‘‘গোটা দেশে গণতন্ত্র কে সঙ্কুচিত করা হচ্ছে। দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আগে সবাই ভোট দিতে পারতো না। সাম্রাজ্যবাদী শাসনে সবাই ভোট দিতে পারতো না। সংবিধান সবাইকে ভোট দেওয়ার অধিকার দিয়েছে। বিজেপি সেটা চায়না। বিহারে ভোটার আগে এই কাজ শুরু করেছে। ভোটারদের সন্দেহ করা হচ্ছে। ভোটের তালিকা ঠিক করার কাজ কমিশনের। ওদের স্বীকার করতে হবে যে ওরা ভুল। এখানে পঞ্চায়েত পৌর ভোট কারচুপি হয়। এখন হরিয়ানা মহারাষ্ট্র নির্বাচনে দেখা গিয়েছে কারচুপি। অধীর চৌধুরি, মহম্মদ সেলিমকে হারানো হয়েছিল এই সব কিছুকে ব্যবহার করে।’’ এসআইআর প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল এবং বিজেপিকে এক যোগে নিশানা করলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
বৃহস্পতিবার সিপিআই(এম) রাজ্য সদর দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে সেলিম বলেন, ‘‘মমতা এই বছরের শুরুতে বলেছিল ভোটার তালিকায় ভুল আছে, ওদের নেতারা সেই সময় বছরের বেরিয়েছিল তালিকা নিয়ে। আসলে নির্বাচনের কারচুপিকে নিয়ে আসা হয়েছে ভোটার তালিকায়। এখন আমাদের বলছে প্রমাণ দিতে যে আমরা নাগরিক। মৃতদের নাম বাদ দেওয়া হয় না তালিকা থেকে, অথচ যারা জীবিত তাদের বলছে প্রমাণ দিতে যে সে নাগরিক!’’
সেলিম বলেন, ‘‘মমতা যখন আদবানির মানসকন্যা ছিলেন তখন বলেছিল আমাদের রাজ্যের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশিদের নাম আছে। ২০০৬ সালে বলেছিল ওই তালিকায় ভোট করতে দেবে না। আরএসএসের এজেন্ডা এই রাজ্য নিয়ে এসেছে মমতা। মানুষের মধ্যে ভাগের রাজনীতি করছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের বৈচিত্র অনুযায়ী এক এক জায়গায় এক এক রকমের উচ্চারণ, কিন্তু তা বলে তাকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া অন্যায়।’’
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকের কথায়, আরএসএস-বিজেপি ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। এই রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। তৃণমূল গুন্ডা ব্যবহার করে ভোটে জয়ী হয়, বিজেপি নির্বাচন কমিশনকে ব্যাবহার করে জয়ী হয়।
রাজ্যের দুই ইআরওকে শাস্তি দেওয়ার প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘ইআরও’রা অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার কমিশনের আছে। মুখ্যমন্ত্রী আইন জানেন না। ভোটের লিস্ট করে রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে। নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে মমতা এবং কমিশন দুজনেই সমান দোষী।’’
কলকাতা পৌরসভার ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলরের বদলে ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচিকে তৃণমূলের নেতাকে প্রশাসনকি দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে রাজ্যকে আক্রমণ করেছেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি টাকায় তৃণমূল নিজের প্রচার করছে আইপ্যাককে ব্যাবহার করে। এটা সংবিধান বিরোধী। রাজীব গান্ধীর সময় কাজ ভাগ করা হয়েছে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। মমতা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাস করে না। তাই বিরোধীদের ডাকছে না। মুখ্যসচিব বিডিওদের ব্যবহার করে আইপ্যাকের কাজ করছে।’’
আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও এখনও রাজ্যে চালু হয়নি ১০০ দিনের কাজ। ওবিসি সংক্রান্ত মামলার কারণে জয়েন্টের ফল প্রকাশ হয়নি। বিভিন্ন কলেজে খালি রয়েছে আসন। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে মমতা ব্যানার্জি মিথ্যাচার করছে। আদালতে ধাক্কা খাচ্ছে তাও সেটা মানছে না। ডিএ হোক বা ১০০ দিনের কাজ কোনটার ক্ষেত্রে রায় মানা হচ্ছে না। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক ভর্তি হচ্ছে না। ওবিসি নিয়ে সরকার সমস্যা মেটাতে পারছে না। সরকারের এসে মমতা বামফ্রন্ট সরকারের তৈরি করা আইন মানেনি। আর মমতা এই অবস্থায় বিরোধী এবং আদালতকে নিশানা করে হাত গুটিয়ে বসে থাকছে।’’
আগামী ৯ আগস্ট আরজি কর ঘটনার এক বছর হচ্ছে, ওই দিন অভয়া মঞ্চ এবং জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্সের পক্ষ থেকে কালীঘাট অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেলিম বলেন, ‘‘আর জি কর কাণ্ডে নিয়ে জুনিয়র চিকিৎসক, অভয়া মঞ্চ নিজেদের মত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ তখন শায়িত ছিল রাজ্য সপ্তরে, আমরা তখন সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানাই, ছাত্র যুবরা শববাহী শকট আটকানোর পর সবাই সব জানতে পারেন। এক বছর ধরে মানুষ যে ভাবে পথে নেমেছে তাকে কুর্নিশ জানিয়েছি। আমরা শাস্তি চেয়েছি। মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে আমাদের অনেক কর্মীদের। যারা ১৪ তারিখ রাতে গিয়েছিল হামলা করতে, তাদের ধরা হয়নি। আজ পর্যন্ত প্রশাসন থেকে বলা হয়নি কারা ওই কাজ করেছিল। জুনিয়র চিকিৎসক দের বদলি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, প্রতিবাদী চিকিৎসকদের বদলি করা হয়েছে। যারা প্রতিবাদ করেছিল তাদের ভয় দেখানো হয়েছে। আজকেও অভয়ার বাবা-মা অমিত শাহের দেখা পাননি। যারা ইডি সিবিআই দেখায় তারা কি করছে? এদের দিয়ে তো এই ঘটনার ইনসাফ পাওয়া গেলো না। লড়াই জারি থাকবে। সাধারণ মানুষকে আবেদন করবো এই আন্দোলনে সামিল হোন।’’
Comments :0