জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা এবং ৩৫(ক) ধারা বাতিল করে ছ’বছর আগে। কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এবং প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্ন বিলি করে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার সহ গণতান্ত্রিক অধিকার এমনকি মানবাধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেবার ব্যবস্থা হয়েছিল ছ’বছর ধরে তার কোনও কিছুই পূরণ হয়নি। বদলে কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বময় কর্তৃত্ব এবং শাসক দলের দাপট বেড়েছে। কাশ্মীর পরিণত হয়েছে বন্দিশালায়। সরকারের সমালোচনা, বিরোধিতার অধিকার, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার কার্যত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির স্বাধীন কার্যকলাপ, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর চালু আছে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। অর্থাৎ মোদী সরকার তথা আরএসএস-বিজেপি’র বিরুদ্ধে কোনও অবস্থাতেই কোনও জনমত তৈরি হতে না পারে, সেই জনমতের ভিত্তিতে মানুষ রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে না পারে তারজন্য সদা সক্রিয় নিরাপত্তাবাহিনী। রাজনৈতিক নেতাদের গতিবিধির ওপর চলছে কড়া নজরদারি, তাদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ মোদী সরকার চায় না জম্মু-কাশ্মীরে কোনও বিরোধী রাজনীতির অস্তিত্ব বহাল থাকুক। লোক দেখানো গণতন্ত্রের স্বার্থে কাগজে কলমে অবশ্যই বিরোধী রাজনৈতিক দল থাকবে কিন্তু তাদের রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হবে সরকার ও শাসকদলের মরজিমাফিক। বিরোধী দলগুলির রাজনৈতিক প্রভাব ও সাংগঠনিক শক্তির প্রসার মোদী-শাহরা কোনোভাবে মেনে নিতে রাজি নয়। তাই যে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিরোধীদের সামনে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়ায় নিরাপত্তাবাহিনী।
৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের ষষ্ঠ বর্ষে সব বিরোধী দলই নানা কর্মসূচি নিয়েছিল। কিন্তু সরকার তাদের সে সুযোগ দেয়নি। ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, কংগ্রেস দিনটিকে কালোদিন হিসাবে চিহ্নিত করে বহু কর্মসূচি নিয়েছিল, হাজার হাজার সমর্থক জমায়েতও হয়েছিল কিন্তু সুবিশাল নিরাপত্তাবাহিনী তাদের ঘিরে রেখেছে। রাস্তায় মিছিল বিক্ষোভের সুযোগ দেয়নি। তথাপি জম্মু-কাশ্মীরের সর্বত্র সেখানকার মানুষ তাদের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেবার, জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেবার সোচ্চার দাবি তুলেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদী সরকারের স্বৈরাচারী পদক্ষেপ তারা মেনে নেয়নি।
৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে মোদী-শাহ অন্যরা অনর্গল দাবি করে আসছেন কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়ে গেছে। কাশ্মীর এখন নাকি অর্থনৈতিক পথে দ্রুত এগচ্ছে। বাস্তবে কাশ্মীরের অর্থনীতি ধুঁকছে। বেকারি লাগামছাড়া। শিল্পে কোনও বিনিয়োগ নেই। মানুষের জীবন জীবিকা বিপন্ন। সাফল্যের দাবি করে কাশ্মীরে নির্বাচন পাঁচ বছর বন্ধ রাখে। গত বছর নির্বাচন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা এখনো পায়নি কাশ্মীর। আসলে যতদিন না কাশ্মীরে ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল নিশ্চিত করতে পারছে ততদিন পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা মিলবে না। জেতার নির্বাচন ক্ষেত্রের পুনর্বিন্যাস করা হয় বিজেপি-কে জেতানোর হিসাব কষে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। এখন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে আবার জম্ম-কাশ্মীরকে ভেঙে জম্মুকে আলাদা করার। দক্ষিণ কাশ্মীরকে জম্মুর সঙ্গে জুড়ে দিয়ে হিন্দু প্রধান জম্মুকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্য করার যাতে বিজেপি ক্ষমতায় থাকতে পারে। আর মুসলিম প্রধান কাশ্মীর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসাবে থেকে যাবে।
Editorial
ছ’বছরে কাশ্মীর কি পেলো

×
Comments :0