Editorial

গোরক্ষার নামে নরহত্যা?

সম্পাদকীয় বিভাগ

মোদী জমানায় ভারত বিশেষ করে হিন্দি বলয়ে ‍‌বিজে‍‌পি শাসিত রাজ্যগুলি মধ্যযুগীয় বর্বরতার মানসিক ঘেরাটোপে আজও বন্দি হয়ে আছে। এমনকি দিন দিন যেন ধর্মান্ধতার উন্মাদনা কুৎসিত নৃশংসতার রূপ নিচ্ছে। হিন্দুত্ববাদের যুক্তি বুদ্ধিহীন মৌলবাদী চেতনা গোভক্তির যে নমুনা সমাজে বার বার দেখানোর চেষ্টা করছে তাকে চরম অমানবিক নৃশংসতা বললেও কম বলা হয়। গোভক্তির বাহুবলী প্রকাশ এখন আর তর্কবিতর্ক বা আইনি গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, সরাসরি হামলা থেকে নরহত্যার দি‍‌কে চালিত হচ্ছে। বজরঙ দল সহ নানান হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বি‍জেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে রাষ্ট্র সরকার ও আইনের ঊর্ধ্বে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। নিজেদের স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনী হিসেবে জাহির করে ঠেঙাড়ে বাহিনীর ভূমিকা পালন করছে। শাসকের বরাভয় মাথায় আছে বলে তারা বেপরোয়া। তারা মনে করে যখন তখন যা খুশি তাই করার অধিকার আছে। যোগী রাজত্বে উত্তর প্রদেশে এই ঠেঙারে বাহিনী কার্যত খুনে বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

গোরক্ষার অন্ধ তাড়নায় এরা বিবেকবর্জিত হলেও আসল জায়গায় স‍‌চেতন। তথ্য প্রমাণ বা ঠিক বেঠিকের ধার ধারে না। কেবলমাত্র সন্দেহের উপর ভিত্তি করে মুসলিমদেরই এরা টার্গেট করে। কারও কথা শোনে না, যুক্তিতর্কের ধার ধারে না। তারা যদি মনে করে কোনও মুসলিমের ব্যাগে, গাড়িতে বা ফ্রিজে গোমাংস আছে তাহলে সেটাকে ধ্রুব সত্য মনে করে পেটাতে শুরু করে। এই পেটানো থামে তখন  যখন তাদের মনে হয় আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে বা অনিবার্য মৃত্যুর পথে। তার আগে যদি পুলিশ এসে হস্তক্ষেপ করে তবে হয়তো মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা মিলতে পা‍‌রে। তবে ততক্ষণে অত্যাচার যে মাত্রায় পৌঁছে যায় সেটা অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর থেকেও ভয়ঙ্কর। সর্বোপরি বেঁচে গেলে মানসিক বিপন্নতা, আতঙ্ক তাদের গ্রাস করে। উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা ইত্যাদি রাজ্যগুলিতে গোরক্ষার ঠেঙাড়ে বাহিনীর দাপট বেশি। একদিকে থা‍‌কে সঙ্ঘ পরিবারের মদত অন্যদিকে শাসক বিজেপি’র ছত্রছায়া। তাই পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয় এবং দর্শক। ঘটনা ঘটলে সাধারণভাবে পুলিশের খোঁজ পাওয়া যায় না। এলেও এমন সময় আসে তখন আক্রান্ত মুস‍‌লিমরা মৃত্যুর পথে। তাছাড়া এমন ঘটনাগুলিতে দেখা যায় ন্যূনতম খোঁজ খবর না নিয়েই পু‍‌লিশ গেরুয়াবাহিনীর সন্দেহকে সত্য বিবেচনা করে আক্রান্তদের বিরুদ্ধেই এফআইআর করে এবং গ্রেপ্তার করে। আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে নীরব থাকে। পুলিশের বক্তব্য মারধর করা হলেও পুলিশ নাকি আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করতে পারে না, ধরতে পারে না। অর্থাৎ গোটাটাই ছকে বাঁধা রাজনৈতিক চাল। ধর্মীয় জিগির তুলে, মুসলিম বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে বিভাজনকে পোক্ত করা। ‍বিজেপি’র ‍ভোট  রাজনীতির অন্যতম উপাদান ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে তীক্ষ্ণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ভোট কুড়ানো। গোরক্ষার নামে তাই বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে উসকানি দিয়ে গোরক্ষার নামে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়।

মোদীর জমানায় প্রথম গোরক্ষার মুসলিম হত্যার ঘটনা ঘটেছে। উত্তর প্রদেশের নয়ডায়। তারপর থেকে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বার বার এই ঘটনা ঘটে চ‍‌লেছে। আরএসএস বা বিজেপি’র পক্ষ থেকে কখনও এর বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও করা হয় না। এমন নৃশংস-বর্বরতা নিয়ে মোদী কো‍‌নোদিন একটি কথাও বলেননি। নীরবতার মাধ্যমে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে গোমাংস সন্দেহে চার মুসলিম যুবককে বেধড়ক মারধর করে গোরক্ষক ঠেঙাড়ে বাহিনী। পরে সরকারি গবেষণাগার জানায় কোনও গোমাংস ছিল না। অথচ বিনাদোষে চারজনকে মৃত্যুর দুয়ারে পাঠিয়ে দেয়। এটাই ফ্যাসিস্ত হিন্দুত্বের নমুনা।

Comments :0

Login to leave a comment