CPI(M) CHALLENGES RSS

কিভাবে আরএসএস’কে চ্যালেঞ্জ লালঝান্ডার
জানালেন রামচন্দ্র ডোম

রাজ্য জেলা

CPIM BJP RSS WEST BENGAL POLITICS BENGALI NEWS

অনিন্দ্য হাজরা

তাঁদের খালি চোখে দেখা যায় না। যেন ছায়া শরীর। কিন্তু তাঁরা আশেপাশেই রয়েছে। আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকে। সময় হলেই গর্ত থেকে বেরোয়। চারিদিক একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে খোঁজ চালায় উপযুক্ত ‘শিকারের’। শিকারের সন্ধান পেলেই খুলে বসে নিজেদের ঝাঁপি। শুরু হয় ‘হুইসপার ক্যাম্পেইন’। বল গড়ায় সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। একটি একটি করে মস্তিষ্কের দখল নেয় উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। 

রাজ্যে আরএসএস’র বৃদ্ধি যেমন বাস্তব, তেমনই বাস্তব গড়ে ওঠা লাল ঝান্ডার চ্যালেঞ্জ। একের পর এক আন্দোলন হচ্ছে গ্রামে শহরে। বিডিও অফিস, জেলা পরিষদ ঘিরছেন ছাত্র-যুব-মহিলারা। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম জানাচ্ছেন যে আরএসএস এবং বিজেপি’কেও চিনতে পারছেন মানুষ। বামপন্থীদের প্রচার-আন্দোলন চেনানোর কাজে সহায়ক হয়েছে। কারা আন্দোলনে দেখছে মানুষ। যেমন তৃণমূল স্কুল বন্ধ করছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে রাস্তায় আরএসএস-বিজেপি নেই। রয়েছে বামপন্থীরা। 

এই মুহূর্তে রাজ্যে আরএসএস’র শাখার সংখ্যা ৩৫০০। আরএসএস শাখা চালায় মূলত তিন ভাবে। সাপ্তাহিক জড়ো হওয়া বা সাপ্তাহিক আড্ডাকে বলা হয় ‘মিলন’। মাসে একবার জড়ো হওয়াকে বলা হয় ‘মন্ডলী’ এবং প্রতিদিন নিয়ম করে একত্রিত হয়ে শরীর চর্চাকিংবা প্রার্থনা করাকে বলা হয় ‘দৈনিক শাখা’।

আরএসএস’র তরফে সংগঠন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগঠনের বাইরে বেরোনো আটকাতে রয়েছে নানাস্তরীয় সুরক্ষা বলয়। কিন্তু তারপরেও যতটুকু জানা গিয়েছেসেই অনুযায়ী, এই মুহূর্তে রাজ্যে প্রতিদিন মিলিত হয় এমন শাখার সংখ্যা ১৫৬৪। তার মধ্যে উত্তরবঙ্গে ৪৯৩টিমধ্যবঙ্গে ৪৮৩টি এবং দক্ষিণবঙ্গে শাখার সংখ্যা ৬৮৮। 

ফ্যাসিস্ট ধাঁচের সংগঠন আরএসএস, হিন্দুরাষ্ট্রের প্রচার করে কৌশলে। কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক আঁতাত থেকে চোখ ঘুরিয়ে দিতে চায়। রাজ্যের সরকারে তৃণমূলের মেয়াদে তার বাড়বাড়ন্ত নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে লালঝাণ্ডা।

প্রসঙ্গতআরএসএস পশ্চিমবঙ্গের ধারণা অস্বীকার করে সাংগঠনিক ভাবে। সংঘের মতাদর্শ অনুযায়ী বঙ্গ প্রদেশ তিন ভাগে বিভক্ত। গঙ্গামহানন্দা নদীর উত্তরে বরেন্দ্র ভূমি বা উত্তরবঙ্গ, লালমাটির রাঢ় বঙ্গ বা মধ্যবঙ্গ এবং গাঙ্গেয় উপত্যকা নিয়ে দক্ষিণ বঙ্গ। মূলত প্রাক ইসলামিক যুগের বাংলার রাজনৈতিক বিন্যাস সাংগঠনিক কাঠামোয় ফুটিয়ে তুলেছে আরএসএস। 

সরাসরি পতাকা নিয়ে কোনও গ্রাম কিংবা পাড়া মহল্লায় প্রবেশ করে না আরএসএস। প্রাথমিক ভাবে তার জন্য বেছে নেওয়া হয় অজস্র ছায়া সংগঠনের কোনও একটিকে। এই সংগঠনগুলির মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মিডিয়ায় বেশ কিছুটা চর্চা হয়েছে সরস্বতী শিশু বিদ্যামন্দিরএকল বিদ্যালয় প্রক্রিয়া এবং বনবাসী কল্যাণ পরিষদ নিয়ে। কিন্তু এর বাইরেও নানা সংগঠনের নামে নিজেদের কর্মকান্ড চালায় আরএসএস। 

