প্রতিবাদ করতে ভোলেনি কলকাতা, বলা ভালো কলকাতা ফুটবল। বিগত কয়েকদিন ধরে বাংলা, বাঙালি নিয়ে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি। বাংলা ভাষায় কথা বলা ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের পুশ ব্যাক করা হচ্ছে বাংলাদেশে। সীমান্ত এলাকায় তাদের জেসিবি করে বাংলাদেশে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার চিত্র দেখেছে এই দেশ।
এই পরিস্থিতিতে গতকালের ডুরান্ড কাপের ম্যাচে গর্জে উঠলো যুবভারতী। গতকাল ইস্টবেঙ্গল এবং নামধারীর খেলায় বাঙালীদের ওপর চলতে থাকা আক্রমণের বিরুদ্ধে টিফোর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানালেন লাল হলুদ সমর্থকরা।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কথা মাথায় এলেই যেই কথা মাথায় আসে তা হচ্ছে উদ্বাস্তু আন্দোলন। পুর্ববঙ্গ থেকে দলে দলে মানুষ দেশের ভাগের যন্ত্রণা বুঁকে নিয়ে এই বাংলায় আসেন। যাদবপুর, টালিগঞ্জ, বিজয়গড়, হালতু, কসবা, কল্যাণীর মতো বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হলো বসতি। ব্রিটিশদের চক্রান্তে দুই দেশ ভাগ হয়েছে হয়তো কিন্তু আবেগ বাঙালী হৃদয় থেকে কখনও ভাগ হয়ে যায়নি।
গতকাল যুবভারতীতে যেই টিফো নিয়ে এতো আলোচনা সেখানে লেখা ছিল মাত্র দুটি লাইন – ‘ভারত স্বাধীন করতে সেদিন পড়েছিলাম ফাঁসি! মায়ের ভাষা বলছি বলে আজকে বাংলাদেশী?’
ঠিকই তো, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যেই প্রদেশ বার বার ব্রিটিশদের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে তা হচ্ছে তৎকালিন অবিভক্ত বাংলা। বিনয় বাদল দীনেশ, ক্ষুদিরাম বসু, মাস্টার দা, সুভাষ বোসদের আন্দোলন পরাধীন ভারতের মানুষের মধ্যে তৈরি করেছিল ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ের অঙ্কুর। সিপাই বিদ্রোহ যাকে ইতিহাসবীদরা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের লড়াই বলে চিহ্নিত করেন তাও হয়েছিল এই বাংলার মাটিতে। পাঞ্জাব এবং বাংলা এই দুই দেশ থেকে সব থেকে বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন দেশকে স্বাধীন করতে। আর এই দুই দেশের ওপর দিয়েই টানা হয়েছে কাঁটাতার। যা আজও বাঙালীর মনে একটি খত হয়ে থেকে গিয়েছে।
বাংলাদেশি ভাষা বলে কোন ভাষা পৃথিবীতে নেই কিন্তু দিল্লি পুলিশ বাংলা ভাষাকে বাঙলাদেশি ভাষা বলে চিহ্নিত করেছে। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন তার আগে বাংলা ভাষা নিয়ে বাঙালি অস্মীতাকে হাতিয়ার করে নির্বাচন জিততে চাইছে তৃণমূল বিজেপি। কিন্তু আসল আক্রমণ হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণির মানুষদের ওপর। নিজের ভাষায় কথা বললে তাদের ওপর নামিয়ে আনা হচ্ছে আঘাত। সেই আক্রমণের বিরুদ্ধে গতকাল সরব হলো কলকাতা ময়দান।
এর আগে আরজি কর আন্দোলন হোক বা এনআরসি আন্দোলন প্রতিবার সরব থেকেছে কলকাতা ময়দান। আরজি কর আন্দোলনের সময় বিচারের দাবিতে এক সাথে পথে নেমেছিল কলকাতার তিন প্রধান। এনআরসি আন্দোলনের সময় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের একটি টিফো নজর টেনেছিল। তাতে লেখা ছিল – ‘রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়।’
Comments :0