূমিকা কী হবে সেই সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, সেটা তৃণমূল ঠিক করবে নাগপুরের নির্দেশ অনুসারে, আমি কী করে বলব? মুকুল রায়ের ভূমিকা কি কেউ বলতে পারবেন? উনি তৃণমূল না বিজেপি’র নেতা? এরাজ্যে এরকম হাফডজন সাংসদ, এক ডজন বিধায়ক আছে যারা তৃণমূল না বিজেপি’র কেউ বলতে পারবে না। তৃণমূল বিজেপি’র যদি এত যুদ্ধই হয় তাহলে রাজ্যসভায় একটা আসনে কেউ প্রার্থী দিল না কেন?
বিজেপি বিরোধী ভোট একজোট করায় বামপন্থীদের প্রচেষ্টা সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, এটা নতুন কথা নয়। সিপিআই(এম)’র পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইন অনুসারেই হচ্ছে। বিজেপি যেভাবে মণিপুর থেকে হরিয়ানায় এক জনগোষ্ঠীর মানুষকে ধর্ম, জাতির নামে আরেক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপরকে লড়িয়ে দিচ্ছে, ভাড়াটে সৈন্য দিয়ে খুন খারাপি করছে, তাতে দেশ রক্ষা করার লড়াই করতেই হবে। তিন মাস ধরে মণিপুরের ঘটনা চলছে। মণিপুর ও কেন্দ্রের সরকারে বসে বিজেপি একটা কথাও বলছে না। পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই(এম) কার সঙ্গে সমঝোতা করছে তা নিয়ে চেঁচাচ্ছে। আমাদের পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুসারে দেশে বিজেপি’র ফ্যাসিবাদকে রুখতে আমরা ভূমিকা পালন করব। তার জন্য যৌথ আন্দোলন যৌথ প্রচার করব। বাজপেয়ী সরকার হওয়ার আগে থেকে আমরা এই পথ নিয়েই চলছি। তৃণমূল তৈরি হয়েছিল বিজেপি’কে সরকার গড়তে সাহায্য করতে। বিজেপি যা সারা দেশে করছে আমাদের রাজ্যে তৃণমূলও তাই করছে। তাই এরাজ্যে বিজেপি’র বিরুদ্ধে যেমন লড়াই করতে হবে তেমনই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে, সাগরদিঘির উপনির্বাচনে আমরা তাই করেছি। এসব দেখে ভয় পেয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি, তাই একইভাবে চেঁচাচ্ছে। ওরা কেবল বিজেপি বনাম তৃণমূল মেরুকরণ দেখাতে চায়। যাতে দিদির লুট আর মোদীর লুট চলতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের লড়াই সঠিক পথেই এগচ্ছে বলে জানিয়ে সেলিম বলেন, বিজেপি এবং তৃণমূল বিরোধী সব ব্যক্তি গোষ্ঠী দল সবাইকে আমরা এককাট্টা করছি। দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় দক্ষিণপন্থীদের ঠেকাতে সিপিআই(এম)’র ২৩ তম কংগ্রেসের ঠিক করে দেওয়া রাজনৈতিক লাইন অনুসারেই আমরা এগচ্ছি। আমরা যে পথে এগচ্ছি তাতে যারা ভেবেছিল লাল ঝান্ডা শেষ, এবার খালি তৃণমূল বনাম বিজেপি মেরুকরণ হবে, তারা বুঝতে পারছে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। তাই বিজেপি’র সুবিধা করে দিতে ভোট তিনভাগে ভাগ করতে মমতা ব্যানার্জি ফেডারেল ফ্রন্টের কথা বলেছিলেন, বিজেপি’র কেনা বেচা রাজনীতিতে সেটাও ভেস্তে গেছে। কিন্তু সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীদের কেউ কিনতে পারবে না, তারা লড়বে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
ক্যাপশন: সোমবার মেদিনীপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম। রয়েছেন সুশান্ত ঘোষ।
Comments :0