ঠিক কী ভাবে এলাকায় ঢোকে আরএসএস? সবার আগে তাঁরা বেছে নেয় সামাজিক কোনও কর্মকান্ডকে। যেমন ধরা যাক কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলকিংবা কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলো। সবার প্রথমে আরএসএস’র কোনও সেবাদল এলাকায় পৌঁছয়। সাধারণত মিশ্র এলাকা কিংবা তপশিলি জাতিউপজাতি কিংবা আদিবাসী প্রধান অঞ্চলকে বেছে নেওয়া হয় এই কাজের জন্য। 

সেখানে আরএসএস প্রভাবিত চিকিৎসকরা আরোগ্য ভারতীর ব্যানারে বিনামূল্যে চিকিসা পরিষেবা দেন। তাঁদের সহায়তা করতে এসে পৌঁছয় স্বেচ্ছাসেবকরা। বলিয়ে কইয়ে এই স্বেচ্ছাসেবকরা নানা বয়সের হন। তাঁদের বাহ্যিক আবরণে কোনও রণের পাশ্চাত্য প্রভাব থাকে না। বরং ভারতের ‘সনাতনী’ সংস্কৃতির প্রতি থাকে গভীর টান। অন্তত সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হয় এমন চেহারাই।

এই স্বেচ্ছাসেবকরা ত্রাণের কাজ চালান এবং চিকিৎসক দলকে সহায়তা করেন। খোলা হয় খিচুড়ি বিলি কেন্দ্র। গ্রামে কলেরার প্রকোপ দেখা দিলে কীভাবে তার মোকাবিলা করা উচিতগ্রামীণ মানুষকে হাতেকলমে সেই কাজ করে দেখান তাঁরা।

একইসঙ্গে চলে সূক্ষ্ম সাম্প্রদায়িক প্রচার। গরিব জনতার দুরবস্থার জন্য আরেকদল হতদরিদ্র মানুষকেই দায়ী করা হয়। প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে তো বটেই। সেই প্রচার চালানোর পাশাপাশি চলে ‘লোক’ খোঁজার কাজ। তাঁদের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে যদি কয়েকজন স্থানীয় মানুষ দলে যোগ দেন, তাহলে তাঁদের নিয়ে শুরু হয় মাসিক মিলন। 

তপশিলি জাতি ও উপজাতি প্রধান অঞ্চলে এই হিন্দুত্ববাদী প্রচার মূল শত্রু চিহ্নিত করে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষকে। খুঁচিয়ে তোলা হয় দেশভাগের ক্ষত। এই কাজে আরএসএস’র হাতিয়ার ভুল তথ্য এবং পরিসংখ্যান। একইসঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও চলে অপপ্রচার। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয় নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের মানুষকেই। যদিও বৈজ্ঞানিক তথ্য অন্য কথা বলছে। এছাড়া এনআরসি ও সিএএ’র লোভ দেখিয়েও চলে প্রচার। সেই প্রচারের নির্যাস, মুসলমান প্রধান গ্রাম ফাঁকা হলে সেই জমির দখল নিতে পারবেন হিন্দু প্রধান গ্রামের মানুষ। ওপার বাংলায় ঠিক যেই প্রচার চালিয়ে রাজাকার বাহিনী সংগঠিত করেছিল সেদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি। মিশ্র এলাকায় ভিনধর্মী প্রেমের সম্পর্ককে ঘিরেও চলে নিকৃষ্ট সাম্প্রদায়িক প্রচার। ভিত তৈরি হয় ‘লাভ জিহাদ’-এর। 

আদিবাসী প্রধান অঞ্চলে আরএসএস প্রচার চালায়, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ বৃহত্তর হিন্দু সম্প্রদায়েরই অংশ। আদিবাসী মানুষের নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস, যা প্রকৃতি পূজার অঙ্গ, তাকে অস্বীকার করে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালান সংঘের প্রচারকরা। সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ হিসেবেই ঝাড়গ্রাম পুরুলিয়ার আদিবাসী প্রধান অঞ্চলগুলিতে বৃদ্ধি পেয়েছে হনুমান মন্দিরের সংখ্যা। একইসঙ্গে আদিবাসী অঞ্চলে খৃষ্টান পাদ্রীদের বিরুদ্ধেও জনতাকে  ক্ষেপিয়ে তোলার কাজ করে আরএসএস। 

মাসিক মিলনে যোগ দেওয়া নতুন কর্মীদের তৎপরতা এবং কর্মদক্ষতা ঝালাই করে স্থির হয় সাপ্তাহিক মিলন কিংবা দৈনিক শাখা তৈরির পরিস্থিতি রয়েছে কিনা। এলাকায় নুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির হদিস পেলে পুরোদমে কাজ শুরু করে দৈনিক শাখা।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস’র শাখা ছিল ৪১৩টি। ১২ বছরে বৃদ্ধির হার প্রায় ১০ গুণ।

