মণ্ডা মিঠাই
বাবার কষ্ট লাঘব করতে — ছেলের আবিষ্কার
------------------------------
তপন কুমার বৈরাগ্য
------------------------------
মা তিন বছর বয়েসে মারা গেছেন।ছেলেকে মানুষ করতে গিয়ে নিজে আর বিয়ে পর্যন্ত করলেন না।সৎ মা এলে ছেলেকে আর দেখবেন না। সেই চিন্তায় আর দ্বিতীয়বার বিয়ে করলেন না। বাবার নাম এতিয়েঁ।ছেলেকে মানুষ করার জন্য
সমস্ত স্নেহ মায়া উজাড় করে দিয়েছিলেন। ছেলেকে নিজেই ষোলো বছর বয়েস পর্যন্ত শিক্ষা দিয়েছিলেন।নয়নের নিধিকে একবারও তিনি চোখের আড়াল করতেন না। ফ্রান্সের কেরুয়েনে তিনিরাজস্ব বিভাগে ট্যাক্স কালেক্টরের চাকরী
করতেন।ছেলেকে খাইয়ে অফিসে যেতেন। ফিরে আসতেন অনেক রাতে।সব রান্না এই ষোলো বছরের ছেলেটায় রাতে করতো। বাবা বাড়ি এসে অনেক রাত অবধি অঙ্কের হিসেব করতেন।বাবা কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারতেন না।
ছেলেরও ঘুম আসতো না।চিন্তা করতো কিভাবে বাবার কষ্ট লাঘব করবে। তিন বছর চিন্তা করে এই ছেলেটা ঊনিশ বছর বয়েসে আবিষ্কার করলো ক্যালকুলেটর বা গণকযন্ত্র। সালটা ছিলো১৬৪২। এটাই প্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর।বাবাকে
বুঝিয়ে দিলেন এই যন্ত্রের কার্যকারিতা। বাবার পরিশ্রম শতগুন কমে গেল।এতোদিন বাবার শরীর ভেঙে যাচ্ছিল। এখন বাবা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।ছেলেকে পরম স্নেহে বুকে টেনে নিলেন।
ছেলের আবিষ্কারের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। পাঁচ ঘন্টার খাটুনি এই যন্ত্রের মাধ্যমে দু-তিন মিনিটে হয়ে যাচ্ছে। সবাই ধন্যধন্য করে উঠলেন।বাবার পরিশ্রম লাঘব করতে গিয়ে এতোবড় একটা আবিষ্কার, ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকলো।
এই ছেলেটার নাম ব্লেইজ পাস্কাল। ১৬২৩খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আজ আমরা সর্বত্রই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করি। অলটিমিটারের সাহায্যে উড়োজাহাজ এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাচ্ছে।এই
অলটিমিটারও আবিষ্কার করেছিলেন ব্লেইজ পাস্কাল।হাইড্রোলিক যন্ত্র,যা শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ,তারও আবিষ্কারক ব্লেইজ পাস্কাল।পরিসংখ্যানের তত্ত্বও তিনি দেন।ব্লেইজ পাস্কাল মাত্র ঊনচল্লিশ বছর বেঁচে ছিলেন।
১৬৬২খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যান। এমন পিতৃভক্ত বিজ্ঞানী পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই আছে। আর এই ভক্তিই তার জীবনে এনে দিয়েছে চরম খ্যাতি।
Comments :0