STORY / GOUTAM ROY / EMADULEER JAMI / MUKTADHARA / 20 JULY 2025 / 3rd YEAR

গল্প / গৌতম রায় / এমদাদুলের জমি / মুক্তধারা / ২০ জুলাই ২০২৫, বর্ষ

সাহিত্যের পাতা

STORY  GOUTAM ROY  EMADULEER JAMI  MUKTADHARA  20 JULY 2025  3rd YEAR

গল্প / মুক্তধারা , বর্ষ ৩

এমদাদুলের জমি

গৌতম রায়

অসময়ের বৃষ্টি।তবে বিরক্তিকর নয়। রাতের গরমটা কমিয়ে আরামের ঘুম উপহার দেওয়া বৃষ্টি।এমদাদুল ভাবে , অসময়ের বৃষ্টি , সময়ে থেমে গেলেই বাঁচা যায়।নাহলে ধান নিড়োনো মাঠে রবিশষ্যের চাষ একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। 
ছুটিপুর গাঁয়ে ধান ওঠার পর এ বছর খুব সোয়াবিন চাষের হিড়িক।অনেকে আবার বিটের চাষ ও করেছে।তবে শীতের বিটের ফলন আর শেষ ফাগুনের বিট-- ফলনের ঢের ফারাক হবে বলেই এমদাদুলের ধরণা।  তার তো আর ঢের জমি জিরেত নেই।যেটুকু আছে , তাতে ঘরের খাওয়ার মতো দু চার মুঠ ফসল- আনাজ উঠলেই সে খুশি।যার যতো বড়ো জোত - জমি, অসময়ের বৃষ্টি নিয়ে তার ততো চিন্তা-- ভাবে এমদাদুল।
আব্বু , আর শুইয়ে গড়িয়ো না।উঠি পড়ো।আম্মু খাবার দে দেছে- 
মেয়ের মিহি গলায় তন্দ্রা ছুটে যায় এমদাদুলের।
বৃষ্টির ঠান্ডা হাওয়ায় শুয়ে থাকতে থাকতে এশার নামাজের ওয়াক্ত চলে গেছে।এমদাদুল ভাবে একবার তারাবীর নামাজ টা আদায় করেই খেতে যাই।
মেয়ে এবার দাওয়া পেরিয়ে ঘরে এসে ডাকতে যায় তার আব্বাকে।
এমদাদুল বলে মেয়ে কে; মা আমার,  তারবীর নামাজটা আদায় করেই যাচ্ছি।
একটু অবাক হয় কুলসুম, এমদাদুলের ক্লাস নাইনে পড়া মেয়ে।তার আব্বার এতকাল তো নামাজ কাজা হওয়া ঘিরে খুব একটা মাথা ব্যথা ছিল না।হঠাৎ, আজ তারাবীর নামাজ আদায় করছে কেন? 
আরে কুলসুমের আম্মা, এই বৃষ্টির পানির তোড়ে সাঁঝবেলা থেকেই মনটা কেমন পিয়াজু , পিয়াজু করছিল।তোমার মালুম হইছে বুঝি আমার দিলের সমাচার? 
কি গো  কুলসুমের আব্বা!কান্ডজ্ঞান খোয়াইছন নাকি।ধারি মাইয়া খাড়াইয়া আছে।আর রসের নাগর যেন উথলাইয়া উঠলো।
          বৌয়ের কথায় একটু লজ্জা পায় এমদাদুল।থতমত ও খেয়ে যায়। চেয়ে দেখে কুলসুম কখন চলে গেছে পাকের ঘর থেকে।
পুঁই ট্যাংড়ার ছালুন রেঁধেছে বৌ।খানকতক মিট কুমড়োও আছে।এমদাদুলের ভারি প্রিয় ব্যান্নন।একটু লোকমা মুখে পুড়েই তৃপ্তিতে চোখ বুজে ফেলে এমদাদল। কোনও রকমে লোকমাটা গলা দিয়ে গলিয়ে ই বলে; কুলসুমের আম্মা , তোর হাতের ছালুন , যেন একেবারে মোর আম্মার হাত বসানো।
লজ্জায় মাথা হেঁট করে বৌ।মৃদু গলায় বলে; ছ্যেমড়িটা ডাগর হচ্ছে,সে খেয়াল আছে? ওর সামনেই যে আজকাল বড়ো তুই তুকারি কর্ রা বসো।উমর যত বাড়ছে দিমাগ ও তোতো ই কমছে।