এলাকায় কিঞ্চিত জনমত তৈরি হলে, এবং সেখানে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকলেস্কুলের সংখ্যা অপ্রতুল হলে স্কুল খোলার দিকে এগোয় আরএসএস। এই মুহূর্তে রাজ্যে আরএসএস পরিচালিত স্কুলের সংখ্যা ৩৩৬টি। পড়ুয়ার সংখ্যা ৮৮ হাজার। অর্থাৎ ঐকিক নিয়মে প্রতিদিন গড়ে ৮৮ হাজার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় করার কাজ চালাচ্ছে সংঘ। 

আরএসএস’র স্কুল মূলত দুই রকমের। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়টি দেখে বিদ্যা বিকাশ পরিষদ। তাঁরাই স্কুল খোলে। চেষ্টা চলে সিবিএসই বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার। সেই অনুমোদন না মিললে সংশ্লিষ্ট রাজ্য বোর্ডের অনুমোদন নিয়েই চালু হয় স্কুল। গত ১১ বছরে রাজ্যে মাধ্যমিক স্তরে ২২০টি এমন স্কুল নতুন তৈরি হয়েছে।

এর পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরে রয়েছে একল বিদ্যালয়। একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিশু মস্তিষ্কে প্রবেশ করানো হয় উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষ। প্রাতিষ্ঠানিক স্কুলগুলিতে তাও সংশ্লিষ্ট রাজ্য বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী পঠনপাঠন চালানোর দায় থাকে। কিন্তু এই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি কার্যত সমস্ত নজরদারির বাইরে। 

রাজ্যে বর্তমানে একল বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪০টি। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাসিক ১০-১৪ হাজার টাকা ভাতা দিয়ে থাকে সংঘ। 

পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য জায়গায় রয়েছে উত্তরবঙ্গের আরএসএস শাখাগুলি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলি প্রকাশ্যে মিলিত হয়এবং নিজেদের কর্মকান্ড করে। মধ্য এবং দক্ষিণবঙ্গের রাজনৈতিক বিন্যাস আলাদা হওয়ায় সেই সংখ্যা অনেকটাই কম। 

উত্তরবঙ্গের চা-বাগান অঞ্চলে নিবিড় প্রচার চালাচ্ছে আরএসএস। সুক্ষ্ম ভাবে ছড়ানো হচ্ছে পৃথক রাজ্যের দাবি। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের স্তরেও গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল,  চিকেনস্ নেক’ বা মহানন্দা করিডোরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এই অংশটিকে কেন্দ্র শাসিক অঞ্চলে পরিণত করা উচিত। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, আসলে সবটাই পুকুরে ঢিল ছোঁড়া। জলের গভীরতা মাপার জন্য ভাসানো হয়েছিল এমন কথা। জলের গভীরতা অর্থাৎউত্তরবঙ্গের মানুষের পৃথক রাজ্যের প্রশ্নে মনোভাব আঁচ করতে।

আরএসএস কর্মীরা সাধারণত চেষ্টা করেন বিজেপির থেকে পৃথক সত্ত্বা বজায় রাখার। পরিচিত আরএসএস’র মুখকে বিজেপি’র কোনও দৈনন্দিন কাজে দেখা যায় না। তাঁরা চুপিসারে নিজেদের প্রচার চালিয়ে যান। নিজেদের এই পৃথক দেখানোর দায় থেকেই বহুক্ষেত্রে বিজেপি সমালোচনাও করে থাকেন আরএসএস প্রচারকরা। 

যদিও নির্বাচনের আগে এই ‘হুইসপার ক্যাম্পেন’ বা চুপিসারে চালানো প্রচারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে সরাসরি কিংবা ঘুরিয়ে বিজেপির হয়ে ভোট চান সংঘ কর্মীরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্বাচনের সময় এক অঞ্চলের কর্মীরা অন্য অঞ্চলে গিয়ে ‘ভোটের কাজ’ করেন। 

আরএসএস’র এই নিবিড় প্রচারের ফল বঙ্গ বিজেপি ২০১৮’র পঞ্চায়েত এবং ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনে পুরেদমে পেয়েছিল। আরএসএস কর্মীরা সামাজিক কাজের জন্য পরিচিত হলে স্বাভাবিক নিয়মেই এলাকায় তাঁদের প্রভাব বাড়ে। কথার গুরুত্ব বাড়ে। সেই প্রভাব বিজেপির হয়ে জনমত গঠন করে ভর্তি করায় ভোটবাক্স।

২০১৯’র নির্বাচনে আরএসএস’র দৌলতে বিজেপির ভান্ডার যেই অঞ্চলগুলিতে ফুলে ফেঁপে উঠেছিললালমাটির দেশ তার অন্যতম। রাঢ় বাংলা। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই প্রভাব ফিকে হওয়ার পথে। 

কিন্তু কেনএত কিছু করেএত সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করেও জায়গা ধরে রাখতে পারল না কেন সংঘ এবং বিজেপি?

