EDITORIAL

দলীয় দখলদারি

সম্পাদকীয় বিভাগ

editorial election Commission  bengali news

নির্বাচন কমিশনকে কুক্ষিগত করে শাসকদলের স্বার্থে ব্যবহারের লক্ষ্যে যেমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকার তেমনি বিচার ব্যবস্থাকেও নিয়ন্ত্রণে এনে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য মরীয়া হয়ে উঠেছে। মোদী সরকার চায় আরএসএস-বিজেপি’র প্রতি অনুগত আমলারাই হোক নির্বাচন কমিশনের সদস্য। কমিশনার নিয়োগ ব্যবস্থা এমনভাবে পুনর্গঠিত করতে তারা চায় যাতে বাছাই পর্বে শাসকদল তথা সরকারের প্রাধান্য থাকে। যে কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশন অর্থাৎ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হবে এটাই প্রশ্নাতীত সত্য। কিন্তু গণতন্ত্রের জননীর আধিপত্যকামী সন্তানরা সেটা মানতে নারাজ। তারা চান তাঁদের পছন্দের লোককে তারা নিজেরাই নির্বাচন কমিশনার ও মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদে বসাবেন। তাতে কমিশন তাদের হয়ে চোখ বুঝে কাজ করতে পারবে। ভোটে জেতার প্রাথমিক পর্ব তারা এভাবেই আগাম সেরে রাখতে চান। দে‍শের সুপ্রিম কোর্ট গণতান্ত্রিক ভারতের সংবিধানের মর্যাদা রক্ষায় নির্বাচনে যাতে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন প‍‌ড়ে সেই জন্য নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। কমিশনার নিয়োগের জন্য যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে যাতে সরকার বা শাসকদলের নিরঙ্কুশ একাধিপত্য না থাকে তাই তিন সদস্যের প্রার্থী বাছাই কমিটি করে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী, দে‍‌শের প্রধান বিচারপতি ও বিরোধী দলনেতা হবেন সেই কমিটির সদস্য। কিন্তু মোদী সরকার এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করছে। তারা চায় প্রধান বিচারপতি যেন কোনও অবস্থাতেই কমিটিতে না থাকেন। সেই জায়গায় একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকবেন। অর্থাৎ কমিটিতে দু’জন থাকবেন সরকারের অর্থাৎ শাসকদলের প্রতিনিধি, একজন বিরোধী। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শাসকদল তাদের পছন্দের লোককেই বেছে নেবে।
একইভাবে বিচার ব্যবস্থাকেও কুক্ষিগত করতে নানাভাবে ছক কষা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও সরকার চায় বিচারপতি নিয়োগে সরকারের প্রাধান্য। সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য যাদের বাছাই করা হবে তারা অবশ্যই হবেন আরএসএস-বিজেপি ঘনিষ্ঠ। অন্য কোনও দলের ঘনিষ্ঠ তো দূরের কথা নিরপেক্ষ হওয়াও চলবে না। তা‍‌ই বাছাই কমিটি এমনভাবে গঠন করতে চায় যেখানে শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে সরকারের প্রতিনিধিরা। বিচারপতি নিয়োগে এ‍‌ই ধরনের সরকারি আধিপত্যের প্রস্তাব সংবিধানের মূল ভাবনার বিরোধী বলে সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বর্তমানে কলেজিয়ামের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ হয়। সুপ্রিম কোর্ট বরিষ্ঠ বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত হয় এই কলেজিয়াম। কলেজিয়ামের সুপারিশ করা ব্যক্তিদের সরকার বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করে। কিন্তু মোদী সরকার এই নিরপেক্ষ নিয়োগ ব্যবস্থার বিরোধী। তাই কলেজিয়ামের পাঠা‍নো ব্যক্তিদের নিয়োগ না করে মাসের পর মাস ফেলে রাখছে। প্রস্তাবিতদের মধ্যে যাতে সরকার নিজেদের কাছাকাছি মনে করছে কেবল তাদেরই নিয়োগ করছে।

গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে মোট ৭০জনের সুপারিশ ফেলে রেখেছে সরকার। তাদের নিয়োগ করছে না। এদিকে বিচারপতির অভাবে হাজার হাজার মামলা জমে আছে বছরের পর বছর ধরে। বর্তমানে দেশের হাই‍‌কোর্টগুলিতে মোট ৩৪০ বিচারপতির পদ খালি। অথচ মামলা জমে আছে ৬০ হাজারের বেশি। একই অবস্থা সুপ্রিম কোর্টে। দে‍‌শের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে যখন বিচারপতির নতুন পদ সৃষ্টি জরুরি তখন বর্তমান পদই শূন্য রেখে দেওয়া হচ্ছে। আরএসএস’র কাছাকাছি না হলে কিছুতেই মোদীরা বিচারপতি নিয়োগ করবেন না।

Comments :0

Login to leave a comment