এবার লজ্জা পাওয়ার কথা ইমদাদুলের ।কিন্তু সে লজ্জা পায় না। এক লোকমা ভাত তুলে প্রায় গুঁজে দেয় বৌয়ের মুখে।না আর হ্যাঁয়ের একটা লজ্জা জড়ানো টানাপোড়েনে বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়েই স্বাদ নেয় ছালুনের।
ত্যাল টা বড় কম আছিলো গ্য কুলসুমের আব্বা।আড্ডু ত্যেল দিতি পাড়লে ছালুনটা খুলতো আরো- বলে সে।
হাসতে থাকে এমদাদুল।বলে, আইজকাল টাউনের ডাক্তারে বলে, ত্যাল কম খাও।লিভার ভালো থাকবে।প্যাটের ব্যামো হবে নি কো।ধরিই নে না, ত্যামনতরো ডাইট করছি মোরা।
' ডাইট' কি গো - জানতে চায় তার বিবি।
এমদাদুল বলে, দায়ে পরে আমরা গরীবগুব্বো যে ভূখা প্যাটে থাকি, বড়নোকে , রোগা হতে তারেই বলে ডাইট।
কুলসুমের বাপের কথা শুনে হাসিতে গড়িয়ে পড়ে এমদাদুলের বিবি।
এমদাদুলের সামান্য জমিটার উপরে হামিদ মোক্তারের যে নজর আছে - কথাটা যেদিন রাতে ঘনিষ্ঠতার মধ্যেও কুলসুমের মা কে বলেছিল এমদাদুল।বৃষ্টির শব্দ , শরীর সুখ - সব মিলিয়ে এমদাদুলের বৌয়ের চোখে যেন তখন রাজ্যের ঘুম নেমেছে।কি বলছে কুলসুমের বাপ খুব একটা কান দেয় না সে।বৃষ্টির ঠান্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে ওমের  আশায় আরো বেশি মুখ গুঁজে দেয় কুলসুমের বাপের রোমশ বুকে।
আজ প্রায় তের বছর হয়ে গেল , সরকার থেকে পাওয়া এই এট্টুকখানি জমির উপর কত জনের কত শ্যায়ালের নজর ই না পড়েই চলেছে।হামিদ মোক্তার আর কুলসুমের বাপ এক সঙ্গে পাট্টি করত।দুজনে বেশ পীড়িত ও ছিল।কুলসুমের জন্মের পর এই হামিদের বিবিই একটা রূপোর মল দিয়ে মেয়ের মুখ দেখে গেছিল।
সময় বদলেছে।হামিদ মোক্তার শিবির বদলেছে।এমদাদুল নিজের বোধকে , বিশ্বাসকে বাজারের আলু পটল করতে পারে নি।তাই এখন নতুন শিবিরের মাতব্বর হামিদ নানাভাবে তড়পায় এমদাদুল কে।সেই তড়পানির হাত থেকে অবশ্য নিস্তার পায় না এমদাদুলের বন্ধু বান্ধবেরাও, যারা আজ থেকে বিশ - পঁচিশ বছর আগে, সেকালের সরকারের হাত থেকে পাট্টা পেয়েছিল জমির।
                 হামিদ মোক্তার এখন বলে বেড়াচ্ছে, সেকালের সেসব পাট্টাদারি নাকি একালে চলবে না।একালে সেসব জমি আবার নতুন করে বিলি ব্যবস্থা হবে।আর সেই নয়া বিলি ব্যবস্থা করবে হামিদরাই।
সারারাত ছটফট করে এমদাদুল।বৃষ্টির ঠান্ডা হাওয়াতে ও ঘুম আসে না।কেবল মনে পড়ে যায় হামিদের লোকগুলোর শাশানি।নতুন দলে গিয়ে এখন বেছে পুরনো দলের একটু বলিয়ে কইয়ে মানুষদের জমির দিকে দৃষ্টি পড়েছে হামিদদের।
এই অশান্তিতেই ছটফট করে এমদালুল। ফজরের আজান পড়ে যায়। বৃষ্টিও পড়তেই থাকে--

Comments :0

Login to leave a comment