‘‘মুখ্যমন্ত্রী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা বলছেন তারই সরকারের আমলে দুর্নীতির জন্য ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন সেই নিয়ে কেন চুপ তিনি?’’ মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে মিথ্যার জাল বুনেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তৃণমূল এবং বিজেপি মিথ্যাচার করেছে বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে। আজ বলছে সিপিআই(এম) সামাজিক মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। সামাজিক মাধ্যমে কেউ খরচ করলে তা প্রকাশ করতে হয়। গোটা দেশ জানে বিজেপির পরে তৃণমূল সামাজিকমাধ্যমের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি টাকা খরচ করে। সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকরা সামাজিকমাধ্যমে এই প্রচার সংগঠিত করে দলের হয়।’’
তৃণমূলের সমাবেশকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘সমাবেশের নামে কলকাতা জুড়ে বার্ষিক বনভোজন হয়েছে কলকাতা পুলিশের বদান্যতায় আর তৃণমূলের আহ্বানে। গোটা কলকাতা জুড়ে যা যা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় আজ তার একটাও মানা হয়নি। সারা বছর জুড়ে খুন করবে লুঠ করবে অপরাধ করবে তাদের আজ ফুর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।’’
সেলিম বলেন, ‘‘আজ মমতা বলছে বামফ্রন্ট সরকারের সময় ভোট দিতে পারতেন না কেউ। তাহলে সুব্রত মুখার্জি কি করে মেয়র হলেন,উনি কি করে সংসদ হলেন? এখন বোমা বন্দুক পুলিশ ব্যাবহার করে ভোট লুঠ করা হয়। সব নির্বাচনে এই চিত্র দেখা যায়। কলেজ, কো-অপারেটিভ নির্বাচনে ভোট লুঠ হয়। বামপন্থীরা এসে রাজ্যে পৌরসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচন করেছে। সার্বিক ভোটাধিকার প্রসার করেছে রাজ্যে। উনি সেটা সংকোচিত করছেন। মঞ্চ থেকে বলছে পুলিশের পরিবারকে অপমান করা হচ্ছে, অনুব্রত কে কেন কিছু বললেন না? তৃণমূলের অপকর্মকে ধামা চাপা দিয়ে বামপন্থীদের কথা বলছেন।’’
এদিন রাজ্যের নারী নির্যাতন নিয়ে নীরব থেকেছেন তৃণমূল নেত্রী সেই প্রসঙ্গ তুলে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘বেছে বেছে উনি কথা বলেন। রাজনৈতিক স্বার্থ দেখে কথা বলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে হলে সব অন্যায় নিয়ে বলবেন। যে অন্যায়কে মদত দেয় সেও দোষী। মমতা ও তার ভাইপো মনোজিৎদের মতো ছেলেদের কলেজ বসিয়ে রেখেছেন। সেখানে কি ভাবে সরব হবেন? পুলিশকে দিয়ে আরজি করের প্রমাণ লোপাট করেছে কি ভাবে সরব হবেন? ওড়িশা নিয়ে গোটা দেশে প্রতিবাদ হয়েছে। সেই মেয়েটি আগেও অভিযোগ করেছে ব্যবস্থা নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ কলকাতা ল’কলেজের মেয়েটিও অভিযোগ করেছিল কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কামদুনি, পার্ক স্ট্রীট, আরজি কর নিয়ে কেন কিছু করেনি। ২০১১ সালের পর থেকে তালিকা দিয়ে দেবো কোথায় কোথায় ধর্ষণ হয়েছে কারা কারা অভিযুক্ত আর সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’’
সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলোতে বাংলা ভাষী মানুষদের ওপর অত্যাচার চলছে। এদেশের নাগরিককে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২০০৬ এর আগে মমতা বলেছিল ভোটার লিস্টে বাংলাদেশী আছে। আজ বাংলাকে শেষ করে বলছে ভাষা আন্দোলন হবে। বামফ্রন্টের সময় হওয়া প্রতিষ্ঠাকে শেষ করেছেন। প্রথম কথা যে কোন ভাষাকে বাঁচাতে হলে তাকে শিক্ষা ও কর্মের মাধ্যম করতে হয়। এই রাজ্যের অর্থনীতিকে শেষ করেছেন, কাজ নেই। প্রতিটা ভাষার মর্যাদা তার শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে যুক্ত তার সব শেষ করেছে। ভাষা আন্দোলের কথা বলছে ওনার লোকদের ভাষা ঠিক করতে বলুন, ওনার কবিতা লেখা বন্ধ করুন আর স্কুল গুলো ঠিক করুন।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা দেখবো সংসদে তৃণমূল কি করে আক্রান্ত বাংলাভাষীদের পাশে থাকার জন্য। জেলা থেকে যারা বাইরে যাচ্ছে তাদের জন্য কি করছে আলাদা দপ্তর খুলতে হবে। দেখবো যেই রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে মমতা ব্যানার্জি চিঠি লিখেছেন কিনা।’’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দূর্গাঙ্গন তৈরি করবেন। সেই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘যখন রাজনীতিতে কোন সমস্যা হবে তখন ধর্মকে ব্যাবহার করবেন এটা বিজেপির থেকে শিখেছেন। আরএসএস মমতাকে দুর্গা করে আজ এই দশা করেছে রাজ্যের। এখন যখন ভোট আছে তখন দুর্গা কালী করছে।’’
Comments :0