UTSAVE ANUVABE — STORY — SOURISH MISHRA — UPAHAR — NATUNPATA — 4 OCTOBER 2025, 3rd YEAR

গল্প — সৌরীশ মিশ্র — উপহার — নতুনপাতা — ৪ অক্টোবর ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

UTSAVE ANUVABE  STORY  SOURISH MISHRA  UPAHAR  NATUNPATA  4 OCTOBER 2025 3rd YEAR

উৎসবে অনুভবে

গল্প  


উপহার

---------------------------------

সৌরীশ মিশ্র

---------------------------------

"বাপি, মা বলল, ঢাকিকাকুকে এটা দিয়ে দিতে।" জামাকাপড়ে ভরা একটা বড় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ খাটের উপর রাখতে-রাখতে বলল রিচা ওর বাবা সুজিতবাবুকে।
একাদশীর সকাল। একটু আগে বাজার করে ফিরেছেন সুজিতবাবু। তারপর চা খেয়ে নিজের ঘরে বিছানায় বসে এবারের 'গণশক্তি'-র শারদ সংখ্যাটা নিয়ে পড়ছিলেন। অষ্টমীর দিন, দুর্গাপুজো উপলক্ষে পাড়ায় দেওয়া একটা স্টল থেকে কিনেছেন বইটা তিনি। দারুণ একটা লেখা পড়ছিলেন ওটা থেকে, তখনই ওনার দশ বছরের মেয়ে ঐ ঘরে ঢুকে পায়ে-পায়ে বিছানার পাশটায় এসে কথাকটা বলল ওনাকে।
"ঢাকি আসছে নাকি?" বই থেকে মুখ তুলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন সুজিতবাবু।
"আসছেই তো। একটু আগেই তো বারান্দা থেকে দেখলাম, রমাজ্যেঠিমাদের বাড়ির সামনে বাজাচ্ছে। ঐ তো আবার বাজাচ্ছে। শুনতে পাচ্ছ না?"
পুজোসংখ্যাটায় যে গল্পটা পড়ছিলেন সুজিতবাবু, সেটা এতোটাই মনোগ্রাহী করে লিখেছেন লেখক যে, একপ্রকার মগ্ন হয়েই সেটা পড়ছিলেন তিনি। তাই, ঢাকের শব্দ মাঝেমধ্যে কানে এলেও, শব্দটা কোথা থেকে আসছে তা নিয়ে মাথা ঘামাননি একেবারেই। এখন মেয়ে বলতে তড়িঘড়ি খাট থেকে নামলেন তিনি। আর নেমেই মেয়েকে বললেন, "দ্যাখ্ তো গিয়ে কতদূর এলো।"
রিচা এক ছুট লাগায় সাথে সাথে বারান্দার দিকে।
সুজিতবাবু খালি গায়ে ছিলেন। ঘরে যে হাফ-হাতা পাঞ্জাবিটা পড়েন সবসময়, সেটা আলনা থেকে নিয়ে গায়ে দিলেন। তারপর ক্যারিব্যাগটা তুলে নিলেন হাতে। সেটা নিয়ে পা বাড়াবেন বারান্দার দিকে, তখনই ওনার চোখে পড়ল, ব্যাগটার মধ্যে অনেকগুলো পুরোনো জামাকাপড়ের সাথে প্লাস্টিক প্যাকেটে প্যাক্ করা একেবারে নতুন একটা ফ্রক। সুজিতবাবু চিনতেও পারেন ফ্রকটা। এবারের পুজোয় মেয়েকে যে তিনটে ফ্রক কিনে দিয়েছিলেন তিনি, তারই একটি এটি।
সুজিতবাবুর ব্যাপারটা অবাক করে। তাই তিনি স্ত্রী রায়াকে ডাকলেন, "রায়া, একটু শুনে যাও তো এ'ঘরে।"
রায়াদেবী রান্নাঘরে ছিলেন। আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এলেন। "কি হয়েছে?"
ক্যারিব্যাগটা থেকে নতুন ফ্রকটা বের করে স্ত্রীকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন সুজিতবাবু, "এটা দিচ্ছ? রিচা জানে?"
"ওই তো বলল। এবারের আমাদের পাড়ায় ঢাকির সাথে কাঁসর বাজাচ্ছে একটা ছোট্ট মেয়ে না, তার জন্য তোমার মেয়ে এই জামাটা রেখেছে।" কথা শেষ করে স্বামীর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে একটু হাসেন রায়াদেবী।
কথাগুলো শুনে এতো ভালো লাগে সুজিতবাবুর যে তা বলার কথা নয়।
ঠিক তখনই, যেমনি করে ঐ ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল রিচা একটু আগে, ঠিক তেমনই দৌড়ে ঘরে ঢুকল ফের ঝড়ের বেগে সে। "বাপি, চলো চলো, ঢাকিকাকু তো এসেই গেছে প্রায়। আসিতকাকুদের বাড়ির সামনে বাজাচ্ছে এখন। চলো, চলো। ফাস্ট।" বাবাকে তাড়া দেয় রিচা।
"হ্যাঁ চল্।" মেয়ের মাথায় সস্নেহে একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগটা হাতে তুলে নেন সুজিতবাবু। তারপর পা বাড়ান বারান্দার দিকে। আর ওনার পাশে-পাশে, ভেসে আসা ঢাকের তালে-তালে নাচতে-নাচতে যেতে থাকে ছোট্ট রিচাও।


-----------------------------------

Comments :0

Login to leave a comment