আরজি করের চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণ, কসবা ল’কলেজে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনা, কালীগঞ্জে তামান্নাকে খুন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি এই সব নিয়ে নীরব থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওড়িশা কলেজে ছাত্রীর আত্মহত্যা নিয়ে হলেন সরব। মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় ৪৫ মিনিটের বক্তব্য জড়ে থাকলো ‘বাঙালি অস্মিতা’।
পরিযায়ী নির্যাতনে চুপ থেকেছেন দীর্ঘদিন। বামপন্থীরাই রাস্তায় নেমে তুলেছেন সেই অভিযোগ। কেবল মিছিল করেননি আক্রান্ত পরিবারের পাশে পৌঁছেছেন। সামনে বিধানসভা নির্বাচন। বিহারের কায়দায় ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ইঙ্গিত দিনকয়েক আগেই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ধর্মতলার সমাবেশে ২৭ জুলাই থেকে ‘ভাষা আন্দোলনের’ ডাক দিলেন তিনি। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে কর্মসংস্থান বা শিল্পায়ন নয় তৃণমূলের প্রধান হাতিয়ার বাঙালি আবেগ, ফের বোঝালেন তৃণমূল নেত্রী। এদিন বিজেপির পাশাপাশি বামপন্থীদের লাগাতার নিশানা করে গেলেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বামপন্থীরা বাংলাকে শেষ করে দিয়েছিল। ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু করে এই দিনটি শহীদ দিবস হিসাবে এবং গণতন্ত্র বাঁচাও দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ২১ জুলাই আন্দোলন না হলে সচিত্র ভোটার কার্ড পাওয়া যেতো না।’’
অথচ সচিত্র ভোটার তালিকার দায়িত্ব থাকে নির্বাচন কমিশনের। মমতা ব্যানার্জি তা নিয়েই ‘মহাকরণ দখলের’ ডাক দিয়েছিলেন। সে সময়ে স্বরাষ্ট্র সচিব মনীষ গুপ্ত আদালতে জানিয়েছিলেন যে হামলার জন্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল মমতার দলবল। সেই মনীষ গুপ্তকেই মন্ত্রী, সাংসদও করেন মমতা।
বিজেপিকে নিশানা করে সোমবার তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি চক্রান্ত করছে, নির্বাচন কমিশন চক্রান্ত করছে। সমাজমাধ্যম বাংলার মানুষের দুঃখের কথা বলে না। বিজেপি রাজ্য গুলোকে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ২ মে বলেছে যাকে মনে হবে তাকে ডিটেইন করা যাবে। এক হাজারের ওপর লোককে আটক করা হয়েছে।’’
তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, ‘‘বর্ডার কেন্দ্রীয় সরকারের। অনুপ্রবেশ ওরা করায়। বাংলা ভাষার ওপর সন্ত্রাস চলছে। বলছে বাংলায় ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে। গোটা বিশ্বে রোহিঙ্গা সংখ্যা ১০ লক্ষ। বিজেপি রাজবংশী একজনকে নোটিশ দিয়েছে। মতুয়াদের ওপর আক্রমণ চলছে। ওড়িশার ছাত্রীকে কলেজে পুড়িয়ে মারা হয়েছে বিজেপিকে এই উত্তর দিতে হবে।’’
উল্লেখ্য কোচবিহারের যেই নাগরিককে আসাম সরকারের পক্ষ থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে সেই নোটিশ এরাজ্যের পুলিশ পৌঁছে দিয়েছে তাঁর কাছে। যা নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেন উনি সব জানেন। আর ওনার পুলিশ গিয়ে নোটিশ দিয়ে আসছে জানেন না? বিজেপি’র এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন তিনি।
২০০৩ সালে সংসদ বিজেপির সরকার যেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন আনে সেখানে এনআরসি’র কথা উল্লেখ করা ছিল। সেই সরকারের মন্ত্রী ছিল মমতা। রাজ্যের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশের নাগরিকদের নাম ঢুকিয়েছে সিপিআই(এম) এই নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। অধ্যক্ষের দিকে কাগজ ছুঁড়ে ছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিপিআই(এম) এবং বিজেপি সেটিং করেছে তাই ওদের কোন দুর্নীতির শাস্তি হয় না। তৃণমূল দেখলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’’ উল্লেখ্য রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের পর থেকে একাধিক কমিশন করা হয়েছে সিপিআই(এম) নেতা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। ২১ জুলাই কমিশনও করা হয়েছিল সেখানে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটা কমিশনের রিপোর্টও প্রকাশ করতে পারেনি তৃণমূল সরকার। মিথ্যা মামলায় একাধিক নেতাদের ফাঁসানো হয়েছে কিন্তু আদালতে কিছু প্রমাণ করতে পারেনি তৃণমূল সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন তার আমলে রাজ্যে ৪০ শতাংশ বেকারত্বের হার কমেছে। কিন্তু এই সরকারের আমলে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা সব থেকে বেশি বেড়েছে। কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এদিন এই নিয়ে একটা কথাও বলেননি মমতা ব্যানার্জি।
আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। প্রতিবার নির্বাচনের সময় এবং ফল প্রকাশের পর বিরোধীদের ওপর বার বার নেমে এসেছে আক্রমণ। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মূখ্যমন্ত্রী গলায় শোনা গেলো প্রচ্ছন্ন হুমকি। তিনি বলেন, ‘‘২০২৬ এর পর কোথায় যাবেন সেটা ভেবে রেখেছেন তো? ’’
বিজেপির কায়দায় এবারও হিন্দুত্বের আবেগকে শান দিতে চাইলেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘জগন্নাথ ধাম হয়েছে, স্কাইওয়াক হয়েছে। ফুরফুরা শরিফে উন্নয়ন হয়েছে। সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়। জগন্নাথ ধামের অনুকরণে দুর্গাঙ্গন করা হবে। ’’ মমতা বলেন, ‘‘২ কোটি মানুষকে দারিদ্র সীমার ওপরে নিয়ে আসা হয়েছে।’’ উল্লেখ্য রাজ্যের একাধিক মানুষের নাম রেশনের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে এই সরকার।
Mamata Banarjee
রাজ্যের নারী নির্যাতন নিয়ে চুপ, মমতার মুখে শুধুই ‘বাঙালি অস্মিতা’

×
Comments :0