rg kar

আর জি কর নিয়ে ডিএনএ বিশেষজ্ঞের রিপোর্ট, সঞ্জয় ছাড়া আরও এক মহিলা, পুরুষের থাকার সম্ভাবনা প্রবল!

রাজ্য

আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলায় নয় মাস পরেও এখনও দ্বিতীয় দফার চার্জশিট পেশ করতে পারেনি সিবিআই। তলব ও জেরা প্রক্রিয়া কার্যত থমকে। দেশ জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করা এমন সংবেদনশীল ঘটনাতেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আশ্চর্যরকম নিস্পৃহ মনোভাবে প্রশ্নও উঠেছে। এরই মধ্যে আরজি করে এই ধর্ষণ-খুনের মামলায় মঙ্গলবার আদালতে নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি হলো। 
নির্যাতিতা পড়ুয়া চিকিৎসকের পরিবারের তরফে ডিএনএ বিশেষজ্ঞের একটি রিপোর্ট এদিন আদালতে পেশ করা হয়। সিবিআই’র চার্জশিটের দাবিকে নস্যাৎ করে সেই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, পড়ুয়া চিকিৎসকের দেহে এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের নমুনা ছাড়াও আরও একজনের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে এবং তিনি মহিলা! চাঞ্চল্যকর এই রিপোর্ট এদিন নিম্ন আদালতে বিচারকের কাছেও পেশ করা হয়। 
নির্যাতিতার পরিবারের তরফে ডিএনএ বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম মজুমদারের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ক্রাইম সিনে অর্থাৎ অপরাধস্থলে সিবিআই’র দাবিমতো ‘একমাত্র অভিযুক্ত’ সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়াও আরও এক মহিলার উপস্থিতি জানা গিয়েছে। নির্যাতিতার দেহ সে স্পর্শও করছিল। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, শুধু মহিলা নন, অন্য পুরুষের উপস্থিতি থাকাও অস্বাভাবিক নয়। সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতিক্রমে ডিএন‌এ বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম মজুমদারের দ্বারস্থ হয়েছিল পরিবার। তিনি ডিএনএ রিপোর্টের ভিত্তিতে আলাদা করে তদন্ত করে এই রিপোর্ট জমা দেন।’
স্বাভাবিকভাবেই এই রিপোর্টে মর্মবস্তু সিবিআই’র তদন্ত রিপোর্টের সম্পূর্ণ বিপরীত। গত বছরের ৭ অক্টোবর নিম্ন আদালতে আর জি করে করে কর্মরত পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় কেবলমাত্র সঞ্জয় রায়কেই একমাত্র অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করে চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। পরবর্তীতে নিম্ন আদালতে গত ১১ অক্টোবর এমন কথা জানানোর পরে ফের নভেম্বরে সিবিআই আদালতে জানায়, সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে বায়োলজিক্যাল তথ্যপ্রমাণ মিলেছে তাই প্রথম দফার চার্জশিট নাম যুক্ত করা হয়েছিল। তার অর্থ এই নয় যে আর কেউ যুক্ত নয়। অথচ সেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তকারী আধিকারিক সীমা পাহুজা গত ১৩ ডিসেম্বরে আদালতে ৯০ দিন পেরিয়ে গেলেও ‘যথেষ্ঠ প্রমাণ’ না থাকায় দ্বিতীয় চার্জশিট দিতে না পারার কথা অবলীলায় জানিয়েছেন। ফলাফল? ধর্ষণ-খুনের মামলায় জামিন পেয়ে যায় সন্দীপ ঘোষ, অভিজিৎ মণ্ডল! তার আগে দিল্লি থেকে আসা সিএফএসএলের আধিকারিকরা গত ১৪ আগস্ট সরেজমিনে আরজি করের চারতলার সেমিনার রুম পর্যবেক্ষণ করে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে। তারপর সিবিআই-কে  রিপোর্ট দেয় সেপ্টেম্বরে। গত ১২ সেপ্টেম্বর সিবিআই’র কাছে সেই রিপোর্ট পাঠায়। কলকাতা পুলিশের তদন্ত এমনকি সিবিআই’র প্রথম চার্জশিটের বয়ানের গুরুত্বপুর্ণ অংশকেও কার্যত খারিজ করে দিয়ে সিএফএসএলের রিপোর্ট বলেছিল সেমিনার রুমের যা অবস্থান তাতে একজন ব্যক্তি সেখানে ঢুকলো, তারপর ধর্ষণ-খুন করে বেরিয়ে গেল অথচ কারো চোখে পড়লো না, এটার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নার্সিং স্টেশনে চব্বিশ ঘণ্টা কর্তব্যরত নার্স, চিকিৎসক, হাসপাতালের কর্মীরা থাকে। সেটা টপকেই করিডর দিয়ে আসতে হবে সেমিনার রুমে। যদিও সিবিআই চার্জশিটে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখই করেনি। 
এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে ডিএনএ বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম মজুমদারের বক্তব্য জানতে চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তিনি কি তাঁর রিপোর্টে দলবদ্ধ ধর্ষণের কথা বা ক্রাইম সিনে আরও অন্য ব্যক্তি, মহিলার উপস্থিতির কথা বলতে চাইছেন, তার সপক্ষে কী প্রমাণ আছে, তা আদালতে জানাতে হবে ডিএনএ বিশেষজ্ঞকে। সিবিআই’র তরফে যদিও দাবি করা হয়েছে, এভাবে আদৌ সমান্তরাল কোনও তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তি কী? 
এর আগে একাধিকবার তদন্তের গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সন্তান হারানো জননী। সাংবাদিকদের সামনে এর আগে নির্যাতিতার বাবা-মা বলেছিলেন, সঞ্জয় একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীও ছিল। ও জানে কারা যুক্ত। একদিন হয়তো ও মুখ খুলবে, এটাই চাই। প্রকৃত দোষীদের নাম ও বলবে। আমার মেয়ের বিচারের জন্য আমাদের লড়াই চলবে। যতদিন সময় লাগবে, ততদিন। সেটা ছয় মাস, ছয় বছর, ষাট বছর হতে পারে। বিচারের জন্য লড়ছি। সিবিআই’র তদন্তে আর আস্থা রাখতে পারছি না। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের একাধিক তথ্য আমরা দিলেও সিবিআই’র তদন্তে তার কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি।

Comments :0

Login to leave a comment