সিপিআই(এম) নেতৃত্ব বলছেন, এর মূলে রয়েছে সিপিআই(এম)’র নেতৃত্বে লড়াইয়ে বৃদ্ধি। পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোমের কথায়, ‘‘বিজেপির উত্থান ছিল পুরোটাই সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নির্ভর। বামপন্থীরা তৃণমূলকে আটকাতে পারবে না। তাই বিজেপির হাত শক্ত কর। এই প্রচার ছিল। একইসঙ্গে সাম্প্রদায়িক প্রচার তো ছিলই। সব মিলিয়ে ভালো ফল করেছিল বিজেপি। কিন্তু বামপন্থীদের আন্দোলনের কারণে সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই।’’

এই অঞ্চলের সিপিআই(এম) নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা অনুযায়ীতৃণমূল কার্যত বধ্যভূমি তৈরি করেছিল এই অঞ্চল জুড়ে। একদিকে ভারতী ঘোষের মতো সরকারি আধিকারিকদের ব্যবহার করে এলাকার পর এলাকা সিপিআই(এম) শূন্য করা হয়েছিল। অপরদিকে সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকেই দুষ্কৃতীদের দিয়ে তপশিলি জাতি এবং আদিবাসী প্রধান গ্রামগুলিতে হামলা চালানো হয়। এই দুষ্কৃতীদের একাংশ ধর্মের বিচারে মুসলিম। সেই দগ্ধ জনপদগুলির মাটিতে দাঁড়িয়ে আরএসএস প্রশ্ন তোলে, ‘‘যাঁরা তোমাদের ঘর পোড়ালোতাঁদের ধর্ম কী?’’ 

হতদরিদ্র মানুষের বিপন্নতাকে পণ্য করে বিস্তার লাভ করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। প্রশ্রয়ও মেলে তৃণমূলের থেকে। জেলা মফস্বলের শহরগুলিতে শুরু হয় রামনবমী এবং হনুমান জয়ন্তীর অস্ত্র মিছিল। যুব মোর্চার নেতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেই মিছিলের উদ্যোক্তা তৃণমূলের কোনও না কোনও স্তরের সাংগঠনিক নেতা বা জনপ্রতিনিধি। 

এই বিন্যাস ধাক্কা খেয়েছে। লালমাটির অধিকাংশ জনপদেই ফিরে এসেছে লাল ঝান্ডা। ঝাড়গ্রামের একের পর এক ব্লকে, গোপীবল্লভপুর থেকে শুরু করে নয়াগ্রাম হয়ে বিনপুরবৈঠকী সভায় জন সংযোগ সারছেন সিপিআই(এম) সংগঠকরা। সংগঠনে প্রবেশ করেছে নতুন রক্ত। গরিব মানুষের উঠোনে রাত কাটাচ্ছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। গড়ে উঠছে নতুন নতুন সমীকরণ। মানুষ বসে ঠিক করছেন ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম থেকে পঞ্চায়েতে কে প্রার্থী হবেন।

একইসঙ্গে তৃণমূলেরও অবস্থা ভালো নয়। মানুষ নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন, ‘বামের বদলে রামের’ হাত শক্ত হলে পরিস্থিতি শুধরোবে না। ১০০ দিনের কাজ নিয়ে রাজ্যে দুর্নীতি আর কেন্দ্রের টাকা বন্ধ করা দ্বন্দ্বও মানুষকে নতুন করে ভাবাচ্ছে।

কিন্তু আরএসএস’র সামাজিক প্রকল্পগুলির প্রভাব কি নির্বাচনে পড়বে না?

রামচন্দ্র ডোম জানাচ্ছেন, ‘‘একল স্কুল কিংবা সরস্বতী বিদ্যামন্দির- এগুলির কোনওটাই সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হতে পারে না। আরএসএস বিজেপি নয়া জাতীয় শিক্ষানীতীর নামে শিক্ষা ব্যবস্থাটাকেই গরিব আদিবাসী তপশিলি মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত করেছে। আর রাজ্য সরকার পরের পর স্কুল বন্ধ করাচ্ছে। সেখানে আরএসএস’র প্রতিবাদ কোথায়গরিবের ছেলেকে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে তাড়িয়ে দুটো একটা একল খুললেই তো আর হবে না। সাধারণ মানুষ সব বুঝতে পারছেন। আমরাও আমাদের কাজের গতিজনসংযোগের গতি বৃদ্ধি করেছি।’’

Comments :0

Login to leave a comment