Coal Scam

নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি’র জেরা ভাইপোর ব্যক্তিগত সচিবকে

কলকাতা

লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সিইও অভিষেক ব্যানার্জির ব্যক্তিগত সচিব সুমিত রায়কে রক্ষাকবচ দিল না কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত যখন তাঁর রক্ষাকবচের আরজি খারিজ করছে সেই সময়তেই সিজিও কমপ্লেক্সে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি’র আধিকারিকদের জেরার মুখে প্রভাবশালী এই ব্যক্তি। 
সুমিত রায় অভিষেক ব্যানার্জির হয়েই যাবতীয় কাজ করেন। ইতিমধ্যে অভিষেক ব্যানার্জি ইডি’র দপ্তরে নথিপত্র পাঠিয়েছেন হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চের নির্দেশে। তারপরেই এই তলব। সুমিত রায়ের সম্পত্তির খতিয়ানও জানতে চেয়েছে ইডি। ইতিমধ্যে সেই নথিও ইডির কাছে জমা দিয়েছে সুমিত রায়। এদিন লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কারবার, পরামর্শ দেওয়ার নামে কীভাবে টাকা ঢুকেছে এবং প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে সুমিত রায়ের একাধিক সুপারিশও কীভাবে পৌঁছেছিল পর্ষদের অফিসে, তা নিয়েও দফায় দফায় জেরার মুখে পড়তে হয় অভিষেক ব্যানার্জির এই ব্যক্তিগত সচিবকে।বয়ানে ও তথ্যের মধ্যে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে জানা গেছে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে। ফের তাঁকে তলব করা হতে পারে বলেও জানা গেছে। 
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের আসার পরেই সন্দেহভাজন সংস্থার প্রাক্তন ও বর্তমান ডিরেক্টর এবং কোম্পানি সিইও সহ সংস্থার কর্মী ও সংস্থার  সম্পত্তির হিসাব আদালতে জমা দেবার নির্দেশ হয়েছিল। এই সূত্র ধরেই সুমিত রায়কে জেরার জন্য তলবের নোটিস ধরায় ইডি। ইডি’র তলবের চ্যালেঞ্জ করে  হাইকোর্টে রক্ষাকবচের আরজি জানিয়ে মামলা করেছিলেন সুমিত রায়। তাঁর আবেদন ছিল এই কোম্পানির সিইও অভিষেক ব্যানার্জি আদালত থেকে রক্ষাকবচ পেয়েছেন। ফলে তিনিও এই রক্ষা কবচের জন্য আদালতে আবেদন জানাচ্ছেন। সোমবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ সুমিত রায়ের আবেদন খারিজ করে তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কুন্তল ঘোষের চিঠির ভিত্তিতে অভিষেক ব্যানার্জি মামলায় এসেছেন। কিন্তু লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস এই দুর্নীতি মামলায় পৃথকভাবে যুক্ত হয়েছে। ফলে দু’টি মামলা এক নয়। বিচারপতি বলেন,‘অভিষেক ব্যানার্জির ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার মতো  তথ্য আদালতের কাছে ইডি হাজির করতে পারেনি।। প্রয়োজনীয় নথির অভাব ছিল। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সুমিত রায় নিজের পক্ষে কোনও তথ্য উপস্থিত করেননি পিটিশনে। এরপরেই বিচারপতি তাঁর রক্ষাকবচের আবেদন খারিজ করে দেন।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৪ ডিসেম্বর। এর মধ্যে সুমিত রায়ের বিরুদ্ধে ইডি কোনও কড়া পদক্ষেপ নিলে তিনি প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। একই সঙ্গে দু’পক্ষকেই এর মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশও তিনি দিয়েছেন।
ডিভিসন বেঞ্চের নির্দেশ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শেষ করতে হবে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই ইডি’কে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে চূড়ান্ত চার্জশিট দায়ের করতে হবে। এরপরেই ইডির তৎপরতা বাড়ে। একাধিক জায়গায় চলে ম্যারাথন তল্লাশি অভিযান। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী একটি সূত্রের দাবি কালীঘাটের কাকু সুজয় ভদ্রকে জেরার পরেই সুমিত রায়কে জেরা তদন্তরের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল টাকার লেনদেনের হদিশ পেতেই সুমিত রায়কে।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গত বুধবারই দীর্ঘ জেরার মুখে পড়েছিলেন অভিষেক জায়া রুজিরা নারুলা ব্যানার্জি। যদিও অভিষেকের বাবা অমিত ব্যানার্জি ও মা লতা ব্যানার্জি জেরা এড়িয়েছিলেন। পরিবর্তে দু’জনে প্রায় আড়াই হাজার পাতার নথি আইনজীবী মারফত ইডি দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন। দু’জনেই বর্তমানে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর। রুজিরা ব্যানার্জি প্রাক্তন ডিরেক্টর। অভিষেক ব্যানার্জি এখনও সিইও। ধৃত কালীঘাটের কাকু প্রাক্তন ডিরেক্টর। অর্থাৎ এই একটা কোম্পানি এখনও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের ভরকেন্দ্র হতে চলেছে। ২০১২ সালে তৃণমূল সরকারে আসার পরেই তৈরি হওয়া এই সংস্থায় ঘুরপথে ঢুকেছে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা। ঢুকেছে কয়লা পাচারের টাকাও।  লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সঙ্গেই যোগ রয়েছে সুমিত রায়েরও। এর আগে কয়লাকাণ্ডে সিবিআইয়-র জেরার মুখে পড়েছিল সুমিত রায়। যদিও তা ঠেকাতেএ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন তিনি। মিলেছিল অন্তবর্তীকালীন রক্ষাকবচও। যদিও সুমিত রায়ের মামলা থেকে সেসময় সরে দাঁড়িয়েছিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। সুমিত রায় যথেষ্ঠ প্রভাবশালী বলেই দাবি ইডি’র।
 

Comments :0

Login to leave a comment