দীর্ঘ ২০ বছর পর একসাথে রাজনৈতিক মঞ্চ ভাগ করলেন উদ্ধব থ্যাকারে এবং রাজ থ্যাকারে। তিন ভাষা নীতিকে কেন্দ্র করে এক মঞ্চে এলেন দুই তুতো ভাই। ‘আওয়াজ মারাঠিচা’ নামে একটি যৌথ কর্মসূচি করে উদ্ধবের শিব সেনা, রাজ থ্যাকারের মহারাষ্ট্র নবনির্মান সেনা। কেন্দ্রের নয়া শিক্ষা নীতি অনুযায়ী মহারাষ্ট্রের স্কুল গুলোয় হিন্দি ভাষাকে তৃতীয় ভাষা হিসাবে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে রাজ্যের এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজ এবং উদ্ধবের দল।
রাজ থ্যাকারে বলেন, ‘‘বালা সাহেব থ্যাকারের পারেননি আমাদের দুজনকে এক করতে কিন্তু দেবেন্দ্র ফড়নবিশ পেরেছেন। হতে পারে বিধানসভায় তাদের সংখ্যা বেশি কিন্তু মনে রাখতে হবে রাস্তায় আমাদের সংখ্যা বেশি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কোথা থেকে এসেছে এই তিন ভাষা নীতি? কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে এসেছে। কোন জায়গায় এখন হিন্দি ভাষা চলে না, আইন আদালতে ইংরেজিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে কেন এই ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে? মহারাষ্ট্রের মানুষ এই চাপিয়ে দেওয়াকে মেনে নেবে না।’’
উদ্ধব বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যেকার সব দুরত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরা একে অপরের কাছে এসেছি। একসাথে চলবো।’’ তিনি জানিয়েছেন তিন ভাষা নীতি রাজ্য বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
গত এপ্রিম মাসেই এই দুই নেতার একসাথে আসার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। ঘাটকোপার, মুম্বাইয়ের একটি অঞ্চল যেখানে গুজরাটের মানুষের বসবাস বেশি। ঘাটকোপারের প্রসঙ্গ তুলে সরকারকে নিশানা করে উদ্ধব মন্তব্য করেন, ‘হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, আমি সরকারকে বলবো ঘাটকোপারের স্কুলগুলোয় মারাঠা ভাষা বাধ্যতামূলক করা হোক।’
সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাজ থ্যাকারে এক্স হ্যান্ডেলে লিখে ছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে হিন্দি ভাষার আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। হিন্দি আমাদের জাতীয় ভাষা নয়।’ রাজ স্পষ্ট জানান তাঁর দল হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে। আর এই হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে ‘দুই ভাইয়ের’ এক হওয়ার জল্পনা তৈরি হয় মারাঠা রাজনীতিতে।
২০০৫ সালে শিবসেনা ছেড়ে নিজের আলাদা দল তৈরি করেন রাজ। সম্প্রতি ভেঙে গিয়েছে শিবসেনা। দু’টি দল তৈরি হয়েছে। একটি উদ্ধবের অন্যটি শিন্ডের। আলাদা দল করে রাজনীতিতে নামলেও সেই ভাগ দাগ কাটতে পারেননি রাজ থ্যাকারে। সম্প্রতি একটি পডকাস্টে রাজ বলেছেন তার এবং তার তুতো ভাই উদ্ধবের যে বিরোধ তা মহারাষ্ট্রের যে সংস্কৃতি তার পক্ষে ক্ষতিকর হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘উদ্ধবের সঙ্গে আমার বিরোধ সামান্য। কিন্তু আমাদের এই বিরোধের থেকেও আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মারাঠা সংস্কৃতি এবং মহারাষ্ট্রের নিজস্ব অস্তিত্ব।’’ তিনি আরও বলেন যে তাঁদের একসঙ্গে আসা কোন সমস্যার নয়, উভয়ের ইচ্ছা থাকলে তা সম্ভব। তাঁর দাবি, রাজ্যের মানুষ এক হয়ে একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করা প্রয়োজন।
রাজ থ্যাকারের কথায়, মহারাষ্ট্রের মানুষ যদি চায় তাহলে সে তার বিরোধকে দুরে রেখে উদ্ধবের সঙ্গে কাজ করতে তৈরি। তাঁর কথায় রাজ্যের মানুষকে এই বিষয় মতামত দিতে হবে।
সম্প্রতি একটি সভা থেকে শিবসেনা নেতা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থ্যাকারে বলেন, ‘‘আমি সব ধরনের বিরোধকে সরিয়ে মহারাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করতে রাজি।’’ তাঁর কথায়, রাজ্যের স্বার্থে সব মারাঠাদের এক হওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন কারখানা গুজরাটে চলে গিয়েছে। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। উদ্ধবের কথায়, যারা মহারাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের সাথে কোন সমঝোতা সম্ভব নয়।
তবে বৃহন মুম্বাই পৌরসভা নির্বাচনের আগে দুই ভাইয়ের এক হওয়া মারাঠা রাজনীতিতে নতুন সমীরকণ তৈরি করেছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
Maharashtra
‘ভাষার’ জন্য ২০ বছর বাদে মঞ্চ ভাগ করলেন দুই ভাই

×
Comments :0