Md Salim on SSC

মুখ্যমন্ত্রী ঘুষে নিয়োগের তথ্য দিলেই তো বাকিরা বেঁচে যান, বললেন সেলিম

রাজ্য

বর্ধমানে সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম ও সৈয়দ হোসেন।

উচিত অনুচিত নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার নৈতিক অধিকার নেই মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি কেন স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ওএমআর শিট নষ্ট করতে বললেন? কেন তৃণমূল নেতাদের টাকা তুলতে বললেন? কেন বের করছেন না কারা ঘুষ দিয়েছিল। এই তথ্য দিলেই তো বাকিরা বেঁচে যান।
মঙ্গলবার বর্ধমানে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিনই নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন প্রসঙ্গে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন আদালতের নির্দেশ মেনে ৩১ মে’র মধ্যে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে সরকার। সেই সঙ্গে চাকরি হারানো প্রতিবাদী শিক্ষকদের নতুন করে আবেদন জানাতে বলেন তিনি।  
এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার দিন থেকে মিথ্যা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষকদেরও অসত্য বলেছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ইন্ডোর স্টেডিয়ামে যা বলেছিলেন তার কী হলো।’’
সেলিম বলেন, ‘‘উনি কোনও রায় মানেন. কোনও আইন মেনেছেন আজ পর্যন্ত?’’
এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘ব্যাপম কেলেঙ্কারি মধ্য প্রদেশে হয়েছিল আরএসএস’র নেতৃত্বে। মমতা বিজেপি’র জোটসঙ্গী থেকে আরএসএসএস’র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে এরাজ্যে হয়েছে একইরকম নিয়োগ দুর্নীতি।’’
এদিন নবান্নে মমতা ফের আইনি লড়াইকেই দায়ী করেছিলেন। সেলিম বলেন, ‘‘কিছু চাকরিপ্রার্থী আদালতে গিয়েছিলেন বলেই তো দুর্নীতি ফাঁস হলো।’’
মুখ্যমন্ত্রী এদিন অন্য দপ্তরে নিয়োগের পরিকল্পনাও শুনিয়েছেন। সে প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘অন্য দপ্তরে নিয়োগের কথা বলছেন খুড়োর কল দেখাতে। আসল কথা হলো কেন দুর্নীতিগ্রস্তদের নামের তালিকা বের করছেন না। কেন দুর্নীতির তদন্ত করল না রাজ্য। রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনি তো আদালতে জানায়নি কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য। সে কারণেই প্যানেল বাতিল করেছে আদালত।’’ 


কালিগঞ্জে উপনির্বাচনে প্রার্থী ঠিক করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় সেলিমকে। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার কালিগঞ্জে প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হবে সিপিআই(এম) সম্পাদকমণ্ডলী বৈঠকে। তারপর বামফ্রন্টে আলোচনা হবে। কংগ্রেসকে আমাদের মতামত জানাবো। ২০১৬-তে কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হয়ে তৃণমূলে চলে গিয়েছিলেন। গত পঞ্চায়েত ও লোকসভার ফলাফলের নিরিখে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসের সমর্থনে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই(এম) প্রার্থীর লড়াই দেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।’’  
রাজ্যে একাধিক সমবায়ে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একযোগে লড়াই করে তৃণমূল ও বিজেপি-কে হারিয়েছে। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী একসঙ্গে লড়াইয়ের পক্ষে মত জানিয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় সেলিমকে। তিনি বলেন, ‘‘লড়াই জোরদার হয়েছিল বলে অধীর চৌধুরী এবং মহম্মদ সেলিমকে হারানোর জন্য বিজেপি-তৃণমূল একসঙ্গে নেমেছিল। অধীর চৌধুরীর মতামতকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে প্রদেশ কংগ্রেস এবং এআইসিসি-কে ঠিক করতে হবে তারা কোন পথে এগবে।
জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়। সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে বলছি। কাউন্সেলিংয়ের তালিকা বদলে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দূর দূরান্তে পাঠানো হচ্ছে। যেভাবে শিক্ষার নিয়োগে ক্রমতালিকায় কারচুপি হয়েছিল সেভাবেই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও কাজ চালাচ্ছে সরকার।’’ 
সিভিক ভলান্টিয়ারের দৌরাত্ম সম্পর্কে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘জামা খুলে গুন্ডা হয়ে যাচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ার, পুলিশ। এক শিশুকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ঘুষের জন্য বাস চালককে মারধর করা হচ্ছে। মহিলাদের সম্মানহানি করছে। এসবের সঙ্গে সিভিকের পাশাপাশি পুলিশও  জড়িত। পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। পুলিশ অপরাধীদের না ধরে যারা খবর দেয় তাদের শাস্তি দিতে নামে।’’ 
সিপিআই(এম) পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির ডাকে এরিয়া কমিটি সহ এলাকার নেতৃত্বদের নিয়ে আলোচনা সভা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেনও। সেলিম জানান, ‘‘সংগঠনে যাতে একমুখীনতা আসে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নয়া ফ্যাসিবাদী আক্রমণ, স্বৈরতন্ত্রের আক্রমণ, গণতন্ত্রের হত্যা, নয়া উদারবাদের দাপটে জীবিকার ওপর আক্রমণ, পরিযায়ীদের ওপর নির্যাতন, দলিত-আদিবাসী-মহিলা-সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কৃষক এবং কৃষির ওপর আক্রমণ চলছে, ফসলের দাম পাচ্ছেন না কৃষক।  শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না। তা নিয়ে আন্দোলনের পর্যালোচনা হয়েছে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘হাইওয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণের নামে বিনা ক্ষতিপূরণে জমি কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদ হচ্ছে। আমরা সেখানে সমর্থন জানাচ্ছি। এই লড়াইয়ে আমরা আছি।’’ 
 

Comments :0

Login to leave a comment