The manifestation of Hindutva

এটাই হিন্দুত্ব, এরাই হিন্দুত্ববাদী

সম্পাদকীয় বিভাগ

যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞান বর্জিত হিন্দুত্ববাদের আফিম খাইয়ে একাংশের মানুষকে এতটা মনুষ্যত্ব বোধহীন ও মানবিকতা বোধহীন করে তোলা হচ্ছে যে তারা চরম নৃশংস ও বর্বর আচরণ করতেও দ্বিধাবোধ করছে না। ধর্মান্ধতার মগজ ধোলাই তাদের মধ্যে এমন এক জান্তব উন্মাদনা তৈরি করে যে তারা মানুষকে মানুষের চোখে না দেখে হিন্দুত্বের ধর্মান্ধ চোখে। এই হিন্দুত্ববাদ মানুষকে মানুষ হতে শেখায় না, মানুষে মানুষে বিভেদ-বিভাজন করতে শেখায়, ভিন্ন ধর্মকে ঘৃণা করতে শেখায়। হিন্দুত্ববাদ ধর্মকে মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচরণের জায়গা থেকে তুলে রাজনীতিবর অঙ্গনে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। সংখ্যালঘুদের ভয়ঙ্কর শত্রু, সর্বনাশা, সব সমস্যার মূল হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরুদের জোটবদ্ধ করে ভোটের ফসল তুলতে চায়। ভারতীয় সভ্যতার প্রগতিশীল বিকাশের পথে বর্তমানে এই হিন্দুত্ববাদই ধ্বংসাত্মক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে রুদ্ররূপ ধারণ করে আছে। এই পশ্চাৎপদ ধ্বংসাত্মক শক্তির মোকাবিলা ছাড়া ভারতীয় সভ্যতার মুক্তি নেই।
এহেন হিন্দুত্ববাদীরা কর্নাটকের এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জনপ্রিয় মুসলিম প্রধান শিক্ষককে তাড়ানোর জন্য বিদ্যালয়ের পানীয় জলের ট্যাঙ্কে বিষ মেশাতেই দু’বার ভাবেনি। একেবারে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করেই তারা জঘণ্যতম কাজে নামে। অন্ধ মুসলিম বিদ্বেষ ও ঘৃণা তাদের মনুষ্যচেতনাকে এতটাই পশুস্তরে নামিয়েছে যে তারা একবারের জন্যও ভাবতে চায়নি যে ওই জল খেয়ে নিষ্পাপ ফুলের মতো কিছু ছাত্র-ছাত্রীরা অকালে চিরঘুমে চলে যেতে পারে। হিন্দুত্বের  মাদকতায় তারা এতটাই বিভোর যে তাদের মাথায় ঘুরছে কেবল মুসলিম প্রধান শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে তাদের কোনও মাথা ব্যথা নেই। তারা এটাও ভেবে দেখেনি বিষ মেশানো জল প্রধান শিক্ষক নাও খেতে পারেন কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা অতি অবশ্যই সেই জল খাবে। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদীরা তাদের ঘেন্নায় প্রধান শিক্ষককে তাড়াতে শিশু ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনকে বাজি রেখেছে। কোন মনুষ্যপদ বাচ্যের পক্ষে এমনটা কোনোদিন সম্ভব?
আরও অবিশ্বাস্য ব্যাপার, হিন্দুত্ববাদীরা নিজেরা নিজেদের হাতে পানীয় জলে বিষ মেশায়নি। বিদ্যালয়েরই এক নিরীহ শিশু ছাত্রকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যে কথা বলে কাজে লাগিয়েছে। শিশুটির হাতে বিষের শিশি দিয়ে ট্যাঙ্কের জলে মেশানোর ব্যবস্থা করেছে। যার পরিকল্পনায় এই ভয়ঙ্কর কাজটি হয়েছে সে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাম সেনা নেতা। সে এমন নারকীয় কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছে এক অবোধ শিশুকেও। ট্যাঙ্কের জল খেয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়বে, এমনকি কয়েক জনের মৃত্যুও হতে পারে। পরিকল্পনার সময় রাম সেনার নেতা এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল না। শিশুদের অসুস্থ হওয়া বা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া তার কাছে গৌণ ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। মুখ্য ছিল প্রধান শিক্ষককে কাঠগড়ায় তোলা। এমন একটা ঘটনার দায় সহজেই চাপিয়ে দেওয়া যাবে প্রধান শিক্ষকের ঘাড়ে। তখন সহজেই তাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এরাই হিন্দুত্ববাদী আর এটাই হিন্দুত্ববাদ। এরাই মুসলিম এবং পাকিস্তানকে এক বন্ধনীতে ফেলে ভারত থেকে মুসলিমদের বিচ্ছিন্ন করতে চায়। কেবলমাত্র ধর্মের পরিচয়ে দেশজুড়ে মুসলিমদের নানাভাবে  হেনস্তা করছে হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতীরা। শাসকের মদত ছাড়া এমনটা হওয়া সম্ভব নয়।

Comments :0

Login to leave a comment