JOURNEY — AVIK CHATARJEE — UNKNOE DELLHI — MUKTADHARA — 19 JULY 2025, 3rd YEAR

ভ্রমণ — অভীক চ্যাটার্জী — অজানা দিল্লী — মুক্তধারা — ১৯ জুলাই ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

JOURNEY  AVIK CHATARJEE  UNKNOE DELLHI  MUKTADHARA  19 JULY 2025 3rd YEAR

ভ্রমণ মুক্তধারা, বর্ষ ৩

 

অজানা দিল্লী


অভীক চ্যাটার্জী

 

 

দ্বিতীয় পর্ব

যে শহরের কেল্লার রং লাল
মিনার শোনায় রক্তিম ইতিহাস
সময় সেখানে থমকে দাঁড়ায় রোজ -
সেই শহরেই তোমার আমার বাস

পরদিন খুব সকালেই বেরিয়ে পড়লাম আমরা। এবারের গন্তব্য দুর্গ। তুঘলাকাবাদ দুর্গ।না, এ দুর্গ কোনো বীরগাথা বলে না। শোনায় না কোনো যুদ্ধের করুন পরিণতির উপাখ্যান। বরঞ্চ এ দুর্গ বলে এক অভিশাপের ইতিহাস। বলে দুর্বলের উপর সবলের চিরকালীন অত্যাচারের কাহিনী। আর বলে সেই বহু প্রচলিত প্রবাদ, "দিল্লী অভি দূর হ্যায়!"(হানুজ দিহলি দূর অস্ত)।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ১৩২১ সাল নাগাদ একটি দুর্গ নির্মাণ শুরু করেন, এবং যার জন্য দিল্লির সব শ্রমিককে তিনি তার সেই স্বপ্ন নির্মাণের কাজে লাগান। এই সময় সম্রাটের সঙ্গে বিবাদ শুরু হয় সুফি সন্ত নিজামুদ্দিন আউলিয়ার। কারণ তিনিও তখন তার দরগা নির্মাণ করেছিলেন। সে কাজে বিঘ্ন ঘটায় সন্ত সাহেব যারপরনাই ক্রুদ্ধ হন এবং সম্রাটকে অভিশাপ দিয়ে বসেন যে দুর্গ নির্মাণে এত মানুষ লাগাচ্ছেন, সে দুর্গে কিছু কালের মধ্যেই গরু চরবে। অচিরেই এই ঘটনা বাস্তবায়িত হয় ১৩২৫ সালে। যখন গিয়াসউদ্দীন বাংলা অভিযানের পর ফিরছিলেন, এবং কথায় কথায় বলেছিলেন , "দিল্লী ফিরে ব্যাটা নিজামুদ্দিনকে শিক্ষা দিতে হবে" কিন্তু সে দিল্লী তার আর ফেরা হয় না। কারণ সেই অমোঘ বাণী, "দিল্লী অভি দূর হ্যায়!"

তারপর ১৩২৭ সালে সেই অভিশপ্ত দুর্গ ছেড়ে সবাই চলে যায়। আর দূর্গ পড়ে থাকে একা, আর তার পাশে রয়ে যান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক। আজও তিনি শুয়ে আছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তার প্রাণের প্রিয় দুর্গটির পাশে। লোকজন বলে এখনো নাকি সেখানে অদ্ভুত সব আওয়াজ শোনা যায় দুর্গটির আসে পাশের থেকে।

এত গেলো লোককথা, তবে এই দুর্গটি দেখতে দেখতে যা আমার মনে হয়েছে, তো হলো ২.৫ বর্গ কিলোমিটার পরিসরের এই দুর্গটির অবস্থান নির্বাচন সঠিক হয়নি প্রথমেই। চরম ভাবাপন্ন এই অঞ্চলের মূল সমস্যা হলো জল। যদিও অনেক কূপ খনন করা হয়েছিল এই দুর্গের ভেতরে, তবুও জলকষ্ট দূর করা যায়নি সেসময় কোনোভাবেই। ফলতঃ মানুষজন পালিতপশুর জীবন ধারণ সম্ভবপর হয়নি। আর গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের বাংলা অভিযানের সময় থেকেই মোহাম্মদ বিন তুঘলকের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা শুরু হয়ে গেছিল, আর পুত্রের হাতে পিতার মৃত্যু তো এ ভারতভূমিতে প্রথম নয়।

তবুও এ দুর্গে পৌঁছলে যেন আমার এই যুক্তিবাদী মন কেমন ঝিমিয়ে পড়ে, মনে হয় হয়তো কিছু আছে, হয়তো সে অভিশাপ সত্যি। হয়তো সেই সুফি সন্তই ঠিক। তার বলা কথাও ঠিক। আর আমাদের প্রিয় শেক্সপিয়ার সাহেব তো বলেই গেছেন, " There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy"

চলবে

Comments :0

Login to leave a comment