CPI(M)

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে কুৎসার জবাব দিল সিপিআই(এম)

জাতীয়

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিজেপি-কে আড়াল করতে গিয়ে এখন সিপিআই(এম)’র গায়ে কাদা ছেটাতে তৎপর হয়ে উঠেছে গদি মিডিয়ার একাংশ। সিপিআই(এম)-ও নির্বাচনী বন্ডের সুবিধাভোগ করেছে বলে টাকার অঙ্ক তুলে ধরে শুক্রবার সকাল থেকে প্রচার চালায় কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম। সেই সূত্র ধরে বিজেপি আইটি সেলও কুৎসা করতে শুরু করে দিয়েছে। অথচ নির্বাচনী বন্ডের নীতিগতভাবে বিরোধী সিপিআই(এম) এবং এর বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল সুপ্রিম কোর্টে। ফলে এদিন এই সব প্রচার ‘ভ্রান্ত এবং ভিত্তিহীন’ বলে জোরালোভাবে জানিয়ে দিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। এরই সঙ্গে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ওই বিভ্রান্তিমূলক প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যমকে।
বৃহস্পতিবারই ‘অসাংবিধানিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে নির্বাচনী বন্ড বাতিলের ‘ঐতিহাসিক’ রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। রায় প্রকাশের পরেই ‘আমরা খুশি যে সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চের সর্বসম্মত এই রায় আমাদের বিরোধিতাকেই মান্যতা দিয়েছে’ বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন ইয়েচুরি। বস্তুত সিপিআই(এম)-ই একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা শুধুমাত্র ‘নেব না’ বলে ঘোষণাতে থেমে না থেকে এই বন্ডের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। কেরালায় শাসন ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও নীতিগত অবস্থানে দৃঢ় থেকে কোনও নির্বাচনী বন্ড স্বীকার করেনি সিপিআই(এম)। তার ওপরও এদিন সিপিআই(এম)’র কোষাগারে নির্বাচনী বন্ডের অর্থ ঢুকেছে বলে প্রচার চলতে থাকায় পালটা ব্যাখ্যা দিয়ে বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছে পার্টি। কারণ, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ২৮ হাজার ৩০টি নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে। যার বিক্রয় মূল্য ১৬ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের এক কানাকড়িও ঢোকেনি সিপিআই(এম)’র কোষাগারে—সেই কথাই এদিন ফের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় পার্টি।
এদিন পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই প্রচার সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। বাস্তবে, নীতিগতভাবেই সিপিআই(এম) নির্বাচনী বন্ড নিতে অস্বীকার করেছে। একারণেই ওই বন্ডের জন্য নির্দিষ্ট স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খোলেনি সিপিআই(এম) যাতে আইন অনুযায়ী বন্ড গ্রহণ করতে হয়। উলটে নীতিগত বিরোধিতার প্রশ্ন থেকেই ওই বন্ডের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে সিপিআই(এম)।
কোন দলের কোষাগারে কত টাকা জমা পড়েছে নির্বাচনী বন্ডের দৌলতে, সেই তালিকা তুলে ধরে এক্স হ্যান্ডেলে এদিন ইয়েচুরি অভিযোগ করেছেন, ‘নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে সিপিআই(এম) অর্থসাহায্য গ্রহণ করেছে বলে বিভ্রান্তিমূলক, মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে সংবাদ মাধ্যমের একাংশ।’ ইয়েচুরির দাবি, ‘সংবাদ মাধ্যমের যে অংশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ক্ষতিকর প্রচার চালাচ্ছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের পাশাপাশি ক্ষমাও চাইতে হবে তাদের।’
ইয়েচুরির প্রকাশিত তালিকায় দেশের জাতীয় এবং আঞ্চলিক অধিকাংশ দলের নাম থাকলেও সিপিআই(এম) সহ কোনও বামপন্থী দলেরই নাম নেই। ২০১৭-১৮ আর্থিক বর্ষে চালু হওয়া নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পে প্রথম থেকেই শীর্ষে রয়েছে বিজেপি। ওই দলের তহবিলে যে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কর্পোরেটদের অর্থ গচ্ছিত হয়েছে তা প্রমাণ হয়ে যায় তালিকা থেকেই। ওই দল ২০১৭-১৮ সালে ২১০ কোটি, ২০১৮-১৯ সালে এক লাফে ১৪৫০ কোটি, ২০১৯-২০ সালে লোকসভা ভোটের সময়কালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৫৫ কোটি, ২০২০-২১ সালে হ্রাস পেয়ে ২২ কোটি, ২০২১-২২ সালে বিপুল পরিমাণ বেড়ে ১০৩৩ কোটি এবং ২০২২-২৩ সালে সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ১২৯৪ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে। পরের স্থানে কংগ্রেস থাকলেও টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ বিজেপি’র থেকে অনেকটাই কম। আবার সেঅর্থে আঞ্চলিক দল হয়েও নির্বাচনী বন্ড থেকে কম টাকা আয় হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের! তৃণমূলের কোষাগার বছর বছর স্ফীত হয়েছে নির্বাচনী বন্ড থেকে আয়ে। ২০২১-২২সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের সময় নির্বাচনী বন্ড থেকে তৃণমূলের ঘরে ঢুকেছে ৫২৮ কোটি টাকা!

Comments :0

Login to leave a comment